উকিল ও ডাক্তারদের কর্মব্যস্ততা বাড়বে। পত্নী/পতির স্বাস্থ্য আকস্মিক ভোগাতে পারে। মানসিক অস্থিরভাব। ... বিশদ
আর কয়েকদিন বাদেই ছাত্র-ছাত্রীরা জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসতে চলেছে, তা নিয়ে কমবেশি টেনশনে রয়েছে সকলেই। সেইসঙ্গে তাদের অভিভাবকরাও। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, সিবিএসসি, আইসিএসসি, আইএসসি—একেক জন একেকটি পরীক্ষায় বসার শেষ প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে। প্রস্তুতি কেমন হয়েছে তার উপরেই নির্ভর করবে পরীক্ষা কেমন হবে, সেটা।
প্রথমেই একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে। এই মুহূর্তে প্রস্তুতি মোটামুটি হয়ে যাওয়ার কথা, সেইজন্য আমার কী কী হয়নি সেটার ব্যাপারে বেশি না ভাবাই ভালো। বা আগামী দিনে আমার পরীক্ষার ফলাফল কেমন হবে, তার উপরে আমার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে ইত্যাদি ভাবনাগুলো একদম মন থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। কেননা যত বেশি এই আশঙ্কাগুলো মাথায় কিলবিল করবে, তত বেশি টেনশন, উত্তেজনা বাড়বে। এবং এর ফলে দেখা যায় যে পরীক্ষার যতটুকু প্রিপারেশন হয়েছে সেই পারফরম্যান্সটাও পরীক্ষার খাতায় আসবে না।
আমরা সবসময় বলি যে, একটু উত্তেজনা বা উদ্বেগ ভালো। সেটা আমাদের পড়াশোনাকে মনে রাখতে সাহায্য করে। বা ওই যে খুব সামান্য টেনশন বা উত্তেজনার ফলে আমাদের একটা সতর্কভাব থাকে, মস্তিষ্কের সেই সতর্কভাবটা দরকার হয়। কেননা এটা হওয়ার ফলে হয় কী, অন্যান্য যে ডিস্ট্রাকশন যা আমাদের মনকে বিক্ষিপ্ত করে সেগুলো অনেকটা দূরে সরে যায়। কিন্তু সেই সামান্য উদ্বেগটা পেরিয়ে গিয়ে যদি অতিরিক্ত ভাবা হয় যে পরীক্ষা কেমন হবে, আমি সব পারব তো বা এটার উপরেই আগামী দিনে আমার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে! তাহলে এটা এমন মাত্রায় পৌঁছতে পারে যার ফলে শরীর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেটাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে ‘সিমপ্যাথেটিক ওভারড্রাইভ’। এর ফলে বুক ধড়ফড় করতে পারে, পেটের গণ্ডগোল হতে পারে, রাতে ঘুম কম আসতে পারে। পরীক্ষার প্রস্তুতি কম্প্রোমাইজড হতে পারে।
সুতরাং আমাদের সবসময় খেয়াল রাখতে হবে যতটা সম্ভব রিলাক্স থাকা যায়। অথচ পরীক্ষার কথাটা মাথায় রাখব, তবে চাপমুক্ত থাকব। সেইজন্য খুব জরুরি হল একটা হাতেকলমে স্ট্রাকচার বানিয়ে ফেলা। আর কতদিন পরীক্ষার সময় বাকি আছে, এই বাকি সময়ের মধ্যে রিভিশনটা কীভাবে দেব। এবং এই রিভিশনের মধ্যে খুব ভালো হয় যদি যে যে বিষয়গুলোয় আমার একটু কম প্রস্তুতি হয়েছে তারজন্য এই ক’দিনে একটু বেশি সময় রাখা। আর যেগুলোতে আমার মোটামুটি ভালো প্রস্তুতি হয়েছে সেগুলোর জন্য অপেক্ষাকৃত কম সময় রাখা।
টানা ২ ঘণ্টা বা ৩ ঘণ্টা পড়ার পর খানিকক্ষণের ব্রেক নিয়ে ওই পয়েন্টগুলো ভাবার চেষ্টা করা। এর ফলে হয় কী যে যে জিনিসগুলো পড়লাম সেগুলো কতটা আত্মস্থ হল তা বোঝা যায়। যে যে পয়েন্টগুলো মিস হয়ে যাচ্ছে সেগুলোর জন্য একটা হোয়াইট বোর্ড ব্যবহার করা যেতে পারে। হোয়াইট বোর্ডে পয়েন্টগুলো লিখে রাখতে পারলে ভালো হয়।
দিনের শেষে রাতের বেলা শুতে যাওয়ার আগে দেখা যাবে ৩ ঘণ্টার একটা স্লটের পরে যে ১৫ মিনিট আমি চোখ বন্ধ করে রিফ্লেকশন করছি যেটা পড়লাম, সেটাতে বেশ কয়েকটা পয়েন্ট জড়ো হয়েছে। সেই পয়েন্টগুলোকে রাত্রিবেলায় শুতে যাওয়ার আগে আর একবার যে হোয়াইট বোর্ডে কালো বা লাল স্কেচপেনে লেখা আছে, ওগুলোয় একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া। এটা দেখে যদি ধীরে ধীরে ঘুমানোর চেষ্টা করা যায় তাহলে কিন্তু অনেক বেশি মনে বা স্মৃতিতে থেকে যাওয়ার কথা।
এর সঙ্গে সঙ্গে খুব জরুরি যেটা সেটা হচ্ছে অল্প করে হলেও একটু ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ করা। কারণ শরীর ফিট না থাকলে মুশকিল। অনেকেরই বিছানায় বসে পড়ার অভ্যাস। যদি চেয়ারে বসেও পড়ে সেখানেও শিঁরদাড়া সোজা করে সবসময় বসা হয় না। ফলে হজমের গণ্ডগোল হয়। আমার যেহেতু শারীরিক প্রস্তুতি কম তার ফলে শরীর ও মস্তিষ্কের মধ্যে যে সংযোগ রয়েছে সেই জায়গাটা বিঘ্নিত হতে পারে। দেখা গিয়েছে যত আমি নিজেকে শারীরিকভাবে ফিট রাখব, তত আমার মস্তিষ্ক ফিট থাকে। সুতরাং কিছুক্ষণের জন্য হলেও হয় স্কিপিং বা জগিং অন্তত ৫-১০ মিনিট করলেও উপকার পাওয়া যাবে। তবে এটা কিন্তু প্রতিদিনই করতে হবে। এর পাশাপাশি যেটা জরুরি, অল্প করে হলেও মন বসানোর জন্য রাত্রে শুতে যাওয়ার আগে মেডিটেশন করা।
কেউ কেউ রাতে পড়তে পছন্দ করে, কেউ আবার পছন্দ করে দিনে পড়তে। এখন এই শেষ সময়ে আর শিডিউলটাকে পরিবর্তন করে কোনও লাভ নেই। যে রাতের বেলা পড়া পছন্দ করে বা করে এসেছে, তাদের জন্য সারা রাত যেমনভাবে তুমি পড়ছ সেটা করেও কিন্তু মাথায় রাখতে হবে তোমার পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। সঠিকমাত্রায় ঘুম না হলে যতটুকু পড়া হয়েছে সেটাও কিন্তু মনে রাখতে অসুবিধা হবে। কাজেই রাতে পড়লেও দিনে অন্তত পাঁচ-ছ ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তা না হলে যতই রাত জেগে পড়, লাভের লাভ কিছু হবে না। ঠিক একইভাবে সকালে উঠে অনেকের ঝিমুনি আসে। ঝিমুনি এলে সেইসময় ওই ১০-১৫ মিনিটের ব্যায়ামটুকু করে নিলে ওইসব ছোটখাট আলস্যগুলো কমে যায়।
এর সঙ্গে সঙ্গে খুব জরুরি হাইড্রেশন মেনটেন করা। আমাদের মস্তিষ্ক সবসময় অতিরিক্ত ডিহাইড্রেটেড অবস্থায় খুব ভালো কাজ করতে পারে না। সেইজন্য অনেকসময় পড়তে পড়তে আমরা জল খেতে ভুলে যাই, সেটা কিন্তু ঠিক নয়। তাই জলের সঙ্গে সঙ্গে ফলের রসে যদি চুমুক দেওয়া যায় তবে প্রয়োজনীয় এনার্জিও সংগ্রহ করা যাবে।
পরীক্ষার্থীদের আর একটা সমস্যা দেখা যায়। মনে হয় যা পড়ছি সবই যেন ভুলে যাচ্ছি। এরজন্য পড়ুয়ারা যে মনে করার প্রবল চেষ্টা করে, সেটা পরীক্ষার ৭ দিন আগে থেকে বন্ধ করতে হবে। এটা যত বেশি করবে তত মনে না পড়ার সমস্যাটা বেশি হয়ে দেখা দেবে। কারণ আমরা যা পড়ি তার ৩০ শতাংশ এমনিতেই ভুলে যাই। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। সুতরাং সেইসময় যদি আরও বেশি করে মনে করার চেষ্টা করি, তাহলে নিজেকেই আরও বেশি করে উদ্বিগ্ন করে তুলব। তাহলে আরও বেশি করে এগজাম ফোবিয়ায় আক্রান্ত হব। অনেকেরই এই সমস্যা হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে সেটা আবার মারাত্মক রকমের বড় আকার ধারণ করে। এমনকী অনেককে ডাক্তারের কাছেও নিয়ে যেতে হয়।
পরীক্ষার ৭ দিন আগে রুটিনটা হবে এরকম—যেভাবে পরীক্ষার সূচি এসেছে আমি শুধু সেই অনুযায়ী রিভিশন দিয়ে যাব। আর পড়ার পরে চোখ বন্ধ করে পয়েন্টগুলো ভাবার চেষ্টা করব। সেগুলো হোয়াইট বোর্ডে লিখে রেখে রাতের বেলা শুতে যাওয়ার আগে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া। যে যে জিনিসগুলো একেবারেই পড়া হয়নি, সেই জায়গাগুলো পড়ার জন্য প্রচুর লম্ফঝম্প করে খুব একটা লাভ হবে না। কেননা অধিকাংশরই পড়া এতদিনে হয়ে গিয়েছে। এখন রিভিশনের টাইম। সেই রিভিশন যত স্কিলফুলি করা যাবে তত বেশি পড়া মনে থাকবে।