নিজস্ব প্রতিনিধি কৃষ্ণনগর: সীমান্তের মানব পাচার চক্রের সঙ্গে কয়েক বছর আগেই হাত মেলায় ভীমপুর কাণ্ডে ধৃত মানিক বিশ্বাস। কুড়ি থেকে বাইশ হাজার টাকা দরে পদ্মাপারের দালালদের থেকে অসহায় মহিলাদের ‘কিনে নিত’ সে। দক্ষিণবঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ‘সম্মানে’র কাজ দেওয়ার টোপ দেওয়া হতো তাদের। কিন্তু ঘটতো ঠিক উল্টোটা। উত্তর ২৪ পরগণা জেলার শহর লাগোয়া বিভিন্ন হোটেলে দেহব্যবসার কাজে নামানো হতো ওইসব মহিলাদের। খদ্দের খোঁজা থেকে শুরু করে সময়মতো তাদের হোটেলে পাঠানো—সবটাই একা হাতে করত মানিক। আর এই ব্যবসার সূত্রে ক’বছরের মধ্যে ফুলেফেঁপে ওঠে মানিক। যদিও মহিলাদের সেইভাবে কানাকড়িও দিত না সে। মহিলারা প্রতিবাদ করলেই তাকে ফের বাংলাদেশে দালালদের মারফত পাঠিয়ে দিত।  মানিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। 
কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার এক আধিকারিক বলেন, ‘মানিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বেশ কিছু তথ্য জানা গিয়েছে। এই ব্যবসার সঙ্গে তার যোগসাজস প্রমাণিত হয়েছে। আমরা এই মামলার বিভিন্ন দিক তদন্ত করে দেখছি।’
গত সপ্তাহে বৃহস্পতিবার বারাকপুর কমিশনারেটেরে ঘোলা থানা এলাকা থেকে, খদ্দের সেজে ভীমপুর থানার পুলিস মানিককে গ্রেপ্তার করে।‌ একটি অনুপ্রবেশের মামলার তদন্তে নেমে তার কথা জানতে পারেন গোয়েন্দারা। মানিককে হেফাজতে নিয়ে গত চারদিন ধরে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কতদিন ধরে এই কাজ করছে, আর কারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত, কীভাবে মহিলাদেরকে দেহব্যবসার কাজে নামানো হতো, এরকম একাধিক প্রশ্ন নিয়ে জেরা শুরু করে তদন্তকারী অফিসাররা। 
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১১ জানুয়ারি সীমান্ত পারাপারের সময় এক মহিলা ও একজন দালালকে গ্রেপ্তার করে ভীমপুর থানার পুলিস। ভারত থেকে বাংলাদেশে সেই মহিলাকে পাচার করছিল ধৃত দালাল নাসির মোল্লা। পরবর্তিতে সেই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত আরও এক দালাল বাহারুল মণ্ডলকেও ভীমপুর থানার পুলিস গ্রেপ্তার করে। 
ধৃত মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, মাস চারেক আগে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করেছিল সে। কাজের সন্ধানেই দালালের হাত ধরে তার ভারতে আসা। এপারে কাপড়ের দোকানে কাজ দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সেইসঙ্গে মানিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস জানতে পেরেছে, এই কাজের জন্য সেই দালালকে ২২ হাজার টাকা দিয়েছিল সে। আরও জানা গিয়েছে, এর আগেও একাধিকবার টাকার বিনিময়ে মহিলাদের বাংলাদেশ থেকে ভারতে নিয়ে এসেছে মানিক। বিগত দেড় বছর ধরে সে এই কাজ করছে। মূলত বারাসত থেকে নিউটাউন পর্যন্ত যত নামিদামি হোটেল রয়েছে, সেখানেই টাকার বিনিময়ে মেয়েদের পাঠাত মানিক। তাদের সাজার জন্য ইমিটেশনের গয়না ছাড়া আর কিছুই দিত না সে। 
খদ্দেরদের থেকে পাওয়া পুরো টাকাটাই নিত নিজের পকেটে। সেইসঙ্গে মানবপাচার চক্রের সদস্যদের কাছেও সেই টাকা যেত বলে মনে করছে তদন্তকারী অফিসাররা। ভীমপুর কাণ্ডে ধৃত মহিলার সঙ্গেও আর্থিক লেনদেন নিয়ে মানিকের ঝামেলা হয় বলে পুলিস জানতে পেরেছে। তাই ওই মহিলা ১১ তারিখ রাতে ভীমপুর থানার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ফিরে যাচ্ছিল।পুলিসের কথায়, ‘বাংলাদেশের অশান্তির সুযোগ নিচ্ছে মানব পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত অসাধু ব্যবসায়ীরা। পদ্মাপারের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে যে সমস্ত মহিলা কাজ হারাচ্ছেন, তাদেরকেই টার্গেট করছে দালালরা। তারপর কাজের টোপ দিয়ে এপারে আনানো হচ্ছে।‌’ ভীমপুরের ঘটনাও তার ব্যতিক্রম নয়।
( মানিককে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র)