বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
ছোট্ট বন্ধুরা, ভালো আছ তো? ছুটির ভিড়ে একটু বুঝি ক্লান্ত? কতদিন হয়ে গেল স্কুলে যাওয়া হয় না। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা নেই, গল্প করার সুযোগ নেই, নেই টিফিন পিরিয়ড। একঘেয়ে অনলাইন ক্লাসের চাপে এবার কি অধৈর্য লাগছে? তাহলে আজ একটা অন্যরকম আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করা যাক তোমাদের সঙ্গে। এখন তো প্রায় সকলের স্কুলেই গরমের ছুটি চলছে। তা এই ফাঁকে একটা নেশায় মাতলে কেমন হয়? ধরো রান্নার কিছু সহজ রেসিপি আয়ত্তে এনে ফেললে ছুটির মরশুমে? কত মজাই না হবে বলো? এমন কিছু রান্না তোমাদের শেখাব যেখানে উনুন জ্বালানোর ব্যাপার নেই। কাটাকুটির ঝঞ্ঝাট নেই। তবে তার আগে এক খুদে শেফের গল্প বলি শোন। শেফ কোবের গল্প। বয়স তার মাত্র দুই। আর এই বয়সেই সে রান্নায় বেশ পটু হয়ে উঠেছে!
খুদে শেফের কথা
কোবে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে স্কটল্যান্ডে থাকে। বাবার একটা অরগানিক সব্জির বাগান আছে। রোজ সকালে মায়ের সঙ্গে সেই সব্জি বাগান থেকে রান্নার জন্য নিত্যনতুন সব্জি তোলে কোবে। তারপর রান্নাঘরে এসে বড় একটা গামলায় গরম জল নিয়ে সব্জি ধুয়ে দেয় মায়ের হাতে হাতে। এরপর সব্জিগুলো একে ওপরের থেকে আলাদা করে। ইতিমধ্যে মায়েরও রান্নার মশলার জোগাড় করা হয়ে যায়। তখন গল্প করতে করতে মায়ের হাতে হাতে মশলাগুলো তুলে দেয় কোবে। প্রতিটি মশলা নাকি সে স্বাদ অনুযায়ী চেনে! এইভাবেই বড় হয়ে উঠছে খুদে শেফ কোবে।
খেলতে খেলতে রান্না
তোমরাও যদি খুদে শেফ হয়ে উঠতে চাও তাহলে কী করবে সে বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলাম বিখ্যাত শেফ সঞ্জীব কাপুরকে। তিনি বললেন, রান্নায় মজা পেতে গেলে নাকি রান্নার সরঞ্জাম নিয়ে খেলতে শিখতে হবে। কেমন সেই খেলা? শেফ জানালেন, রান্নার এটা সেটা মিলিয়ে মিশিয়ে দেখতে হবে, চাখতে হবে। কোনটার সঙ্গে কোনটা মেশালে খেতে ভালো লাগছে তা বুঝতে হবে। এভাবেই নাকি তোমরা এক একজন খুদে শেফ হয়ে উঠতে পারবে। এটা সেটা মেশানোর খেলাটা ঠিক কীরকম জানতে চাইলে শেফ একটা সহজ রেসিপি দিলেন। শিখবে নাকি রান্নাটা?
তিন রঙা স্যান্ডউইচ
উপকরণ: তিন টুকরো পাউরুটি, মেয়নিজ ৬ বড় চামচ, গাজর ১/২টা, পুদিনা পাতা ৫-৬টা।
প্রণালী: প্রথমে পাউরুটির ধারগুলো কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলো। এবার পাউরুটি কোনাকুনি কেটে নাও। তারপর গাজরটা গ্রেটার দিয়ে কুরিয়ে নিয়ে মিক্সিতে একবার ঘুরিয়ে একটু পেস্ট বানিয়ে নাও। চাইলে মায়ের সাহায্য নিতে পারো। একটা বাটিতে ২ চামচ মেয়নিজ নাও। তার সঙ্গে গাজরের পেস্ট মিশিয়ে নাও, চামচ দিয়ে খুব ভালো করে মেশালে দেখবে মেয়নিজে কমলা রং ধরে যাবে। এবার একটা পাউরুটির টুকরোর ওপরে, নীচে এই পেস্ট মাখিয়ে নাও। বেশ মোটা করে লাগিও যেন পাউরুটির টুকরোটা কমলা রঙের মনে হয়। এবার পুদিনা পাতাগুলো মিক্সিতে বেটে নাও। তারপর আরও ২ চামচ মেয়নিজের সঙ্গে তা মিশিয়ে নিলেই দেখবে মেয়নিজে সবুজ রং ধরেছে। এবার পাউরুটির অন্য একটা টুকরো নিয়ে তাতে পুরু করে এই সবুজ মেয়নিজ লাগিয়ে নাও। বাকি ২ চামচ মেয়নিজ সাদাই রেখে সেটা আরেক টুকরো পাউরুটিতে পুরু করে মাখিয়ে নাও। তিনটে পাউরুটি তিন রঙে সাজিয়ে নিয়েছ তো। এবার একটা প্লেটে প্রথমে কমলা পাউরুটির টুকরোটা সাজাও, তারপর সাদা পাউরুটির টুকরোটা রাখো। আর সবার ওপর সবুজ পাউরুটির টুকরো সাজিয়ে দাও। ইচ্ছে হলে ওপরে একটু চিজ কুরিয়ে ছড়াতে পারো, না হলেও চলবে। তিন রঙা স্যান্ডউইচ তৈরি। এবার খেয়ে বলো কেমন লাগল?
কুকিতে নতুনত্ব
আচ্ছা তোমরা সবাই কুকি খেতে ভালোবাসো তো? তাহলে আর এক বিখ্যাত শেফের দেওয়া একটা সহজ কুকির রেসিপি শেখাব তোমাদের। তবে তার আগে একটা ছোট্ট গল্প বলি। শেফ গর্ডন মুখে শুনেছিলাম এই গল্পটা। ওঁর ছোট মেয়েকে আপেল খাওয়ানোর জন্য এই রেসিপিটা মাথা থেকে বার করেছিলেন তিনি। বললেন, আপেল দিয়ে কুকি না তৈরি করলে নাকি ছোট মেয়ে তা খাবে না বলে বায়না করল। তখন শেফ এক অভিনব কুকি তৈরির ফন্দি আঁটেন। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল সেই কুকি শেফের চার বছরের কন্যা নিজে বানিয়ে তবেই মুখে তুলেছিল। সহজ রেসিপিটা শেফ তোমাদেরও জানিয়েছেন। দেখ ভালো লাগে কি না।
অ্যাপেল কুকি
উপকরণ: আপেল ১টা, চকোলেট স্যস ৪ বড় চামচ, আমন্ড কুচি ২ বড় চামচ, আখরোট কুচি ২ বড় চামচ, নারকেল কোরা ২ বড় চামচ, চিনি অল্প।
প্রণালী: আপেলটা পাতলা গোল চাকা চাকা করে কেটে নিতে হবে। মাকে বললেই তিনি কেটে দেবেন। এবার একটা বাটিতে চকোলেট স্যস নিয়ে তার সঙ্গে ১ চামচ জল গুলে নিতে হবে। এরপর এই স্যসটা আপেলের চাকার ওপর সমানভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। তার ওপর আমন্ড আর আখরোট কুচি একে একে ছড়াতে হবে। সব শেষে চিনির দানা ছড়িয়ে দিলেই অ্যাপেল কুকি তৈরি। এরপর চটপট তা চেখে দেখে নাও স্বাদ ঠিক আছে কি না।
পুষ্টিকর স্মুদি
শেফ সঞ্জীব কাপুর বললেন, ফল বা দুধ আলাদা আলাদা ভাবে খেতে দিলে অনেক বাচ্চাই তা খেতে চায় না। কিন্তু দুটো যদি একসঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া যায় তাহলে কিন্তু তা এক নিশ্বাসে খেয়ে নেয় তারা। তাই তোমাদের জন্য তিন নম্বর রেসিপিটা খেজুরের স্মুদি। একই সঙ্গে তা সুস্বাদু আবার পুষ্টিকরও বটে। চলো শিখে নিই রান্নার নিয়মটা।
ডেট স্মুদি
উপকরণ: দানা বাদ দেওয়া খেজুর আধ কাপ, দুধ ১ কাপ, চিনি মেশানো দই আধ কাপ, দারচিনির গুঁড়ো অল্প।
প্রণালী: এই রেসিপিটার জন্য একটা মিক্সি লাগবে। সব উপকরণ একে একে মিক্সির বাটিতে ভরে ঢাকা শক্ত করে আটকে দিতে হবে। তারপর নিজে পারলে তো ভালোই, নাহলে মাকে বলো মিক্সি চালিয়ে দিতে। বেশ কিছুক্ষণ মিক্সিতে উপকরণগুলো ঘোরালে দেখবে বেশ ফেনা ফেনা ভাব আসবে। তখন তা গ্লাসে ঢেলে দিলেই ব্যাস, ডেট স্মুদি রেডি। এবার ঢকঢক করে খেয়ে ফেললেই কেল্লা ফতে।
বিস্কিট নাকি কেক?
শেফ এই রেসিপিটা বানিয়েছিলেন তাঁর ছেলের জন্য। বাচ্চাটা ভীষণ বিস্কিট খেতে ভালোবাসত। তাই বলে মুঠো মুঠো বিস্কিট কি আর খেতে দেওয়া যায় বাচ্চাকে? মোটেও না। এদিকে বারণ করলেও কেলেঙ্কারি। বাচ্চা একেবারে কেঁদেকেটে একশা। অগত্যা একটা নতুন ধরনের কেকের রেসিপি বার করলেন শেফ মাথা খাটিয়ে। আজ ওঁর কাছে শোনা সেই রেসিপিটাই শেখাব তোমাদের।
বিস্কিট কেক
উপকরণ: মেরি বিস্কিট বা যে কোনও চকোলেট বিস্কিট ১০টা, দুধ আধ কাপ, চিনি ৫-৬ বড় চামচ, মাখন ২ বড় চামচ।
প্রণালী: একটা মিক্সিতে দিয়ে বিস্কিটগুলো গুঁড়ো করে নাও। নিজে না পারলে বাড়ির বড়দের সাহায্য নিতে পারো। একটা বড় বাটিতে বিস্কুটের গুঁড়ো ঢালো। তাতে দুধ, চিনি, মাখন মিশিয়ে একটা কাঁটা চামচ দিয়ে গুলে নাও। অনেকক্ষণ ধরে গুলবে যাতে সব উপকরণ ঠিকমতো মিশে যায়। এবার মাকে বলো একটা বাকিং ডিশে অল্প মাখন বুলিয়ে দিতে। তারপর এই মিশ্রণ সেই ডিশে ঢেলে দাও। এবার তা ডিপ ফ্রিজে ঢুকিয়ে ২৫ মিনিট রাখো। এবার ডিপ ফ্রিজ থেকে নামিয়ে নীচের ফ্রিজে নিয়ে এসো। সেখানে একঘণ্টা রেখে কেক সেট করে নাও। তারপর তা ফ্রিজ থেকে বার করে ঠান্ডাই পরিবেশন করো।
ফলে ফলে পাউরুটি
এটা একটা নতুনত্বই বটে, জানালেন শেফ সঞ্জীব কাপুর। একদিকে ফলের মিষ্টত্ব অন্যদিকে পাউরুটি। আর সব চেয়ে মজার কথা বানানো এত সহজ যে বাচ্চারা অনায়াসেই পারবে। তা কেমন সেই পদ? প্রশ্ন করলে শেফ বললেন সহজ রেসিপিটা শিখিয়েই দেবেন তোমাদের। এই দেখ কেমন করে বানাতে হয় এই স্যান্ডউইচ।
পাইনাপেল স্যান্ডউইচ
উপকরণ: পাউরুটি ৬ স্লাইস, ক্যানে করা আনারসের স্লাইস ৩টে, মাখন ৩ বড় চামচ, পাইনাপেল ক্রাশ ৩ বড় চামচ, বিটনুন স্বাদমতো।
প্রণালী: কাঁচি দিয়ে পাউরুটির ধারগুলো কেটে ফেল। এবার তাতে মাখন মাখিয়ে নাও। তারপর পাইনাপেল ক্রাশ চামচে করে নিয়ে মাখাও। তারপর সামান্য বিটনুন ছড়িয়ে দাও। এবার পাউরুটিতে ক্যানে ভরা আনারসের স্লাইস সাজাও। ওপর থেকে আর একটা পাউরুটি দিয়ে চাপা দাও। এই স্যান্ডউইচ ফ্রিজে আধ ঘণ্টা রেখে দিলে সব উপকরণ সেট হয়ে যাবে। তখন তা বার করে পরিবেশন করো।
রান্নায় পটীয়সী
একটা নয়, দুটো নয়, পাঁচ পাঁচটা রান্না শিখে ফেললে তো। তাহলে আর দেরি কীসের? রান্না করে বাবা-মাকে তাক লাগিয়ে দাও।