কর্মে সাফল্য ও সুনাম বৃদ্ধি। উকিল, মৃৎশিল্পীদের শুভ। সংক্রমণ থেকে শারীরিক অসুস্থতা হতে পারে। আর্থিক ... বিশদ
বঁড়শি দরজা খুলে সরে দাঁড়াল। বিষণ্ণ গলায় বলল, ‘এসেছ, ভেতরে যাও, দেখো গিয়ে উনি কী নাটকটাই না করছেন!’
সহজ অন্ধকারাচ্ছন্ন সরু করিডরটা পেরিয়ে বিশাল ঘরটায় ঢুকল। ওর পিছন পিছন এল বঁড়শি। ঘরের ভেতরে আবছা অন্ধকার। বেশ কিছুক্ষণ আগে সন্ধে হয়ে গিয়েছে। হাসপাতাল থেকে বাইক চালিয়ে সোজা এখানে এসেছে সহজ। বাইরের পৃথিবী এখন আলো ঝলমলে, অথচ এই ঘরের ভেতর যেন অহেতুক অন্ধকার জমে। যদিও ঘরের মাঝবরাবর একটা লালচে ডুম ঝুলছে। সেই লালচে আলো যেন অন্ধকারের থেকেও ভয়ঙ্কর!
সহজ দেখল ঘরের কোণে বালির বেদীর কাছে বাবু হয়ে বসে আছেন ক্যাপ্টেন। তাঁর পাশে একটা প্রদীপ জ্বলছে। বঁড়শি বলল, ‘দেখুন কে এসেছে?’ ক্যাপ্টেন পিছন ঘুরে তাকালেন না, যেমন বসে ছিলেন তেমনই বসে থাকলেন।
বঁড়শি বলল, ‘সহজ এসেছে, সহজ।’
মানুষটার কোনও হেলদোল নেই। শক্ত হয়ে বসে আছেন। সহজ এবার একটু এগিয়ে গেল। সামনে গিয়ে দেখল বালির ওপর করোটি মানে পিশাচ আর হাড় দুটো! ঠিক তার সামনে প্রদীপ জ্বলছে। সহজ বলল, ‘আমার একটা দরকার ছিল। আমাকে পরমেশ্বরদা পাঠিয়েছে, আপনাকে ক’টা জরুরি কথা বলার জন্য।’
ক্যাপ্টেন একটুও নড়লেন না। যেন পাথর! কোনও কিছু দেখার ইচ্ছে না হলে চোখ বন্ধ করে রাখলেই হয়। কিন্তু কান বন্ধ করে রাখা যায় না। ইচ্ছে করলে যা শোনাবার তা শুনিয়ে দেওয়া যায়। সহজ আরও একটু এগিয়ে গেল। উনি না শুনলেও সহজ আজ শুনিয়ে যাবে। বলল, ‘আপনাকে আমার কথা শুনতেই হবে— আজ আপনাকে শোনানোর জন্যই আমি এসেছি—।’
বঁড়শি বিদ্রূপ ভরা গলায় বলল, ‘ওঁকে বোবায় ধরেছে। গত কাল থেকে এমনটি করছেন। তুমি জিজ্ঞেস করো তো কোথায় গিয়েছিলেন? কোনও উত্তর নেই। এসে ঠিক ছিলেন। হঠাৎ বলছেন, এই ঘরে চোর ঢুকেছে? ওঁর জিনিস চুরি হয়েছে। কিন্তু কী চুরি হয়েছে বলতে পারছেন না।’
বঁড়শি এক নাগাড়ে কথাগুলো ছুড়ল। সে পায়ে পায়ে এগিয়ে এসে সহজের পাশে দাঁড়িয়েছে। বঁড়শি বলল, ‘সারাদিন আমি এই খাঁচায় ঢুকে আছি। কে আসবে এখানে? আর কী এমন মূল্যবান জিনিস আছে যে চুরি করে নিয়ে যাবে?’
সহজ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে। হাসপাতালে এসেছিল পরমেশ্বর। আজ ভোরেই সে ফিরেছে। পরমেশ্বরের মাথায় একটা কথা ঢুকে গিয়েছে, দুটো ছেলের জীবন নিয়ে গেম খেলেছে ক্যাপ্টেন। নাগাড়ে একটা কথা পরমেশ্বর বলে যাচ্ছে, নচের কিছু হলে আমি ক্যাপ্টেনকে ছাড়ব না। অনেক হয়েছে, এবার ওকে থামতে হবে। ওকে বল, এখান থেকে চলে যেতে। নাহলে মার্ডার হয়ে যাবে। ওর ভাগ্যলিখন আমি করে দিচ্ছি। পাক্কা। সহজ দু-একবার বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, পরমেশ্বর কঠিন গলায় বলল, আমাকে বোঝাতে আসিস না। ওকে গিয়ে বোঝা, বাড়ি বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যাক, এখানে থাকলে যে কোনওদিন ওর লাশ পড়ে যাবে। যা, তুই গিয়ে বোঝা, আমার হাতের সামনে থেকে সরে যাক। আমি ওকে মেরে হাত নোংরা করতে চাই না।
একজন এসে খবর দিল, ডাক্তারবাবু ভেতরে ডাকছে। সবাই হুড়মুড় করে সেদিকে দৌড়াল। গোরা ধপ করে একটা জায়গায় বসে পড়ল, ডাক্তার ডাকছে মানে, নচে নেই। পরমেশ্বর ঠোঁট কামড়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। কিছুক্ষণ পরেই ছুটতে ছুটতে অমল এল, বলল, একটা গুড নিউজ আছে। ডাক্তারবাবু বললেন—এই যাত্রায় মালটা বেঁচে যাবে। ওষুধে কাজ দিচ্ছে।
পরমেশ্বর হাত রাখল সহজের কাঁধে। ওর চোখে মুখে স্বস্তি। সহজ বলল, ‘তাহলে চিন্তামুক্ত!’
নচের বউ আর মেয়ে এল। আরতি বলল— ডাক্তারবাবু বাড়ির কথা, সংসারের কথা, ওর চাকরির কথা জিজ্ঞেস করছিল। বলল, কেন বিষ খেল? আমি আর কী বলব, বললাম, ওর মাথায় ঢুকেছে— অপঘাতে মরবে। ডাক্তারবাবু বলল, তা বললে হয়, কে মাথায় ঢুকিয়েছে? উনি লিখে দিয়েছেন, কাল সকালে ওকে আইসিইউ থেকে জেনারেল বেডে দিয়ে দেবে।
আরতি থামে। হঠাৎ নচের মেয়ে বলে, ‘পরমেশ্বর আঙ্কেল—বাবার এই ব্যাপারটা কি পুলিস কেস হবে? আবার থানা পুলিস হলে বাবা নির্ঘাত হার্ট ফেল করবে!’
‘ওসব তোদের ভাবতে হবে না। কাল জেনারেল বেড। হয়তো আর দু-একদিন রেখে ছেড়ে দেবে। কাল সকালে এসে কী হল, না হল আমাকে ফোন করবি।’
ওরা ঘাড় নেড়ে সরে গেল। পরমেশ্বর বলল, ‘নচেকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ওর এই ভয় কাটাতে হবে। একটা সাহসী ছেলে সামান্য একটা কথায় কী করে এমন দুমড়ে গেল! ব্যাপারটা মজা বা ইয়ার্কিই থাকত, কিন্তু কথাটা কী করে নচে এত সিরিয়াস নিল, আমি ভেবে পাচ্ছি না। আমি শুনেছি, ও ক্যাপ্টেনের কথাটা খণ্ডন করার জন্য ওর বাড়িতেও গিয়েছিল। ক্যাপ্টেনকে দিয়ে বলাতে চেষ্টা করেছিল, ব্যাপারটা মজা। কিন্তু ক্যাপ্টেন নাকি গোঁ ধরে বলে গিয়েছে—তোর অপঘাত আছে। আর বেশিদিন নেই, টাইম খতম, কোটা কমপ্লিট।
‘এসব কথা তো আমি জানি না।’
‘এসব শুনে ও দৌড়ে এসেছিল। সেদিন আমি বাড়িতে ছিলাম। ছটফট করছিল, বাচ্চাদের মতো কাঁদছিল। ও ক্যাপ্টেনের বাড়ি যাওয়ার কথা বলে, ক্যাপ্টেনের অপঘাতের তত্ত্বটা আওড়ে চলে। আমি সেদিন রাতেই বাইরে চলে যাব। ওকে বলি, চিন্তা করিস না, আমি এসে ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা বলব? তোর সঙ্গে কেন এমন মজা করছে জিজ্ঞেস করব। ও সেদিন বলল— না, না ক্যাপ্টেন মজা করছে না। ক্যাপ্টেন দেখতে পেয়েছে। ও ক্যাপ্টেনের কাছে কেন গিয়েছিল জানিস— ও জানতে চেয়েছিল, কে ওকে মারতে পারে? কান-কাটা মণি, না খোকন? তাহলে নচে ওদেরকেই আগে মারবে। আমি ওকে থামাই। বলে দিই, পার্টি ঝামেলায় আছে, কোনওরকম কোনও গোলমাল করবি না। ক্যাপ্টেনের বয়স হয়েছে, আর আগের সেই পাওয়ার নেই। যা বলছে সব ফলস হচ্ছে। কিন্তু ওর মাথার পোকাটা ক্যাপ্টেন নড়িয়ে দিয়েছিল। প্রথম সুজি, তারপর নচে। না, আর ওকে সহ্য করা যাচ্ছে না। তুই গিয়ে বলে দে আমার কথা— বলে দে চুপচাপ এলাকা ছেড়ে চলে যেতে। নইলে মার্ডার হয়ে যাবে।’
সহজ এসেছিল সে কথাই বলতে।
বঁড়শি বলল, ‘উনি ভাবছেন, উনি যখন না থাকেন, তখন আমি বাড়িতে লোক ঢোকাই। লোক ঢুকিয়ে ওঁর গুপ্তবিদ্যা চুরি করাই।’
সহজ বলল, ‘গুপ্তবিদ্যা!’
‘হ্যাঁ, উনি তাই চোর ধরতে আসনে বসেছেন। ওই আসনটা তো পঞ্চমুণ্ডীর আসন। উনি কাল থেকে ঠায় এখানে বসে আছেন। চোর উনি ধরবেন, চোরের নাম জেনে তবে এই আসন-ছাড়া হবেন। কিন্তু কী চুরি গিয়েছে বলতে পারছেন না।’
এমন সময় সহজের ফোন বেজে ওঠে। বর্ণিনী। সহজ কেটে দিল। আবার ফোন করল। ফোন কেটে দিলে সাধারণত বর্ণিনী আর ফোন করে না। জানে, সহজ ঠিক রিংব্যাক করবে। কিন্তু আজ আবার ফোন করছে বর্ণিনী। কেন? নিশ্চয়ই কোনও জরুরি দরকার আছে। সহজ একটু সরে এল।
—বল।
—তুই কি হসপিটালে?
—গিয়েছিলাম, এখন চলে এসেছি।
—খুব জরুরি একটা ইনফরমেশন দেওয়ার জন্য তোকে ফোন করছি। কীভাবে যে তোকে বলি? শোন, বঁড়শির অনুমান একদম ঠিক। যে সাতটি আশ্রম ও মানুষের নাম সেদিন ওঁর নোটবই থেকে ছবি তুলেছিলাম, তার সবগুলোই রহস্যময়। ঠিক ওই দিনগুলোতে ওই আশ্রমে ওই সাধুরা মারা যান। আর কারও মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। মানে, তারিখ—মৃতমানুষ—অস্বাভাবিকতা। রহস্য একটা আছেই। এটা এক নম্বর। নম্বর টু— সাফি। সেই গাঁজা খাওয়ার, কলকের যে সাতটা কাপড় নিয়ে এসেছিলাম, ওই সব কাপড় থেকেই মারাত্মক পয়জন পাওয়া গিয়েছে। দেশজ, কিন্তু এক ধরনের তীব্র বিষ। আরও ভালো করে দেখার জন্য কাপড়গুলো বেঙ্গালুরুর টেস্টিং সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। বাবা আমাকে খুব চাপ দিচ্ছে— বিষয়টা কী জানতে চেয়ে। আমি কিছু বলিনি। বাবা আরও নিশ্চিত বিষয়টা খুন, তার কারণ, ছ’জনের ঠিকানা তাঁদের নিজেদের আশ্রম। কেন না তাঁরা নিজেদের আশ্রমে মারা গিয়েছেন। কিন্তু একজনের নামের পাশে অন্য জায়গা লেখা। সেটা তাঁর আশ্রম নয়, কিন্তু সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’ বর্ণিনী থামল। বলল, ‘ব্যাপারটা গোলমেলে। বাবা নিশ্চিত এগুলো সব খুন। আমার একবার বঁড়শির সঙ্গে কথা বলতে পারলে ভালো হতো। ওর অনুমান একদম কারেক্ট। শুধু ওর বাবা কেন— উনি সাত-সাতজন সাধু বল, তান্ত্রিক বল, কাপালিক বল, তাঁদের মেরেছেন। ওই ক্যাপ্টেন সত্যি সত্যি পিশাচ। কাল সকালে কি বঁড়শির সঙ্গে দেখা করা যায়? ওকে আমি ফোন করব?’
‘না। আমি বেরিয়ে তোকে ফোন করছি।’
‘ঠিক আছে।’ বর্ণিনী ফোন কেটে দিল।
সহজ এসে ঘরের একধারে বসল। ভীষণ সতর্ক সে। তার সামনের লোকটা সাত-সাতটি খুন করে এমন নিশ্চিন্তে পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে আছে! সহজ নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল। বলল, ‘ক্যাপ্টেন আমার সঙ্গে কথা বলবেন না? ঠিক আছে, ওক্কে! আমি কিন্তু নিজে আসিনি। আমাকে যে পাঠিয়েছে তার নাম পরমেশ্বর।’ কথাটা বলে সহজ একটু থামল। বলল, ‘নচে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। তবে হ্যাঁ, আপনার কথা মতো নচে মারা যাচ্ছে না। অপঘাতে ওর মৃত্যু নেই। ও বেঁচে গিয়েছে। কিন্তু আপনি এলাকায় থাকলে ও হয়তো আর বেঁচে থাকবে না। ও আবার ঘুরে ফিরে আপনার কাছে আসবে। নচে একাধিকবার আপনার কাছে এসেছে। ওর মনে হয়েছিল, আপনি বললে ও বেঁচে যাবে। কিন্তু প্রতিবারই আপনি ওকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন।’
‘এবার নিজেকে দিচ্ছেন।’ সহজের কথা কেড়ে কথা ঝলসে উঠল বঁড়শি। ‘ওঁর কোন মহার্ঘ বস্তু চুরি গিয়েছে, উনি খোলসা করে বলছেন না। শুধু সাপের মতো ঠুকে ঠুকে উনি বিষ ঝাড়ছেন।’
সহজ স্থির চোখে বঁড়শির দিকে তাকাল। ক্যাপ্টেনের যা হারিয়েছে তা বঁড়শি নিজের হাতে ওদের তুলে দিয়েছে। যার প্রথমটির নাম বিশ্বাস। এতদিনের একটা নিপাট সাধু-মানুষের যে আলখাল্লা ছিল ক্যাপ্টেনের গায়ে, সেই আলখাল্লাটা হারিয়েছে। দ্বিতীয়টির নাম তথ্য। ক্যাপ্টেনের নোটবই খুলে সেই তথ্যভাণ্ডার বঁড়শি তাদের দিয়েছে। যেখানে পর পর লিপিবদ্ধ আছে যাবতীয় সন্দেহ। লেখা আছে পর পর সেই সাধু-অসাধু, তান্ত্রিক-কাপালিকদের নাম। যেখানে যার মৃত্যু হয়েছে সেই আশ্রমের নাম ও মৃত্যুদিন। আর তৃতীয় যেটি চুরি হয়েছে তার নাম— প্রমাণ। ওই গাঁজার কলকের মুখের কাপড়—সাফি। সাত-সাতটা। সাতজন খুন, সাতটা সাফি।
বঁড়শি বলল, ‘উনি বিষ, বিষ বলে চিৎকার করছেন। ওঁর ধারণা আমি ওকে বিষ দিয়ে মারব। আবার উনিই বলছেন—কোনও বিষই ওঁকে মারতে পারবে না। সব বিষ উনি হজম করে নেবেন। উনি নাকি রোজই বিষ খান! কী আশ্চর্য কথা বলো তো?’
সহজ বলল, ‘হ্যাঁ উনি আশ্চর্য সব কথা বলেন। আর সেইসব কথার জন্য ভুগতে হয় অন্য লোককে। কিন্তু এবার ওঁকে থামতে হবে। পর পর দু’জনের জীবন উনি বিষিয়ে দিয়েছেন। সুজিদা আর নচে। সুজিদার পিতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন। স্পষ্ট বলে দিলেন— কোকিলের ছানা মানুষ হবে কাকের বাসায়। ফলে, সুজিদার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী নিজের মাথায় কলঙ্কের বোঝা নিয়ে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছেন। আর নচেকে উনি অন্তত পঁচিশ বছর ধরে চেনেন। হঠাৎ উনি বলতে শুরু করলেন নচে অপঘাতে মরবে। সেই কথার জের টেনে নচে হাসপাতালে মৃত্যুমুখে! পরমেশ্বরদা আপনার ওপর প্রচণ্ড রেগে। আপনাকে এসব ভবিষ্যদ্বাণী বন্ধ করতে হবে। আমি জানি আপনি পারবেন না। সেক্ষেত্রে বলব, কিছুদিনের জন্য আপনি এলাকা ছেড়ে চলে যান। অন্য কোথাও গিয়ে থাকুন। দীর্ঘদিনের সঙ্গী দু-দুজনকে হারিয়ে পরমেশ্বরদা খেপে আছে। আমি চাই না পরমেশ্বরদা আপনাকে অপমান করুক। হেনস্তা করুক। প্লিজ চলে যান। নাহলে আমি ওর যা রূপ দেখলাম, আপনাকে ছাড়বে না।’
‘কী করবে আমার!’ মৌনতা ভেঙে কথা বলে উঠল ক্যাপ্টেন, ‘তুই যা! যা এখান থেকে পরমেশ্বরের পোষা কুত্তা! ও যদি এখানে পা রাখে ওর সর্বনাশ হবে। ওর এত সাহস! গর্জন করছে! ওকে বলিস ওর নিজের এলাকায় ঘেউ ঘেউ করতে। তুই যা, তুই আর আসবি না এখানে। আর একটা কথা শোন, আমি বিষ খেয়ে বিষ হজম করতে পারি। আমি বিষ খেয়ে কী ভাবে হজম করতে হয় দেখিয়ে দেব।’
সহজ হাসল, ‘আমি জানতাম, আপনি শুনবেন না আমার কথা। আমি বলছি, আপনি অন্য কোথাও চলে যান। এবার আপনাকে আমি ভবিষ্যদ্বাণী করছি— বিপদ আপনার শিয়রে। আজ না হোক কাল শাস্তি আপনি পাবেন। পরমেশ্বর না দিলে আইন দেবে।’
হা হা করে হেসে ওঠে ক্যাপ্টেন। ‘শোন আমি পিশাচ। আমি পিশাচবৃত্তি করি। পিশাচক্রিয়া করি। আমার লয় নেই। ক্ষয় নেই। আমার সব পাপ। যার সব পাপ হয়, যে পাপের ঘটি জলে ডুবিয়ে স্নান করে, তার শাস্তি হয় না। এই যে দেখছিস, এই করোটি! এই পিশাচ! এর দু’বাহু! আমি একে জাগাব। একে জাগিয়ে— আমি বিষ খাব। খেয়ে তোদের দেখিয়ে দেব—কীভাবে আমি উদ্ধার পাই। যা, যা, পালা এখান থেকে। পারলে এই মেয়েটাকেও সঙ্গে নিয়ে যা।’
বঁড়শি ঠিকরে উঠল, ‘আমি একাই চলে যেতে পারব, আমার জন্যে চিন্তা করবেন না। শুধু তার আগে দেখি— আপনি কত বড় মাতব্বর—বিষ খেয়ে বিষ হজম করুন। আমি দেখে নিই, কত বড় সাধক হয়েছেন আপনি? তবে আমি যাবার আগে নোড়া দিয়ে আপনার পিশাচের মুণ্ডু ভেঙে রেখে যাব।’
‘মরবি! মরবি! তোরা সব মরবি!’
সহজ বেরিয়ে এল ঘর থেকে। ওর সঙ্গে এল বঁড়শি। সহজ বলল, ‘তোমার অনুমান ঠিক। উনি সাতজনকে বিষ দিয়েই খুন করেছেন বলেই আমাদের বিশ্বাস। গাঁজার কলকের কাপডে বিষ পাওয়া গিয়েছে। তোমার এখানে থাকা আর নিরাপদ নয়। তুমি যেতে চাইলে আমার সঙ্গে এখুনি যেতে পার।’
‘আমি জানতাম। আমার জন্য ভেব না, আগে ওর শেষ দেখি! তার আগে আমি সহজে যাব না, আর গেলে দুই পিশাচেরই মাথা ভেঙে যাব।’