যারা বিদ্যার্থী তাদের মানসিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে। নানা বিষয়ে খুঁতখুঁতে ভাব জাগবে। গোপন প্রেম থাকলে ... বিশদ
নির্বাচন দেশজুড়ে হলেও, এবার সবথেকে বেশি আকর্ষণীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। তার কারণ বিজেপি খুব ভালো ফল করার চেষ্টা করছে এই রাজ্যে। স্বভাবতই পঞ্চাশের দশকের পর রাজ্যে এই প্রথম নির্বাচনের মূল ইস্যু ধর্ম এবং জাতপাত। এ বিষয়টা প্রমাণ করা শক্ত, এবং কোনও রাজনৈতিক দলই নিজের থেকে সরাসরি একথা স্বীকার করতে চাইবে না। বরং অন্য দলকে এই অপবাদ দেবে। তবে উপলব্ধি করাই যায় যে সংখ্যাগুরু সংখ্যালঘুর দ্বন্দ্ব কিংবা মতুয়া সংক্রান্ত আলোচনা যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে এবারের নির্বাচনে। সেই হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের এই নির্বাচন বিজলি, সড়ক, পানির নয়। উন্নয়নেরও নয়। যে কোনও সরকারই কিছু উন্নয়ন করে থাকে, আবার না পাওয়ার হতাশাও থাকে কিছু। সেগুলো কিছুদিন পরে ভুলে যায় মানুষ। তাই বাম আমলের উন্নয়ন কিংবা অনুন্নয়নের কথা ভেবে আজকের দিনে আর কেউ ভোট দিতে যাবেন না। ২০১৪ পর্যন্ত একটানা দশ বছরের কংগ্রেস রাজত্বে কেন্দ্রে কী কী ঘটেছিল সেটাও হয়তো ভুলে গেছেন সকলে।
হাতের কাছে থাকল কেন্দ্রে বিজেপি আর রাজ্যে তৃণমূলের উন্নয়নের স্লোগান। অবশ্যই দু দল কিছু কিছু কাজ করেছে, আবার অনেক অকাজও। কিন্তু ভোটপ্রচারে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নের সংখ্যারাশির চেয়ে। মনে রাখতে হবে উন্নয়নের কথা সর্বদা ভোটে জেতায় না। বরং এমনটাও অনেক সময় দেখা গেছে যে কোনও রাজনৈতিক দল সত্যিকারের উন্নয়নের চেষ্টা করা মাত্র নির্বাচনে হেরেছে। তাই পশ্চিমবঙ্গে এবারের ভোটে প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা এবং জটিল জাতপাতের হিসেবকে উপেক্ষা করলে ভুল হবে। ভোটফলে প্রতিফলিত হবে সেই হিসেবগুলোই।
গত কয়েকটি নির্বাচনের ভোটের ভাগ অবশ্যই ভবিষ্যতবাণীর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। সেই পরিবর্তনও পরিষ্কার লক্ষ্য করা যায় সংখ্যা ঘাঁটলে। ২০০৮ এর পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে বামফ্রন্টের ভোট কমা অবশ্যই সেই প্রমাণ দেয়। ২০১১ তে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর বড় নির্বাচন বলতে ২০১৪-র লোকসভা এবং ২০১৬-র বিধানসভা। দশমিক ভুলে (অর্থাৎ পূর্ণসংখ্যায় লিখলে) ২০১৪/২০১৬-তে ভোটের ভাগ মোটামুটি তৃণমূল ৩৯%/৪৫%, বামফ্রন্ট ৩০%/২৬%, কংগ্রেস ১০%/১২% এবং বিজেপি ১৭%/১০%। তাই যে সহজ ভোটবিন্যাস থেকে আলোচনা শুরু করা যায় তা আলগাভাবে বলতে গেলে তৃণমূল ৪৫%, বামফ্রন্ট ২৫%, বিজেপি ১৫%, কংগ্রেস ১০%। বুঝতেই পারছেন এগুলো কোন সঠিক সংখ্যা নয়, যোগবিয়োগ সহজভাবে বোঝার একটা প্রচেষ্টা মাত্র।
এবার প্রতিটি আসনে জিতবেন কে? সেই আসনে যিনি বেশি ভোট পাবেন তিনি। সার্বিকভাবে যদি বিজয়ী দলের ভোট শতাংশ রাজ্যজুড়ে দ্বিতীয় শক্তির থেকে ১০% বেশি থাকে তাহলে অধিকাংশ আসনে জেতা সম্ভব। যে ভোট শতাংশের অঙ্ক থেকে প্রারম্ভিক আলোচনা, তাতে যোজনখানেক এগিয়ে আছে তৃণমূল। তাই রাজ্যজুড়ে বিশাল কিছু পরিবর্তন হতে গেলে ভোট ঘুরতে হবে অনেক বেশি মাত্রায়। অন্যদিকে এটাও মনে রাখতে হবে যে ২০১৬-র পর থেকে বেশিরভাগ ছোট-বড় নির্বাচনে বাম কিংবা কংগ্রেসকে সরিয়ে দ্বিতীয়স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। গতবছরের ঘটনাবহুল পঞ্চায়েত নির্বাচন তার একটা প্রমাণ।
নির্বাচনের একটা বড় অংশ হল সংবাদমাধ্যমের প্রচার। সেই প্রচার সাধারণ মানুষের মনে কতটা দাগ কাটতে পারল তা বোঝা যাবে ভোটফলের পর। কিন্তু তার আগে ভোট পূর্ববর্তী বা বুথফেরত সমীক্ষাতে এই প্রচার যথেষ্ট প্রভাব ফেলে।
যেহেতু বিভিন্ন সংবাদ বিপণির সঙ্গে তাদের লাভ ক্ষতির পাটিগণিত জড়িয়ে থাকে তাই তাদের মনের মাধুরীও অনেকটা মিশে যায় সম্ভাবনার অঙ্কে। সেখানে যে ভাবনাটা সবথেকে বেশি বিক্রি হয়েছে তা হল এ রাজ্যে মূল লড়াই তৃণমূল বনাম বিজেপির এবং বিজেপির ভোট খানিকটা বাড়বে। সেই প্রেক্ষিতে এই নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। ধরা যাক কিছুটা কমলেও তৃণমূল তাদের ভোট মোটামুটি ধরে রাখতে পারল, অর্থাৎ সেই ভোট নেমে হল ৪০% এর আশেপাশে। এই ৫% ভোটটা দিয়ে দিন বিজেপিকে। বামেদের ভোট ২৫% থেকে কমিয়ে ১৫% করুন। সেই ১০% ভোটও হাতবদল করুন বিজেপিকে। সেক্ষেত্রে বিজেপি পনেরো থেকে বেড়ে হবে ৩০%। এই রকমের পরিস্থিতিতেও তাদের সঙ্গে তৃণমূলের পার্থক্য থাকবে ১০% জনমতের। সেই হিসেবে তৃণমূলকে ৩২ থেকে ৩৬টি আসন দেওয়াই যায়। বাকিটুকুর বেশিরভাগই যাবে বিজেপির দিকে, অর্থাৎ ৪ থেকে ৮। এক আধটা পেতে পারে কংগ্রেস বা বামেরা। আর তৃণমূল যদি শেষ বিধানসভার মত নিজেদের ৪৫% ভোট ধরে রাখে, সেক্ষেত্রে কিন্তু তৃণমূলের ৩৯ বা তার বেশি আসনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বুথফেরত সমীক্ষা যদিও এই কথা বলছে না।
বুথফেরত সমীক্ষা বলছে, তৃণমূল, বাম আর কংগ্রেসের আরও কিছু ভোট বাগিয়ে নিয়ে বিজেপি পৌঁছবে ৩৫% থেকে ৪০% এর আশেপাশে। তাদের কথামতো তৃণমূল আর বিজেপির পার্থক্য যদি পাঁচ শতাংশের মধ্যে চলে আসে, তখন কিন্তু বিজেপির আসন বেশ কিছুটা বেড়ে যেতেই পারে। তবে এই পরিস্থিতিতে আসনের ভবিষ্যদ্বাণী করা একেবারেই ঠিক নয়, কারণ দু দলের ভোট কাছাকাছি এলে আসনের হিসেবে বিপুল ওলটপালট হয়। সেক্ষেত্রে এটা বুঝতে হবে যে এই ভোটে তৃণমূল বিরোধী একটা হাওয়া উঠেছে। সেরকম ঘটনা ঘটলে যেখানে বিজেপি দুর্বল, সেখানে তৃণমূল বিরোধী ভোট পৌঁছে যেতে পারে বাম বা কংগ্রেসে, যদিও সেই ভবিষ্যদ্বাণী সংবাদমাধ্যমের খাতায় অনুপস্থিত। তারাও যদি খান কয়েক আসন জুটিয়ে নেয় তাহলে তৃণমূলের নম্বর বেশ কমবে। সব মিলিয়ে বুথফেরত সমীক্ষার হিসেব বলছে, তৃণমূল নেমে যাবে ৩০-এর নীচে আর বিজেপি দুই অঙ্কে পৌঁছবে। সঙ্গে এটাও মনে রাখা জরুরি যে অল্প কয়েকটি আলোচিত সম্ভাবনা ছাড়াও অনেকরকম ফল লুকিয়ে থাকতে পারে ভোটবাক্সে। তাই ২৩ তারিখে ভোটফল প্রকাশ হওয়ার আগে লিখে রাখুন আপনার নিজের ভবিষ্যদ্বাণী। দেখে নিন কতটা মিলল সেই অঙ্ক। লড়াই, বদলা, ইত্যাদি পেশিশক্তির শব্দমালা ছেড়ে ভোটফলের পর সবাই যদি এই গ্রীষ্মে নিজের মাথায় ঠান্ডা জল ঢেলে ভোট বিশ্লেষণের অঙ্ক কষেন, সেটাই রাজ্যের পক্ষে মঙ্গল। তারপর না হয় কেন্দ্রের দিকে নজর দেওয়া যাবে।