নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ঘড়ির কাঁটায় রাত ৯টা। ফুলবাগানে গুরুদাস কলেজের সামনে বিকট শব্দে ফাটল চকোলেট বম্ব। একটা নয়, একাধিক! সেই তীব্র শব্দ সামলে উঠতে না উঠতেই এক বহুতল থেকে আর এক বহুতলে হুশ করে উড়ে গেল রকেট। একই চিত্র বেলেঘাটা ক্যানাল ইস্ট ও ওয়েস্ট রোডের। কানে তালা লাগার উপক্রম। সন্ধ্যাতেই দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে দক্ষিণ কলকাতার কসবা ও নেতাজি নগর থেকে শব্দবাজি ফাটানোর মুহুর্মূহু অভিযোগ। সব মিলিয়ে কালীপুজোয় পুলিস, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নিয়মকানুনকে বুড়ো আঙুল দেখানোয় সফল কলকাতা। বলা ভালো দিনের শেষে ‘বাজি’মাতই করল মহানগরী।
শিয়ালদহ, কলেজ স্ট্রিটেও দেদার ফেটেছে চকোলেট বম্ব। শুধু কলকাতা নয়, শহরতলির সোদপুর, বারাকপুরেও চলেছে শেল ফাটানোর প্রতিযোগিতা। পুলিস টহল দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু বাধ সেধেছে বহুতল। কারণ, এইসব হাইরাইজ থেকেই বাজি বেশি ফাটায় নাগাল পেতে মুশকিল হয়েছে পুলিসের। পিছিয়ে ছিল না টিটাগড়, ভাটপাড়া, বারাসত, মধ্যমগ্রামও। দক্ষিণ শহরতলির বারুইপুর, সোনারপুরের আকাশ ছেয়ে গিয়েছিল ফানুসে। আওয়াজে সেখানেও কান পাতা দায়। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত নিষিদ্ধ বাজি পোড়ানোর অভিযোগে কলকাতা পুলিস গ্রেপ্তার করে ১১৭ জনকে। আর অভব্য আচরণের জন্য ১৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি, বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৫১৯ কেজি নিষিদ্ধ বাজি। সল্টলেকের পরিবেশ ভবনে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কন্ট্রোল রুম খুলেছে বুধবার। বুধবারই ন’টি অভিযোগ এসেছিল। তার মধ্যে রয়েছে কোন্নগর, নন্দকুমার, ভগবানপুর, পাটুলি, বালিগঞ্জ, লেকটাউন, আরামবাগ, বেলেঘাটা ও দক্ষিণ বিধাননগর। শব্দবাজি ছাড়াও কিছু অভিযোগ অবশ্য সাউন্ড বক্স ও ডিজে বক্স বাজানোরও ছিল। বৃহস্পতিবার অর্থাত্ কালী পুজোয় রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত গোটা বাংলা থেকে ২৯টি অভিযোগ এসেছে বলে খবর। কলকাতার মূলত বরানগর, কসবা, লেকটাউন থেকে বেশি অভিযোগ এসেছে। পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশি রাতের দিকে শব্দদূষণের মাত্রা বাগবাজার (৮৮.৯ ডেসিবেল), টালিগঞ্জ (৮০.৪ ডেসিবেল) এবং কসবাতে (৮৭ ডেসিবেল) স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই বেশি ছিল। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলছিলেন, ‘এখন অনেকে আলোর বাজি পছন্দ করছেন। ওই বাজিগুলো অনেক উঁচুতে গিয়ে ফাটছে। ফলত, রাসায়নিক কণাগুলো কিন্তু বাতাসে থেকে যায়। তাই আমরা নিয়ম মেনে বাজি ফাটানোর আবেদন করছি।’ কিন্তু বিশেষজ্ঞদের এই আবেদনে ক’জনই বা সাড়া দেন। রাত যত বেড়েছে ততই পাল্লা দিয়েছে শব্দবাজির দাপট। আর এতেই সমস্যায় পড়তে হয়েছে বয়স্ক থেকে শিশুদের। উদভ্রান্তের মতো লুকোতে দেখা গিয়েছে পথকুকুরদের। আরও একটি ‘বিপজ্জনক বস্তু’ ফানুসের উত্পাতে কার্যত ভয়ে রাত কাটাতে হয়েছে পথবাসীদের। কেষ্টপুর এলাকায় দেখা গেল, ৬-৭ ফুট উপরে একের পর এক ফানুস উড়ছে। আচমকাই একটি জ্বলন্ত ফানুস এসে পড়ল বাড়ির সামনে। কেষ্টপুরের এক বাসিন্দা বলছিলেন, ‘এখন তো কালীপুজোর দিনগুলোতে বালতি ভর্তি জল রেখে দিই। এরকম ফানুস এলেই জল নিয়ে দৌড়ে যাই।’ আলোর উত্সবে প্রতিবারই এইভাবে শহর কাঁপাতে থাকে শব্দবাজি। সচেতনতা থাকে। তবে আড়ালেই।