নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: ময়না থানার আড়ংকিয়ারানায় চণ্ডীয়া নদীর ধারে  মৃত যুবতীর কাটা মাথা উদ্ধার করল পুলিস। শনিবার বিকেলে খুনের ঘটনায় ধৃত পবিত্র বর্মণকে নিয়ে নদীর পাড়ে যায় পুলিস। তার কোমরে দড়ি বাঁধা ছিল। নদীরপাড়ে গিয়ে ধৃত যুবক আঙুল দিয়ে এলাকা দেখিয়ে দেয়। সেখানে কোদাল দিয়ে খোঁড়াখুঁড়ির পর নিহত শেফালি বর্মণের মাথা বেরিয়ে আসে। ওই ঘটনা দেখার জন্য নদীপাড়ে দু’ধারে কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় জমান। পড়ন্ত বিকেলে মাথা উদ্ধার হতেই সেটি বস্তায় ভরে গাড়িতে তুলে ঘটনাস্থল ছাড়ে পুলিস। নিহত যুবতীর মাথা উদ্ধার না হওয়ায় তদন্তে সমস্যা হচ্ছিল। এদিন সেই সমস্যা থেকে রেহাই পেল ময়না থানার পুলিস।
বৃহস্পতিবার রাতে ওই খুনের ঘটনায় নিহত শেফালি বর্মণের স্বামী পবিত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। শুক্রবার তাকে ১২দিনের পুলিস হেফাজতে নেওয়ার পরই কাটা মাথার খোঁজ পেতে জেরা শুরু হয়। টানা জেরার মুখে পবিত্র স্ত্রীর কাটা মাথা কোথায় রেখেছে তা জানায়। শনিবার সকাল থেকেই আড়ংকিয়ারানা গ্রামে বেলতলা এলাকায় পুলিস মোতায়েন করা হয়। বিকেল নাগাদ পদস্থ পুলিস অফিসাররা তমলুক থেকে ময়না থানায় যান। ভিডিওগ্রাফার জোগাড় করা হয়। তারপর কোমরে দড়ি বেঁধে পবিত্রকে নিয়ে ঘটনাস্থলে রওনা দেয় ময়না থানার পুলিস। ওই খবর জানাজানি হতেই আশপাশের এলাকা থেকে প্রচুর মানুষ নদীর পাড়ে ভিড় জমান।
কোদাল দিয়ে প্রায় ১৫-২০মিনিট ধরে নদীর পাড়ে খোঁড়াখুঁড়ি করার পরই নিহত যুবতীর মাথা বেরিয়ে আসে। ধৃত পবিত্রর বাড়ি থেকে প্রায় ৮০০মিটার দূরে মাথাটি নদীর পাড়ে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। তারপর বস্তার মধ্যে দেহ ভরে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে রায়চক গ্রামের চণ্ডীয়া নদীতে ফেলে দিয়েছিল। এই ঘটনায় পবিত্রকে কারা সহযোগিতা করেছিল তা বের করার চেষ্টা করছে পুলিস। কাটা মুণ্ডের খোঁজ পাওয়াটা পুলিসের কাছে জরুরি হয়ে পড়েছিল। তা উদ্ধার হওয়ায় অনেকটাই নিশ্চিন্ত পুলিস। এবার এই ঘটনায় আর কারা জড়িত সেই তথ্য পেতে চাইছেন তদন্তকারী অফিসাররা।
গত ১৯জানুয়ারি রবিবার রায়চক গ্রামে চণ্ডীয়া নদীতে যুবতীর বস্তাবন্দি মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনার পর তিনদিন যুবতীর পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশায় ছিল পুলিস। কাটা মাথার খোঁজে ড্রোন উড়িয়ে, স্নিফার ডগ এনে তল্লাশি চালানো হয়েছে। কিন্তু, কোনও ক্লু বেরিয়ে আসেনি। বৃহস্পতিবার ওই ঘটনার রহস্যভেদ করে পুলিস। আড়ংকিয়ারানা গ্রামে বাড়ি থেকে পবিত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিহত শেফালি ধৃতের স্ত্রী ছিল। দাম্পত্য‌ ঩বিবাদের জেরে শেফালি তিন মাস আগে ভগবানপুরের এক যুবকের হাত ধরে বেরিয়ে যায়। ওই যুবক সিঁদুর পরিয়ে শেফালিকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। পবিত্র কর্মসূত্রে আন্দামানে থাকত। কয়েকজন বন্ধুর সহযোগিতায় গত ১৬জানুয়ারি ভগবানপুরে গিয়ে শেফালিকে মারধর করে বাড়িতে আনে সে। তারপর পরিকল্পনা করে খুন করে বলে অভিযোগ। মৃতের পরিচয় নিশ্চিহ্ন করতে দেহ ও মাথা আলাদা করা হয়েছিল। মাথা নদীর পাড়ে পুঁতে দেওয়া হয়। তারপর দেহটি বস্তায় ভরে নদীতে ভাসিয়ে দেয় সে।