যারা বিদ্যার্থী তাদের মানসিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে। নানা বিষয়ে খুঁতখুঁতে ভাব জাগবে। গোপন প্রেম থাকলে ... বিশদ
জপ প্রার্থনা এসব যদি লোকের কল্যাণের জন্য সংকল্প ক’রে বসে না-ও করা হয়, তবু আধ্যাত্মিক শক্তির প্রভাব সূক্ষভাবে স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে কাজ করবে। সূর্য উঠলে যেমন আলো আপনি ছড়ায়, তেমনি যারা আধ্যাত্মিকতায় প্রতিষ্ঠিত হয় তাদের প্রভাব আপনিই ছড়ায়। হিমালয়ের সাধুরা আলাদা ক’রে কিছু করুন আর নাই করুন। তাঁদের অবস্থিতিতেই জগতের কল্যাণ সাধিত হচ্ছে। আবার সংসারেও দেখা যায়—এক এক জন সৎ-মানুষের প্রভাব এমনি যে, তাঁরা থাকতেই বাড়িতে একটা দিব্যভাব ধর্মের ভাব একটা কল্যাণের ভাব থাকে। অনেক বাড়িতেই দেখা যায় একজন বয়স্ক মানুষ, তিনি নিজে হয়তো কিছুই করতে পারেন না, কিন্তু তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রভাবেই তিনি সকলকে ধ’রে আছেন আর তাঁর চলে যাওয়া-মাত্র সব যেন ভেঙ্গে যায়।
ইতিহাস আর কাব্যে একটা মস্ত বড় পার্থক্য আছে। ইতিহাস Matter of fact-কে তুলে ধ’রে নিছক ঘটনাটুকু দিচ্ছে। কিন্তু কাব্য— ইতিহাস ছাড়া আরও কিছু। সেখানে শুধু ঘটনা নয়। ঘটনার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য বা স্বরূপটা তুলে ধরা হয়। একজন আর একজনকে একটা আঘাত করল। ইতিহাস শুধু ঐ ঘটনাটুকু ব’লেই চুপ করবে। কিন্তু কাব্য সেই আঘাতের পেছনে কি উদ্দেশ্য, কি প্রয়োজন, কি তাৎপর্য, সবটা ফুটিয়ে তুলবে।
ইন্দ্রিয় দ্বারা দেখার পরে অনুভূতির রাজ্যের জিনিস তুলে ধরে কাব্য। তাই কাব্য নিছক ইতিহাসের সীমা বা গণ্ডীকে ছাড়িয়ে যায়। গভীর অন্তর্দৃষ্টির সাহায্যে এবং কল্পনার আশ্রয় নিয়ে সে ঘটনার মধ্যেও একটা কিছু নূতন জিনিস খুঁজে বার ক’রে তার নিজস্ব অবদান রেখে দেয়। তাছাড়া, রসসৃষ্টিটা কাব্যের একটা মস্তবড় দিক। কাব্যের ভিতর থাকে রস, যেটা কবির নিজস্ব সৃষ্টি। শুধু ইতিহাস নিয়ে যারা মাথা খোঁড়াখুঁড়ি করে তারা ঠিক রসের আস্বাদ পায় না।
চৈতন্যঘনসত্তা ভগবান পৃথিবীতে নেমে আসেন সৃষ্টির সঙ্গে তাল মিলিয়ে।
‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে’—এটাও যেমন সত্য, তেমনি এটাও মস্ত বড় সত্য যে, পিতার মধ্যে লুকিয়ে আছে শিশুর শিশুত্ব। পরিণত বয়সেও এই শিশুত্বটি বীজাকারে থেকে যায়; দেখা যায়, বার্ধক্যের অসহায়তার মানুষ শিশুর মতোই হয়ে যায়, শিশু আর বৃদ্ধে বিশেষ প্রভেদ থাকে না। এটা হচ্ছে সেই আদি শিশুত্বের কথা, অর্থাৎ যে শিশুত্ব নিয়ে সে এই জগতে প্রথম এসেছিল। সাধনার চরম কথা এই শিশুত্ব-অর্জন। কারণ, ভগবান নিজেই হলেন বিরাট শিশু।
বাইরের প্রকৃতির সঙ্গে শরীরের যেমন একটা যোগ আছে, তেমনি মনেরও একটা যোগ আছে। কিন্তু সাধকের মনটাকে এমন একটা স্তরে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যেখানে প্রকৃতির চঞ্চলতা মনের ওপর কোনও অদিব্য প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। বরং সেই দিব্য মনের রঙে প্রকৃতিই রেঙে উঠবে। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না যে-কোনও ভাবই থাকুক না, সবই থাকবে দিব্যভাবে ভাবিত।
সামান্য ফুলগাছ তৈরি করতে কত পরিশ্রম দরকার, কত জিনিস দরকার—ভালো মাটি, সার, আলো, জল, মালী— কত কি চাই। আর মানুষ তৈরি করতে গেলে কি এমনি-এমনি হবে? আধারও চাই, পরিবেশও চাই, তবে তো সদ্গুরুর কৃপা কাজ করবে।
দেখ বাবা, দেবস্বপ্ন সত্য। এগুলো তাঁর কৃপা। সব সময় যে স্বপ্নের গভীর অর্থ থাকবে এমন কোনও কথা নয়। অনেক ক্ষেত্রে হয়তো অর্থ থাকে, আবার অনেক ক্ষেত্রে শুধু কৃপা করার জন্যই তিনি দর্শন দেন। ভক্তকে এগিয়ে নেবার জন্য আকর্ষণ করার জন্যই স্বপ্নে কৃপা করেন।
প্রাণ-শক্তিকে জাগানোর জন্য নাম-শক্তিই যথেষ্ট। কুণ্ডলিনী জাগানোর চেষ্টা আর ওইসব ক্রিয়ার কোনও দরকার নেই।
চেষ্টা করার ইচ্ছা হারিয়ে গেলে জোর ক’রে আনতে হবে, সেটাই তো চেষ্টা, সেটাই তো পুরুষকার।
Struggle আছে মানেই এগিয়ে যাওয়া আছে। Struggle না থাকলে বলা যায় এগোনোটা থেমে গেছে। Struggle বা সংগ্রাম হচ্ছে আধ্যাত্মিক জীবনের মূল কথা।