বৃহস্পতিবার, 17 জুলাই 2025
Logo
  • বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

ইরানে মার্কিন হামলা, নিশানায় পরমাণু কেন্দ্র, পাল্টা আক্রমণে তেহরান, এবার মহাযুদ্ধ?

হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে তখন পাশে বসে ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভান্স সহ অন্য শীর্ষ উপদেষ্টারা। রয়েছেন সেনা, গোয়েন্দা ও গুপ্তচর সংস্থার প্রধানরাও। 

ইরানে মার্কিন হামলা, নিশানায় পরমাণু কেন্দ্র, পাল্টা আক্রমণে তেহরান, এবার মহাযুদ্ধ?

নয়াদিল্লি: হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে তখন পাশে বসে ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভান্স সহ অন্য শীর্ষ উপদেষ্টারা। রয়েছেন সেনা, গোয়েন্দা ও গুপ্তচর সংস্থার প্রধানরাও। কিন্তু তাঁর চোখ সামনের স্ক্রিনে স্থির। ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’ লেখা লাল টুপি পরে চুপচাপ বসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মিসৌরির হোয়াইটম্যান বিমানঘাঁটি থেকে ইরানের রাজধানী তেহরানের কাছে পৌঁছে গিয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাতটি বি-২ স্পিরিট স্টিলথ বম্বার বিমান। যাদের পেটে রয়েছে দু’টি করে সাড়ে ১৩ হাজার কেজি ওজনের জিবিইউ-৫৭ বাঙ্কার বাস্টার বোমা। কিছুক্ষণ পর চেয়ার ছাড়লেন ট্রাম্প। কারণ, ততক্ষণে শেষ ২৫ মিনিটের ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’। টানা ১৮ ঘণ্টা উড়ে যাওয়ার পর রবিবার গভীর রাতে ইরানের প্রধান তিন পরমাণুকেন্দ্র—ফোরদো, নাতানজ ও এসফাহানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বোমারু বিমান। এর মধ্যে প্রধান টার্গেট ছিল পাহাড়ের আড়ালে মাটির অনেকটা নীচে অবস্থিত ফোরদো। সেখানে ছ’টি বিমান থেকে ১২টি বাঙ্কার বাস্টার ফেলা হয়। অন্য একটি বিমান থেকে নাতানজ কেন্দ্রে আছড়ে পড়ে দু’টি বোমা। এছাড়া মার্কিন নৌসেনার সাবমেরিন থেকেও নাতানজ ও এসফাহান লক্ষ্য করে  উড়ে আসে ৩০টি টোমাহক মিসাইল। পরে সমাজমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা সফলভাবে ইরানের তিনটি পরমাণুকেন্দ্র আক্রমণ করেছি। আমেরিকা, ইজরায়েল ও সারা বিশ্বের জন্য এটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত।’ ইরানের উদ্দেশে তাঁর হুঙ্কার, ‘ফোরদো ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ইরান এরপরেও শান্তির পথে না এলে আবার হামলা চালানো হবে। ইরানকে যুদ্ধ শেষ করতেই হবে।’ কিন্তু  এদিনের পর পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি কি সত্যিই ফিরবে? নাকি আমেরিকার হামলা আদতে মহাযুদ্ধের ইঙ্গিত? কারণ এই আক্রমণের নিন্দা করে ইরানের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে রাশিয়া ও চীনের মতো পরমাণু শক্তিধর দেশ।
ইরানে সামরিক হামলা চালানো হবে কি না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দু’মাস সময় চেয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু দু’দিনের মধ্যেই নাটকীয় পটপরিবর্তন! ইরানে বাঙ্কার বাস্টার হামলা চালানোর জন্য আমেরিকার শরণাপন্ন হয়েছিলেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। কারণ, ইরানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ শুরুর প্রথমেই নাতানজ সহ পরমাণু কেন্দ্রগুলিকে টার্গেট করেছিল ইজরায়েলি সেনা। কিন্তু মাটির অনেক নীচে অবস্থিত হওয়ায় সাধারণ ক্ষেপণাস্ত্র সেগুলিকে ধ্বংস করতে পারেনি। মাটির নীচের সুরক্ষাস্তর ভাঙার জন্য একমাত্র সক্ষম বাঙ্কার বাস্টারই। কারণ, ২০০ ফুট পুরু কংক্রিট ভেদ করতে সক্ষম এই বোমা। ‘মাদার অব অল বম্ব’ হিসেবেই বেশি পরিচিত জিবিইউ-৫৭। আমেরিকার এই হানাদারির পর স্বাভাবিকভাবেই খুশি নেতানিয়াহু। বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতিহাস মনে রাখবে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।’ পরে পেন্টাগনের তরফে জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ জেনারেল ড্যান কেইন জানান, সব মিলিয়ে ১২৫টি বিমান এই অভিযানে অংশ নিয়েছিল। প্রতিটি বিমানই নিরাপদে ফিরে এসেছে।
প্রত্যাঘাত শুরু করেছে তেহরানও। জ্বালানি তেল পরিবহণের গুরুত্বপূর্ণ জলপথ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে সায় দিয়েছে ইরানের পার্লামেন্ট। ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, ‘ওরা (আমেরিকা) সব সীমা পার করে ফেলেছে। আমাদের কাছে কূটনীতির জন্য বিশেষ কিছু বেঁচে নেই। আত্মরক্ষার অধিকার আমাদের আছে। প্রত্যেক মার্কিন নাগরিক এখন আমাদের টার্গেট।’ তেহরান জানিয়েছে, মার্কিন হামলার পরেও পরমাণু কেন্দ্রগুলি থেকে কোনও তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়ায়নি। ফলে আশপাশের বাসিন্দাদের ভয়ের কোনও কারণ নেই। এরপরেও পরমাণু গবেষণা থামানো হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ইরান। রবিবার ইজরায়েলের উপর আক্রমণের ঝাঁঝও বেড়েছে। তেল আভিভ, হাইফা সহ সব প্রধান শহরে আছড়ে পড়েছে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। তার মধ্যে ছিল একাধিক ওয়ারহেডযুক্ত খোররামশহর-৪ মিসাইলও। ইজরায়েলি সেনা জানিয়েছে, প্রধান বিমানবন্দর বেন গুরিয়ানকেও টার্গেট করেছিল ইরান। ইরানের হামলায় অন্তত ৮৬ জন ইজরায়েলি নাগরিক আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে তেল আভিভ।

রাশিফল