শ্লেষ্মা ও বাতজ রোগ বৃদ্ধিতে কাজকর্মে ব্যাঘাত। গৃহাদি নির্মাণ বা সংস্কারে শত্রুর বাধা। ধর্মে মতি। ... বিশদ
এসব শুনে বাড়ি গেলাম। দাদাকে বলতেই দাদা বললেন, কীসের অপারেশন! কী এমন হল যে অপারেশন লাগবে? চল দেখি। বলে তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে নাম সম্ভবত ডাঃ সদাশিব চট্টোপাধ্যায় (ভট্টাচার্যও হতে পারে)। তা, তিনি আমাকে দেখলেন। প্রথমেই আমার চোখ দেখলেন, নাড়ি টিপলেন। নিদান দিলেন, মোটেই অ্যাপেনডিসাইটিস হয়নি আপনার। হয়েছে আদতে জন্ডিস!
বললেন, ‘সোজা বাড়ি যাও, চুপ করে শুয়ে রেস্ট নেবে। বিশ্রামই এর ওষুধ।’ এভাবেই এক চিকিৎসকের ভুল সিদ্ধান্ত থেকে আমাকে বাঁচিয়েছিলেন আর এক চিকিৎসকই।
সেই জন্ডিস নিয়েই ভর্তি হয়েছিলাম হাসপাতালে। দেখেছি এমন একদল চিকিৎসককে, যাঁদের উপস্থিতিতেই রোগী অনেক সুস্থ বোধ করেন। আবার কেউ কেউ আছেন, যাঁরা রোগীর প্রতি অল্পেই বিরক্ত হন। দুর্ব্যবহার করেন। তবে ভালো-খারাপ সব পেশাতেই আছে। চিকিৎসা দুনিয়াও তার ব্যতিক্রম নয়।
করোনোর সময় আমাকে এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে থাকতে হয় দিন দশেক। সেখানে দেখেছিলাম,কী অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন চিকিৎসকরা। ব্যক্তি নির্বিশেষ ভালো ব্যবহার করছেন। মনে পড়ে যাচ্ছিল বনফুল, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা। চিকিৎসকদের জীবন নিয়ে বাংলা সাহিত্যের সেরা উপন্যাসগুলি লিখেছেন। ‘আরোগ্য নিকেতন’, ‘হাটে বাজারে’ এসবের কথা কী ভোলা যায়! বনফুল নিজেই তো চিকিৎসক ছিলেন। তাই উপন্যাসে এই জীবন সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছিলেন। আজও সরকারি হাসপাতালে ২ টাকা দিলে চিকিৎসার সুপরিষেবা পাওয়া যায়। কত গরিব মানুষ এখানকার চিকিৎসায় বেঁচে আছেন, সুস্থ আছেন। সে তো এই চিকিৎসকদের জন্যই!
আসলে চিকিৎসা পেশাটিই এমন, যাতে ধীরে ধীরে মানুষ সেবাপরায়ণ হয়ে ওঠে। তাই এই পেশা বরাবর সব পেশার থেকে আলাদা। এখন রোগী-চিকিৎসকের সম্পর্ক প্রায়ই তলানিতে ঠেকেছে দেখি। তাতে অবশ্য দু’পক্ষেরই দোষ আছে। কিছু রোগী ও পরিজন চিকিৎসকের উপর ভরসা করেন না। তাঁকে সন্দেহের চোখে দেখেন। আবার কিছু চিকিৎসকও খুব মোটা অঙ্কের ফিজ নেন, সেটাও আবার ক্যাশে। হাতে রোগী রাখেন। আবার একই সঙ্গে এখনও কম টাকায় বা ন্যায্য ফি নিয়ে দুর্দান্ত ডাক্তারি করা চিকিৎসকও রয়েছেন। দিনের শেষে ডাক্তাররাও মানুষ। তাঁদেরও আবেগ আছে। আনন্দ-ক্ষোভ আছে। এসব যেন আমরা ভুলে না যাই।