৩ জুলাই, জন্মদিনের দিনটায় শুভাকাঙ্ক্ষীদের বলেছিলেন, ‘ভালোবাসলে অন্য কিছু নয়, গাছের চারা দিও!’ দিল্লি এইমস-এর চিকিৎসক ও সংক্রামকবিদ্যায় ডিএম ফাইনাল ইয়ার ডাঃ সায়ন মহারত্নের হাত ধরে প্রায় অসাধ্যসাধন চলল পুরুলিয়ায়। জেলার একাধিক স্কুল, অসংখ্য স্থানীয় ক্লাব, কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আর একেবারেই গাছপাগল স্থানীয় মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সায়ন তৈরি করেছেন ‘গ্রিন ভলেন্টিয়ার’দের দল। তাঁরা জুলাইয়ে বনমহোৎসবের সাতদিনে ১২ হাজার গাছের চারা লাগালেন রঘুনাথপুর, বড়বাজার, ঝালদা, পুঞ্চাসহ ২০টি ব্লকেই। চারার যত্ন নেওয়া, ঠিক আছে কি না খেয়াল করা ছাড়াও, কতটা বড় হল, ছবি তুলে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আপডেটও দিচ্ছেন রজত গরাই, ধরমবীর প্রামাণিক, শ্যামল মাহাতো, তরুণ মাহাতো, নরেন হাঁসদা, অমরেশ মাহাতো, স্মরজিৎ মাহাতোরা। এইসব বৃক্ষসেবীর কেউ শিক্ষকতা করেন, কেউ কোচিং-এ পড়ান, কেউ সদ্য সরকারি চাকরি পেয়েছেন, কেউ আবার পড়াশোনা করছেন। একই উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়েছিল স্বাস্থ্যবন্ধু মানভূম, ইচ্ছাপূরণ মানভূম গ্রন্থাগার সোসাইটি, মানভূম সংস্কৃতি রক্ষা সমিতি প্রমুখ সংগঠনও।
উৎসাহীরা ১৪-২১ জুলাই, সপ্তাহব্যাপী বন মহোৎসবের আগে থেকেই চারা পাওয়ার আবেদন করতে থাকেন বনবিভাগে। জমা পড়ে ৭০-৮০টি দরখাস্ত। ৫, ১০টা থেকে শুরু করে হাজার, দুই হাজার চারাও সংগ্রহ করে ভলেন্টিয়ারের দল। গ্যাঁটের পয়সা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে সেই চারা ব্লকে ব্লকে পাঠানো হয়। হাতে পেতেই স্কুল, বাড়ির আশপাশের অতি উৎসাহীরা রাস্তার দু’ধারেও লাগিয়ে ফেলেন। প্রাথমিক স্কুলগুলির কাঁচাদের উৎসাহও ছিল চোখে পড়ার মতো। অর্জুন, শিশু, গামার, মেহগনি, করঞ্জ, মহুল, শিমল, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, আমলকী, বকুল প্রভৃতি দেশীয় গাছ ছাড়াও আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা প্রভৃতি ফলগাছও লাগানো হয়।
ডাঃ মহারত্ন বলেন, ‘প্রশাসনের প্রচুর সহযোগিতা পেয়েছি। খুব ইচ্ছা, গ্রিন ভলান্টিয়াররা যেন সারা বছর এমন উদ্যোগে সামিল থাকে।’ পুরুলিয়ার ডিএফও (এক্সটেনশন ফরেস্টি) সুজিত দাস বলেন, ‘বনমহোৎসবের সাতদিনে ৫ লক্ষ চারা দেওয়া হয়েছে জেলায়। ওঁরাও প্রচুর চারা পেয়েছেন। হেঁটে, সাইকেলে, বাইকে যে যেভাবে পেরেছেন, নিয়ে গিয়েছেন। ভালো উদ্যোগ।’ রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, ‘পরিবেশো ক্রমেই পাল্টে যাচ্ছে। এমন একটা পরিস্থিতিতে এটি খুব ভালো উদ্যোগ।’
লিখেছেন বিশ্বজিৎ দাস