দেশ

অভিন্ন দেওয়ানি বিধির সঙ্গে এক দেশ এক ভোট, গান্ধীজিকে আঁকড়েই সঙ্ঘের এজেন্ডায় সিলমোহর মোদির

সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি: মহাত্মা গান্ধীর নীতি এবং আদর্শকেই তিনি নাকি বিগত ১০ বছর ধরে বাস্তবায়িত করে চলেছেন! এমনকী, আগামী দিনেও করবেন। এই মন্তব্য কার? স্বয়ং নরেন্দ্র মোদির। কারণ, লক্ষ্য তাঁর একটাই—অভিন্ন দেওয়ানি বিধি এবং ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ যেভাবে হোক কার্যকর করা। তিনি জানেন, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের এই দু’টি এজেন্ডা কার্যকর করতেই কালঘাম ছুটে যাবে তাঁর। ইতিমধ্যেই সেই আঁচ পাচ্ছেন তিনি। আর তাই মহাত্মা গান্ধীর স্বপ্নপূরণের শপথ গ্রহণের কথা মুখে বলে, আদতে সঙ্ঘের দাবিই প্রতিষ্ঠা করতে চলেছেন মোদি। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘প্রণম্য বাপু, ভারতের ঐক্যের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের রূপায়ণ একটি অন্তহীন পরীক্ষা। গান্ধীজি চেয়েছিলেন ওই পরীক্ষায় ভারত যেন সফল হয়।’ প্রধানমন্ত্রীর দাবি, তাঁর শাসনকালেই সেই পরীক্ষায় ভারত সফল হয়েছে। কারণ তাঁর মতে, মহাত্মা গান্ধী যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার লক্ষ্য স্থাপন করেছিলেন, তা বিগত ১০ বছরে অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। মোদি বলেছেন, ‘ভারতের একতা স্থাপনের উদাহরণ হল, ওয়ান নেশন ওয়ান ট্যাক্স। ওয়ান নেশন ওয়ান রেশন কার্ড। ওয়ান নেশন ওয়ান স্বাস্থ্যবিমা কার্ড। ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকট্রিক গ্রিড। আর এই একতার যে অগ্রগতি এবং ধারা, তারই নবতম নজির হতে চলেছে ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন। আমরা এখন দু’টি বিষয় নিয়ে কাজ করছি। আগামী দিনে সেগুলি কার্যকর করা হবে—ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন এবং সেকুলার দিওয়ানি বিধি।’ অভিন্ন শব্দটি মোদি ব্যবহার করেননি। ইচ্ছাকৃতভাবে। তিনি বোঝাতে চাইছেন যে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি হল প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘গোটা দেশের মানুষের মধ্যে সামগ্রিক একতা থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক। আর তাই মহাত্মা গান্ধীর স্বপ্নপূরণে আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর।’ 
অথচ কয়েক মাস আগে এই মোদিই বলেছিলেন, ‘সিনেমা না হলে গান্ধীজিকে বিশ্ববাসী চিনতই না।’    অর্থাৎ, ফর্মুলা পরিষ্কার। মহাত্মাকে সামনে রেখেই ‘পথের কাঁটা’ সরাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন মোদি। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে হলেও এতটা উদ্বেগের ভাঁজ কপালে পড়ত না তাঁর। কিন্তু সাম্প্রতিক ভোটের ফল দেখিয়েছে, কংগ্রেস আর সংসদের গ্যালারিতে বসে নেই। বরং কংগ্রেস তথা মহাজোট ইন্ডিয়া আর একটু হলেই ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করার মতো অবস্থায় চলে আসত। এই অবস্থায় যদি কংগ্রেসের ভাবাবেগ এবং সাধারণ মানুষের ‘মন বদলাতে’ হয়, গান্ধীজি ছাড়া গতি নেই। সামাজিক ভেদাভেদ, আর্থিক বৈষম্য, অস্পৃশ্যতা, ধনবণ্টনের বিভাজন দূর করাই ছিল মহাত্মা গান্ধীর জীবনের ব্রত। তিনি বলেছিলেন, কোনও সভ্য সরকারের প্রধান লক্ষ্য হবে বৈষম্যহীন সমাজ ও দেশ গঠন। তাহলেই প্রকৃত ঐক্য আসবে। গান্ধীজির ঐক্যের প্রসঙ্গে এই মাপকাঠিগুলি নিয়ে কিন্তু একটিও বাক্য খরচ করেননি মোদি। অথচ, মহাত্মাকে সামনে রেখে‌ই কার্যত অভিন্ন দেওয়ানি বিধি এবং ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশনের মতো সঙ্ঘ-নির্দেশিত এজেন্ডার প্রচার চালিয়েছেন। এই ‘ভাবনা’ রূপায়ণকে ভবিষ্যৎ সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেছেন। আর তাই এতকাল যা ছিল জল্পনা এবং সংশয়, দীপাবলির দিন তাতেই সিলমোহর দিলেন। গুজরাতে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৪৯তম জন্মজয়ন্তী পালনের একঝাঁক প্রকল্পের পাশাপাশি আনুষ্ঠানিকভাবেই ঩যেন ঘোষণা করে দিলেন ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন এবং অভিন্ন দেওয়ানি বিধির। বল্লভভাই প্যাটেলের পাহাড়প্রমাণ মূর্তির নাম ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’। সেই মূর্তির নীচেই আয়োজিত অনুষ্ঠানে মোদি ইউনিটি অর্থাৎ একতাকেই তাঁর ভাষণের ধ্রুবপদ তথা অভিমুখ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তবে তাঁর কাছে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য ঘোচা, বেকারত্ব এবং কর্মপ্রাপ্তদের বিভাজন দূর করার নাম ঐক্য নয়। তাঁর কাছে ঐক্য মানে, পুরনো ভারতকে বদলে দিয়ে মোদির ভারত নির্মাণ। তাই ১৯৫১ সাল থেকে চালু থাকা ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন ১৯৬৭ সালে স্বাভাবিক রাজনৈতিক সমীকরণের উত্থান পতনের জেরে বিঘ্নিত ও ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও আবার সেই পথেই দেশকে ঠেলে দিতে চাইছেন। তাকেই মোদি ঐক্য ভাবছেন। একইভাবে উত্তর-পূর্ব ভারত তথা আদিবাসীদের আচার ও ধর্মীয় সংস্কৃতিকে যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির আওতায় আনা যাবে না, সেকথা জানা সত্ত্বেও সম্ভাব্য অভিন্ন দেওয়ানি আইনকে ঐক্যের প্রতীক আখ্যা দিতে চাইছেন তিনি। 
গান্ধীজি অবশ্য বলে যাননি এই সব ঐক্যের কথা। সঙ্ঘ বলেছে। 
সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৪৯তম জন্মজয়ন্তী। স্ট্যাচু অব ইউনিটিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন প্রধানমন্ত্রীর। -পিটিআই
কলকাতা
রাজ্য
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.৬১ টাকা৮৪.৭০ টাকা
পাউন্ড১০৭.৫২ টাকা১১০.৪৫ টাকা
ইউরো৮৯.৯৯ টাকা৯২.৬৯ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা