যারা বিদ্যার্থী তাদের মানসিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে। নানা বিষয়ে খুঁতখুঁতে ভাব জাগবে। গোপন প্রেম থাকলে ... বিশদ
যে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে, অল্পমাত্র মলিনতা তার চোখে কষ্টদায়ক, যে সঙ্গীত রসিক তালমানের অল্পমাত্র ব্যতিক্রম তার কানে অতি বিরক্তিকর। পুরাণে গল্প আছে, দেবরাজ ইন্দ্রের সভায়, অপ্সরী তালভঙ্গ করায়, শাপগ্রস্ত হইয়াছিল। গাজীপুরের পাওহারীবাবা গঙ্গাতীরে ধ্যানমগ্ন ছিলেন, কলসীতে জল ভরিবার “ভক্ ভক্” শব্দ তার নীরবতার শান্তি সম্ভোগে রত কর্ণে বজ্রনিনাদবিৎ বোধ হইয়াছিল। যাঁহাদের পর্যবেক্ষণ শক্তি আছে, সুখ দুঃখের এইরূপ প্রতিযোগিতা সর্বদা সর্বত্রই দেখিতে পান। তবে জীবনের ঊর্দ্ধে যাইবার পথে, ঊর্দ্ধ জীবনে যাওয়া ছাড়া আর অন্য উপায় নাই।
“সর্ব্বদ্বারেষু দেহেহষ্মিন্ প্রকাশ উপজায়তে”—না হইলে যে মানুষের চোখ খোলে না। তাই বহু রঙ্গমঞ্চে “দুঃখ-বিতাড়ন নাটকের” অভিনয় করিতে করিতে জানা যায়, সুখের খরচেই দুঃখ লালিত পালিত। তখন, শুধু তখনই, শান্তি-স্বস্তির সন্ধান নিতে ইচ্ছা হয়।
নিজের দেহমনের প্রয়োজন মিটাইতেই সকল জীবের জীবন কাটিয়া যায়। কদাচিৎ দুই চারিজন ব্যতীত অন্য সকল মানুষেরও এই একই অবস্থা। এই জগৎ কি, কোথা হইতে আসিল, আমি কি, কেন “কলুর চোখ ঢাকা বলদের মত” দিবানিশি খাটিয়া মরি, এইসব প্রশ্ন কই কারো মনে তো উঠে না।
ভারতের প্রাচীন জ্ঞানিগণ আত্মতত্ত্ব অর্থাৎ “আমি” সম্বন্ধে বহুকাল অনেক গবেষণা করিয়া এই বিষয়ের প্রায় সকল কথাই জানিয়েছিলেন। এখন কোনও কোনও ব্রাহ্মণের বাড়ীতে এবং সন্ন্যাসীর মঠে, তালপাতার বা গাছের ছালে লেখা গবেষণার ফল সম্বন্ধীয় অসংখ্য গ্রন্থ অবজ্ঞায় অযত্নে অব্যবহারে ধ্বংস হইতেছে। অল্প সংখক পুস্তক মুদ্রিত হইয়াছে।
পৃথিবীর নানা দেশে, নানা বিষয়ে বহু গবেষণা হইয়াছিল। তাহা কোথাও রৌদ্রবৃষ্টিতে কোথায় ভূগর্ভে প্রোথিত অবস্থায় প্রাকৃতিক নিয়মে ধ্বংস হইয়াছে। গত কয়েক শতাব্দীতে মানব সভ্যতার অভূতপূর্ব জাগরণ দেখা দিয়াছে। এখন মুদ্রাযন্ত্রাদি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ফলে মানুষের চিন্তা ও আবিষ্কারের ফলস্বরূপ বিপুল জ্ঞানরাশি গ্রন্থে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হইয়াছে ও হইতেছে।
ভারতীয় অন্তর্জীবনের আবিষ্কার ও পাশ্চাত্য বহির্জীবনের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধীয় জ্ঞানভাণ্ডারের বিপুলতার বিষয় চিন্তা করিলে মানব প্রতিভার প্রাচুর্য্য দৃষ্টে স্তম্ভিত হইতে হয়। কিন্তু সমগ্র মানবজাতির উন্নতি সাধনে এই অন্তর্জগতের ও বহির্জগতের বিপুল জ্ঞান ভাণ্ডার কতটুকু কাজে লাগিয়াছে তাহা ভাবিলে মন নিরাশায় পূর্ণ হইয়া যায়। আমরা দেখিতেছে, অন্তর্জগতের বিপুল জ্ঞানভাণ্ডার মানবজাতির মধ্যে বিদ্বেষ কলহ অশান্তির হেতু “ধর্ম্ম” নামে পরিচিত এবং বহির্জগতের অভূতপূর্ব জ্ঞান পরধন লুন্ঠন পরপীড়নের অমোঘ উপায় “বিজ্ঞান” রূপে পরিচিত।
অধ্যাত্ম বিজ্ঞানের ফলে সর্বত্র সমদর্শন, বহির্বিজ্ঞানের ফলে সর্বমানবের সুখ সম্পাদন মানবজাতির মধ্যে কবে দেখা যাইবে?
ধনভোগী লোকেরা নিত্য অতি উত্তম সুখাদ্য খায়। তাদেরও কখনও কখনও তিতা-কষা-টক-ঝাল খেতে ইচ্ছা হয়, খাবার প্রয়োজন হয় মুখ বদলাবার জন্য।