Bartaman Patrika
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
 

অশান্ত স্মৃতি
সোভিয়েত পতনের ৩০ বছর

মৃণালকান্তি দাস: দড়ি ধরে মারো টান, লেনিন হবে খানখান! এগারো ফুট উঁচু লাল গ্রানাইটের মূর্তিটা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তেই উল্লাসে ফেটে পড়েছিল জনতা। কেউ আনন্দে হাততালি দিয়েছেন, তো কেউ আবার প্রাণখুলে গেয়েছেন জাতীয় সঙ্গীত। সেদিন চতুর্দিক ছেয়ে গিয়েছিল নীল-হলুদ পতাকায়। রাশিয়ার ঠিক পাশে, ছোট্ট দেশ ইউক্রেনের পতাকার রং যে এটাই। এই দেশ যখন অবিভক্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল, সেই সময় (১৯৪৬) শেভচেঙ্কো বুলেভার্ডে বসেছিল লেনিনের এই বিশাল মূর্তি। আর ২০১৩-র ৯ ডিসেম্বর, হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় ভারী হাতুড়ি, গাঁইতি, দড়ি নিয়ে লেনিনকে টলাতে যাঁরা জড়ো হয়েছিলেন, তাঁরা বেশির ভাগই নবীন প্রজন্মের। তাঁদের মুখেও ছিল বিপ্লবের ডাক। লেনিন তথা রুশ প্রভাবকে উৎখাত করার বিপ্লব। সারা শরীর জাতীয় পতাকায় মোড়া ২২ বছরের এক যুবক চিৎকার করে উঠেছিলেন, ‘দেশটা রাশিয়ার হাতের পুতুল হোক, বরদাস্ত করতে পারব না।’ সেদিন ‘গুড বাই লেনিন’ ছবির মতো লেনিনের ভাঙা মূর্তি কোনও হেলিকপ্টার তুলে নিয়ে গিয়েছিল কি না, তা আর জানা যায়নি।
সোভিয়েত অঙ্গরাজ্যগুলির মধ্যে লিথুয়ানিয়া প্রথমে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এবং সেটা ১৯৯০ সালেই। ১৯৯১-এর জানুয়ারিতে লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির বিশেষ কম্যান্ডো পাঠানো হয়। সেখানকার টেলিভিশন টাওয়ারে কেজিবির অভিযানে ১৪ জন মানুষ প্রাণ হারান। তা সত্ত্বেও লিথুয়ানিয়াকে সোভিয়েত ইউনিয়নে ফেরানো যায়নি। সোভিয়েতের পতন অবশ্যই একটি যুগের অন্ত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগনের কথায়, ‘ইভিল এম্পায়ার’ (শয়তানের সাম্রাজ্য)-এর পতন, সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাঁচলেন।
রেগনের কাছে সোভিয়েত মানেই ছিল ‘শয়তানের সাম্রাজ্য’। কমিউনিস্টদের ক্ষেত্রে মার্কিন নীতি ছিল ‘দেতঁত’, অর্থাৎ প্রতিপক্ষের সঙ্গে চলনসই সম্পর্ক। রেগন বলেছিলেন, ‘রোলব্যাক’ অর্থাৎ প্রতিপক্ষের উপর প্রবল চাপসৃষ্টি। লাভ হয়েছিল। ‘স্ট্র্যাটেজিক ডিফেন্স ইনিশিয়েটিভ’ সম্পর্কে সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট গর্বাচভের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জেরাসিমভের মন্তব্য, ‘খুব সফল ব্ল্যাকমেল। এমন প্রতিযোগিতায় দাঁড়ানোর ক্ষমতা ছিল না সোভিয়েত অর্থনীতির।’
গত শতাব্দীর আটের দশকের কথা।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ সম্পর্কে ঠাট্টা চালু ছিল, ‘ইউ ডাই উই ফ্লাই’। রোনাল্ড রেগনের সহকারী হিসেবে যাবতীয় রাষ্ট্রীয় শেষকৃত্যে হাজির থাকতেন বুশ। ওই সময়ে তিন সোভিয়েত নেতার মৃত্যুর পর রাশিয়া পৌঁছন তিনি। নেহাতই আনুষ্ঠানিক। তবে ভিত গড়ার কাজ শুরু সেখানেই। ‘শত্রু’ সোভিয়েত শিবিরে ধস নামল যখন, বুশ সেই সময়ে নিজেই প্রেসিডেন্ট। ভেঙে পড়ল বার্লিন প্রাচীর, পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েত সাধারণতন্ত্র, অবশেষে আস্ত ইউনিয়নটাই। এই পর্বে শেষ সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচভের সঙ্গে বুশের বন্ধুত্বের ভূমিকাটি জরুরি।
১৯৮৯-এর ডিসেম্বর মাসে সোভিয়েত ক্রুজ ‘ম্যাক্সিম গোর্কি’-তে মুখোমুখি হয়েছিলেন বুশ-গর্বাচভ। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রেন্ট স্কোক্রফ্টের মত ছিল না বৈঠকে। তিনি বলেছিলেন ‘প্রিম্যাচিয়োর’। তবু ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরঁ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার ও মার্কিন কংগ্রেসের কিছু সদস্যের কথায় গর্বাচভের সঙ্গে দেখা করলেন বুশ। চুক্তি সই হল না, কিন্তু গর্বাচভ জানিয়ে দিলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টকে আমি আশ্বাস দিয়েছি, সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের বিরুদ্ধে আর উষ্ণ যুদ্ধ শুরু করবে না।’ এই আশ্বাসকে সঙ্গী করেই শেষ হয়ে যায় ঠান্ডা যুদ্ধ। ‘অর্ধশতকের অবিশ্বাস মুছে ফেলতে এই পদক্ষেপ দরকার ছিল,’ বলেছিলেন বুশ।
ইতিহাস সাক্ষী, ১৯৮৫ সালের মার্চে মিখাইল গর্বাচভ যখন দায়িত্ব নেন, তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের ভিতরে, বা বাইরে কেউ কল্পনা করতে পারেননি যে, ছ’বছরের মধ্যেই বিশাল রাষ্ট্র বিলুপ্ত হবে। ১৯৭০ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ধীরে ধীরে বাড়ছিল। এতে সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনীতি অপ্রত্যাশিতভাবে চাঙা হয়ে ওঠে। ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের বৈদেশিক মুদ্রার ৮০ শতাংশ আয় হয় তেল রপ্তানি থেকে। তেলের দাম বাড়ার ফলে তেল রপ্তানিকারক আরব দেশগুলোর প্রচুর লাভ হয়, সেই লাভের টাকায় তারা সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম কেনা বাড়িয়ে দেয়। এই সুবাদে সোভিয়েত ইউনিয়নও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আমেরিকার সমকক্ষ হয়ে ওঠে। গর্বাচভের দুর্ভাগ্য, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর তেলের দাম আবার কমতে শুরু করে। ১৯৮৬ সালে কমে যায় ৬৯ শতাংশ। তেল কেনাবেচার মুদ্রা মার্কিন ডলারের দামও পড়ে যায়। এর মধ্যে ওই বছরই ঘটে চেরনোবিল দুর্ঘটনা, যার অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল বিপুল।
অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের শিল্পকারখানাগুলো সেকেলে ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল। বিশেষত বিশালাকার যেসব শিল্প তিনের দশকে গড়ে তোলা হয়েছিল। ফলে সেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ভীষণভাবে কমে গিয়েছিল। এ রকম অবস্থায় গর্বাচভ দেখলেন, অস্ত্র প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার মতো অর্থনৈতিক সাধ্য সোভিয়েত ইউনিয়নের আর নেই। এবার থামাতে হবে। তাঁর বিদেশনীতির গোড়ার কথা ছিল এটাই। এ জন্য তাঁকে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটানোর উদ্যোগ নিতে হয়েছে। সেটা আন্তরিকভাবে করতে গিয়ে তিনি যে, শেষ পর্যন্ত ধোঁকা খেয়েছেন, তা সেই সময় বুঝতে পারেননি। বুঝেছেন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার অনেক বছর পর। এখন তিনি বলেন, ‘আনি আবমানুলি নাস’। যার অর্থ, ‘ওরা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।’
গর্বাচভ জমানায় যে কমিউনিস্ট পার্টি কার্যত সবকিছু চালাত, তার প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিল এককেন্দ্রিক। পার্টির ভিতরে গণতান্ত্রিক চর্চা ছিল না। ব্যাপক ও বিস্তৃত দুর্নীতি পার্টির জন্য হয়ে উঠেছিল একটা দুরারোগ্য ব্যাধি। পার্টির নেতাদের অধিকাংশই জনগণ থেকে একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। সেই অবস্থার সঙ্গে আমাদের এ রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকারের অন্তিম লগ্নের অনেকটাই মিল খুঁজে পাবেন।
গর্বাচভ অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়নের উপযোগী প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার অভাব দূর করতে চেয়েছিলেন রাজনৈতিক সংস্কারের (পেরেস্ত্রোইকা) মাধ্যমে। সে জন্য তিনি এসে বললেন, পার্টির মধ্যে গণতন্ত্র দরকার। গণতন্ত্রের চর্চা হলেই সমাজতন্ত্র আরও বিকশিত হবে। তাঁর পেরেস্ত্রোইকার প্রথম স্লোগান ছিল, ‘আরও গণতন্ত্র, আরও সমাজতন্ত্র’। তিনি পেরেস্ত্রোইকার আগে শুরু করেন ‘গ্লাসনস্ত’ (কথা বলার স্বাধীনতা)। সোভিয়েত ইউনিয়নের জনসাধারণ গ্লাসনস্তের জন্য উন্মুখ হয়ে ছিল। তারা মুক্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। যেন বিশাল এক বাঁধ ভেঙে গেল। সোভিয়েত সংবাদমাধ্যম, বিশেষ করে সংবাদপত্র ও টেলিভিশন এমন প্রাণবন্ত হয়ে উঠল, যেমনটা এর আগে কখনও ঘটেনি। সবাই যখন নির্ভয়ে কথা বলার ও লেখার সুযোগ পেল, তখন যে বিষয়টা প্রকট হয়ে উঠল তা হল, অতীতের সমালোচনা। অতীতের অর্জনের চেয়ে বড় হয়ে উঠল ভুল ও ব্যর্থতাগুলো। ‘র‍্যাডিক্যাল ডেমোক্র্যাটরা’ চূড়ান্তবাদী হয়ে উঠলেন, তাঁরা বলে উঠলেন, ভুল নয়, ব্যর্থতা নয়, সেগুলো ছিল ‘অপরাধ’। স্তালিনকে তাঁরা আখ্যায়িত করতে লাগলেন ‘প্রিস্তুপনিক’ (ক্রিমিনাল) বলে।
সংস্কারের ঠেলায় সোভিয়েত জনগণ পুঁজিবাদী দুনিয়ার খবর পেতে শুরু করল। টেলিভিশনের পর্দায় তারা দেখতে পেল ইউরোপ-আমেরিকার মানুষ কত ভালো জীবনযাপন করছে। কী চাকচিক্যময় তাদের জীবন। টেলিভিশনে দেখায়, লন্ডনের দোকানগুলোতে ২২ থেকে ৪২ রকমের পাউরুটি বিক্রি হয়। এই সব দেখতে দেখতে সোভিয়েত জনগণ আবিষ্কার করল, তাদের নিজের দেশে দোকানগুলোর তাক ক্রমেই শূন্য হয়ে যাচ্ছে। মাংস, মাখন, পনির কেনার লাইনগুলো দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা তাঁদের জনগণকে সব সময় বলে এসেছেন, সমাজতন্ত্র পুঁজিবাদের চেয়ে ভালো ব্যবস্থা। কিন্তু জনগণ দেখতে পেল, বাস্তবটা উল্টো। এ রকম পরিস্থিতিতে একটা সময় খোদ কমিউনিস্ট পার্টির ভিতরেই এমন একটা গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিল, যারা গর্বাচভের সংস্কারের ‘ধীরগতি’তে সন্তুষ্ট থাকতে পারল না। এই গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে আবির্ভূত হলেন পলিটব্যুরোর অন্যতম সদস্য বরিস ইয়েলৎসিন।
গর্বাচভের প্রত্যাশা মিথ্যে হয়ে গেল। তিনি দেখলেন গ্লাসনস্ত-পেরেস্ত্রোইকার ফলে আমলাতন্ত্রে ও কলকারখানায় ভীষণ বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ছে। ‘কো-অপারেটিভের’ নামে বিরাষ্ট্রীয়করণ প্রক্রিয়া হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুটপাটের উৎসব, যার নেতৃত্বে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির দুর্নীতিবাজ নেতারা। একসময় জনগণ গর্বাচভের ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলল। ফলে ১৯৯০ সালের শেষ নাগাদ পেরেস্ত্রোইকা-গ্লাসনস্ত অকার্যকর হয়ে পড়ল। কমিউনিস্ট পার্টি, সেনাবাহিনী, কেজিবি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনেকে গর্বাচভের পাশ থেকে সরে গেলেন। তাঁদের মধ্যে লিগাচভ ও রিঝকভের মতো প্রভাবশালী নেতাও ছিলেন। গর্বাচভের বিরুদ্ধে এই পক্ষের লোকজনের অভিযোগ ছিল, তিনি কমিউনিস্ট পার্টি ধ্বংস করেছেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের সাধারণতন্ত্রগুলোকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পক্ষে জনমত গড়ে ওঠার সুযোগ দিয়েছেন। পূর্ব ইউরোপকে বিসর্জন দিয়েছেন। মার্কসবাদ-লেনিনবাদের বিলোপ ঘটিয়েছেন। সাঝি উমালাতোভা নামে এক নেতা কংগ্রেসের অধিবেশনে বলেন, ‘মিখাইল গর্বাচভ সোভিয়েত ইউনিয়নের ধ্বংস ডেকে আনতে চলেছেন। পশ্চিমী দুনিয়ার হাততালি পেয়ে ভুলে গিয়েছেন, তিনি কাদের প্রেসিডেন্ট।’ প্রকাশ্য ফোরামে বলাবলি চলতে থাকে, গর্বাচভ যদি দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে না আনেন, তাহলে তাঁকে পদচ্যুত করা হবে। ১৯৯১ সালের প্রথম দিকে মস্কোসহ বিভিন্ন শহরে এমন গুঞ্জন শোনা যায় যে, অচিরেই একটা ‘পিরিভারোত’ (অভ্যুত্থান) হতে চলেছে।
অন্যদিকে ইয়েলৎসিনের জনপ্রিয়তা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বেড়ে চলল। লোকজন ভাবতে শুরু করল, এই লোক তাদের ‘ত্রাণকর্তা’। ১৯৯১ সালের জুন মাসে রুশ সাধারণতন্ত্রের ভোটাররা ইয়েলৎসিনকে তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে। ইয়েলৎসিন ইতিমধ্যে সমাজতন্ত্রের কথা বলা বন্ধ করেছেন, কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন পার্টির অনেক সদস্য। একটা সময়ে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে গণহারে পদত্যাগ শুরু হয়। এর পাশাপাশি প্রচুর সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষক ও অন্যান্য পেশার মানুষ ইয়েলৎসিনের সঙ্গে যোগ দেন। তাঁরা সবাই অতি দ্রুত সোভিয়েত ব্যবস্থার ‘আমূল পরিবর্তন’ চাইছিলেন, কার্যত রাশিয়াকে পুঁজিবাদে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছিলেন।
একদিকে দেশের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার নামে আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার দাবি, অন্যদিকে আরও দ্রুত ও ব্যাপক সংস্কারের নামে বাজারব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাওয়ার দাবি— এই দুইমুখী চাপে গর্বাচভ প্রায় দিশেহারা হয়ে গেলেন। তিনি প্রকাশ্যে কট্টর সংস্কারপন্থী নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করলেন। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে এমন রদবদল আনলেন, যাতে মনে হয়, ক্ষমতা সেই সব লোকের হাতে সংহত করা হল— যাঁরা সংস্কারের বিরোধী। কেউ কেউ বললেন, স্বৈরতান্ত্রিক কট্টরপন্থার দিকে গর্বাচভের ডিগবাজি। তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কমরেডদের একজন— বিদেশমন্ত্রী এদুয়ার্দ শেভার্দনাদজে রেগে গিয়ে পদত্যাগ করে বললেন, ‘স্বৈরতন্ত্র ফিরে আসছে।’ কিন্তু ততদিনে গর্বাচভের সূচিত সংস্কারের রেলগাড়িটা তাঁকে ছেড়ে এগিয়ে গিয়েছে অনেক দূর। সেই গাড়ির চালক তখন বরিস ইয়েলৎসিন।
১৯৯০ সালে রুশ সুপ্রিম সোভিয়েতের চেয়ারম্যান হন বরিস ইয়েলৎসিন। পরের বছর ‘রাশিয়ান সোভিয়েত ফেডারেটিভ সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক’-এর প্রেসিডেন্ট হন তিনি। কিছুদিনের মধ্যে ভেঙে যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। রুশ সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র পরিণত হয় রাশিয়ান ফেডারেশনে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট থেকে যান প্রেসিডেন্টই। প্রশ্ন ওঠে, তবে ইয়েলৎসিনের অবস্থান কী? শাসকের চূড়ামণি!
গুগলে সার্চ করুন রাশিয়ার কোটিপতিদের লিস্ট। বিলিওনিয়ার লিস্টের ৭০ শতাংশ সোভিয়েত আমলের আমলা অথবা কমিউনিস্ট পার্টির উঁচু নেতা। যেমন ধরুন, রাশিয়ার পঞ্চম ধনী ব্যক্তি ভাগিট আলেকপেরভ। উনি সোভিয়েত আমলে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল ছিলেন। এরপরে উনি সোভিয়েতের গ্যাস এবং পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। গেনাডি টিমোশেঙ্কো, সোভিয়েতে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানির ডেপুটি ডিরেক্টর ছিলেন। অর্ডার অব ফাদারল্যান্ড পেয়েছিলেন। সুলেমান কেরিমোভ ডেপুটি ডিরেক্টর ছিলেন আলতাব সংস্থার। এদের হাতেই পুঁজিবাদের ভার তুলে দিয়েছিলেন বরিস ইয়েলৎসিন, পুঁজি হিসেবে আসে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের অর্থ সাহায্য।
সোভিয়েত ইউনিয়ন নামে রাষ্ট্রটি বিলুপ্ত হওয়ার আগে ওই দেশ থেকে বিদায় নিয়েছিল সমাজতন্ত্র। কার্যত এটা ঘটেছিল সংবাদমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা। গ্লাসনস্তের সুযোগে সমাজতন্ত্রবিরোধী প্রচার সোভিয়েত ইউনিয়নের জনগণের বৃহত্তর অংশকে ভীষণভাবে বদলে দিয়েছিল। তাই ১৯৯১ সালের আগস্ট মাসে গর্বাচভ ক্রিমিয়ায় অবকাশ যাপনের সময় কমিউনিস্ট পার্টির কট্টর নেতারা যখন তাঁকে ‘অসুস্থ ও দেশ চালাতে অক্ষম’ ঘোষণা করে অভ্যুত্থান ঘটাতে গেলেন, তখন জনগণ তার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এল। অভ্যুত্থানকারীদের সমর্থন জানাতে তাঁদের পক্ষের কেউ রাস্তায় নামেনি। আসলে সোভিয়েত ইউনিয়নের জনগণ একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন চেয়েছিল, মাঝামাঝি সংস্কারমূলক পদক্ষেপে তারা আর তুষ্ট থাকতে পারছিল না। ১৯১৭ সালেও তারা কেরেনস্কির বহুদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্রে সন্তুষ্ট হতে পারেনি, বৈপ্লবিক পরিবর্তন চেয়েছিল। বলশেভিকদের অক্টোবর বিপ্লব ঘটেছিল সেই কারণেই। উভয় ঘটনায় জয় হয়েছে জনগণের চূড়ান্তবাদী প্রবণতার।
বিনা যুদ্ধে, বিনা রক্তপাতে এমন এক সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ার মতন ঘটনা মানুষের ইতিহাসে কখনও ঘটেনি। কিন্তু সেই ইতিহাসে ১৯৯১ সালে গৃহীত একখানা আস্ত গণভোটের কথা কোথায়? যেখানে পশ্চিমী মতেই মুক্ত ও অবাধ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন বজায় রাখার স্বপক্ষে ভোট দান করেছিলেন ৭৭.৮৫ শতাংশ মানুষ? যে জনমত অগ্রাহ্য করে সোভিয়েত ইউনিয়নকে জনতার নামে বিখণ্ডিত করেছিল ইয়েলৎসিনরা? কোথায় সোভিয়েতের পতনের পর অলিগার্কদের (ধনী) উত্থান, গলা-কাটা পুঁজিবাদ ও মাফিয়ারাজের সূচনার গল্প? কোথায় ১৯৯৩-এর ভোটে ‘কমিউনিস্টদের মুক্ত নির্বাচন’-এ বিপুল জয় ও তারপরে ট্যাঙ্ক নামিয়ে মার্কিন সহায়তায় ‘গণতন্ত্রের রক্ষক’ ‘রাশিয়ার মুক্তিদাতা’ ইয়েলৎসিনের ক্ষমতা ধরে রাখার কাহিনি? ইতিহাসের সেই অধ্যায় আলোচিত হয় না। ১৯৯১ পরবর্তী নব্য-উদারনীতির শক্তি সারা বিশ্বজুড়ে একটি শক্তপোক্ত জালে জড়ানো ভাষ্য রচনা করেছে। সেই ভাষ্যের স্বপক্ষে যা কিছু, তা ‘অথেন্টিক’ বলে গণ্য হয়েছে। আর সেই ভাষ্যের বিপক্ষে যা কিছু তাই ‘প্রোপাগান্ডা’ বলে গৃহীত হয়েছে। আমাদের দেশেও সোভিয়েতের পতনকে ঘিরে যারা উল্লাস করেন, তাঁদের যাবতীয় গল্পের ইতি ’৯১-এ।
বিলুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছিল রাশিয়াসহ পনেরোটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। বেশির ভাগ নতুন দেশের শাসক হন সোভিয়েত আমলের নেতারাই। যেমন হাসান হাসানভ। ১৯৯০ সালে আজারবাইজান সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকের প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। বছর দেড়েক বাদে তৈরি হয় স্বাধীন আজারবাইজান সাধারণতন্ত্র। নতুন দেশে নতুন দলকে নিয়ে নতুন সরকার তৈরি করেন পুরনো হাসানভই! যেমন ইসলম কারিমভ। ১৯৯০ সালে উজবেক সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন তিনি। এর পর সমাজতন্ত্র ছেঁটে ফেলে তৈরি হয়েছে রিপাবলিক অব উজবেকিস্তান। কিন্তু কারিমভ পদে ছিলেন ২০১৬ সালে মৃত্যু পর্যন্ত। যেমন, আনাতোলিস গর্বুনভ্‌স। সোভিয়েত আমলে লাটভিয়ার সুপ্রিম সোভিয়েতের এই চেয়ারম্যান স্বাধীনতার পরেও হলেন সুপ্রিম কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। এককালে যাঁরা ছিলেন সর্বহারার নেতা, তাঁরাই ‘বাজারি’ রাষ্ট্রের প্রধান হন কী করে? আসলে ক্ষমতাই শেষ কথা।
একই অবস্থা বাংলার বামপন্থীদের। টানা ৩৪ বছরের বাম শাসনে ক্ষমতার মোহ, ঔদ্ধত্যের ব্যাধিতে ছিল পতনের সুর। পার্টি এক সময় বশ্যতা আর দক্ষতার তফাৎ করতে ভুলে গিয়েছিল। প্রয়াত অশোক মিত্রের কথায়: তাঁরা তো ধরে নিয়েছিলেন, ‘চিরকাল পশ্চিমবঙ্গে শাসন করে যাব।’ সোজা কথা, সাফল্যে তাঁদের মাথা ঘুরে গিয়েছিল এবং সেটাই মারাত্মক হয়ে দাঁড়াল। আটের দশকের মাঝামাঝি থেকেই দেখা যাচ্ছিল পার্টির মধ্যে নেতারা কেউ কেউ একটু অহঙ্কারে ভুগছেন, চাটুকারদের দ্বারা পরিবৃত হচ্ছেন, চাটুকাররা বাছা বাছা ক্ষমতার জায়গায় পৌঁছচ্ছেন, তাঁরা আবার তাঁদের চাটুকার তৈরি করছেন। এই ভাবে বৃত্তের মধ্যে বৃত্ত তৈরি হল, পুরো দলটায় ঘুণ ধরল। পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন স্তর নিছক বাঙালি জমিদারিতে পরিণত হয়েছিল। ফলে ঠিক যে ভাবে ঝোড়ো হাওয়ার মতো একদিন লেনিনের পার্টি ভেঙে পড়ল তাসের ঘরের মতো এবং ভেঙে পড়ার পর দেখা গেল, গোটা দেশের আমজনতা ওই ব্যবস্থাটা সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছিল। বাংলার বাম শাসনের পতনেও ছিল একই চিত্র। 
একসময় সোভিয়েতে যে কমিউনিস্টরা নেতার আসন অলঙ্কৃত করতেন, তাঁরা আদৌ কমিউনিস্ট নন। তাঁরা ছিলেন শাসক। আর তাই নিজের বাসস্থান হিসেবে জারদের ক্রেমলিন প্রাসাদকেই বেছে নিয়েছিলেন লেনিন। পরে জার আমলের প্রাসাদচূড়ার সোনার ঈগল সরিয়ে উজ্জ্বল তারা বসিয়েছিলেন জোসেফ স্তালিন। জারদের প্রাসাদ ক্রেমলিনই নাকি ছিল সমাজতন্ত্রের ভরসাস্থল। ইতিহাস মানবে কেন? 
১৯৯১ সালে মস্কোর সময় ২৫ ডিসেম্বর সন্ধে ৭টা ৩২ মিনিটে ক্রেমলিন ছাড়েন মিখাইল গর্বাচভ। প্রাসাদশীর্ষ থেকে নামানো হয় কাস্তে-হাতুড়ি মার্কা লাল পতাকা। ওড়ে জারের আমলের সেই ত্রিবর্ণ ঝান্ডা। আজ কাস্তে-হাতুড়ি চিহ্ন আর ‘সিসিসিপি’ লেখাও সরে বসেছে সেই জোড়া মুখো ঈগল। কী বলবেন একে, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
 গ্রাফিক্স : সোমনাথ পাল
 সহযোগিতায় : উজ্জ্বল দাস
18th  July, 2021
বাংলার হারিয়ে যাওয়া নদী

মানব সভ্যতা নদীমাতৃক। অথচ, অনেক ক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে বহু নদী। সভ্যতা বাঁচাতে নদীকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদেরই। তাই ‘বিশ্ব নদী দিবসে’ বাংলার হারিয়ে যাওয়া নদীগুলির সন্ধান করা হল। বিশদ

26th  September, 2021
বাতাসে বিষ কমছে আয়ু
অরিন্দম রায়

ছোটবেলায় স্কুলের বইতে বায়ুদূষণ নিয়ে যা পড়েছিলাম সেই ধারণার একটা পরিবর্তন করা দরকার। আমাদের পাঠ্য বইতে বায়ুদূষণের বেশিরভাগ অংশটাই ছিল সালফার-ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইড কেন্দ্রিক। আমরা পড়েছিলাম, এই দুই গ্যাস কলকারখানা এবং গাড়ির ধোঁয়া থেকে বেরিয়ে অ্যাসিড বৃষ্টির সৃষ্টি করে। বিশদ

19th  September, 2021
অপু-দুর্গার খোঁজে
পুলক চট্টোপাধ্যায়

ছেলেবেলায় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় যখন স্কুল পালিয়ে লুকিয়ে তাঁর বাবার লেখা ‘পশ্চিমের ডায়েরি’ পড়তেন, তখন থেকেই তাঁর মনের মধ্যে একটা কল্পনার পাখি বাসা বেঁধেছিল। এরপর বিভূতিভূষণ কর্মসূত্রে হাজির হলেন শরৎচন্দ্রের স্মৃতি বিজড়িত ভাগলপুরের আদমপুরে উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে। বিশদ

12th  September, 2021
বাঙালির শিক্ষক
সমৃদ্ধ দত্ত

স্কটল্যান্ডের এবর্ডিন থেকে ২৫ বছর বয়সে বহু দূরের একটি শহর কলকাতায় যখন ডেভিড হেয়ার এলেন, তার কিছুকাল আগেই এই প্রদেশটিতে ভয়ঙ্কর এক দুর্ভিক্ষ ঘটে গিয়েছিল। তাঁর বাবা ছিলেন ঘড়ি নির্মাতা। চার পুত্র জোশেফ, আলেকজান্ডার, জন ও ডেভিড কমবেশি ঘড়ি-বিশেষজ্ঞ। বিশদ

05th  September, 2021
পেগাসাস, রাজকন্যা
ও চুপকথা

থ্রি মাস্কেটিয়ার্স— নিভ-সালেভ-ওমরির নামের আদ্যক্ষর মিলিয়ে তৈরি ইজরায়েলের কুখ্যাত গুপ্তচর সংস্থা এনএসও। কেবল উগ্রপন্থী বা পেডোফাইলস (শিশু যৌন নির্যাতনকারী) পাকড়াতে বিভিন্ন দেশের সরকারকেই নাকি পেগাসাস বিক্রি করা হয়। আরবের রাজকুমারী লতিফা, খুন হওয়া সাংবাদিক জামাল খাশোগি বা মরক্কোর ইতিহাসবিদ্‌ মাতি মনজিব—সকলেই তাহলে ছিলেন পেডোফাইলস বা উগ্রপন্থী? আরব-ইজরায়েল সম্পর্ক সাপে-নেউলে। অথচ, পেগাসাস কেনাবেচার সময় বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও মহম্মদ বিন রশিদ প্রাণের বন্ধু। গোটা বিশ্বের নিরাপত্তাই আজ বিপন্ন। ‘জিরো ক্লিকে’ই পেগাসাস ঢুকে পড়েছে কুলীন আইফোনের বাসরঘরে। রোমাঞ্চ উপন্যাসকেও হার মানানো পেগাসাসের কাণ্ডকারখানার তত্ত্বতালাশে কলম ধরলেন মৃন্ময় চন্দ।   বিশদ

29th  August, 2021
অবিস্মরণীয় চিত্রামৃত
শংকর

অনন্তকালের মহামানবদের বাণী প্রচারে অনেক সময় লেগে যায়। কামারপুকুরের গদাধর চট্টোপাধ্যায় তার ব্যতিক্রম নন। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের পাঁচ টাকা মাইনের পূজারী তাঁর অবসর সময়ে ভক্তজনদের কিছু বললেন, একজন স্কুল মাস্টার তা শ্রদ্ধার সঙ্গে শুনে বাড়ি ফিরে এসে নোটবইতে লিপিবদ্ধ করলেন। বিশদ

22nd  August, 2021
সারদা মায়ের 
স্বদেশি সন্তান
সমৃদ্ধ দত্ত

বরিশালের বানবীপাড়ার যোগেন্দ্রনাথ গুহঠাকুরতা ছিলেন স্বদেশপ্রেমী। সুতরাং নিজের কন্যাটিকেও সেভাবেই তিনি শিক্ষা দিয়েছেন। অন্য বালিকাদের সঙ্গে বড় হওয়ার সময় শিশুদের গ্রাম্য খেলাধুলোয় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি, বাবার কাছে মেয়েটি দেশভক্তির আকুলতাও শিখেছিল। যা সেই ছোট থেকেই তার মনের মধ্যে গেঁথে যায়। মেয়ের নাম প্রফুল্লমুখী। বিশদ

15th  August, 2021
অস্তকালের রবি
পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়

বারান্দায় বসে সন্ধ্যার সময় সুনন্দা, সুধাকান্ত ও ক্ষিতিমোহনবাবুর স্ত্রীকে মুখে মুখে বানিয়ে একটা দীর্ঘ গল্প শুনিয়ে তারপরে বাদলা বাতাস ঠান্ডা বোধ হওয়াতে ঘরে গিয়ে কেদারাতে বসেছিলুম, শরীরে কোনো প্রকার কষ্ট বোধ করিনি, অন্তত মনে নেই; কখন মূর্চ্ছা এসে আক্রমণ করল কিছুই জানি নে। 
  বিশদ

08th  August, 2021
ঘড়ির দর্পণে কলকাতা

‘বৈঠকখানায় মেকাবি ক্লাকে টাং টাং টাং করে পাঁচটা বাজলো, সূর্যের উত্তাপের হ্রাস হয়ে আসতে লাগলো। সহরের বাবুরা ফেটিং, সেলফ ড্রাইভিং বগী ও ব্রাউহ্যামে করে অবস্থাগত ফ্রেণ্ড, ভদ্রলোক বা মোসাহেব সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে বেরুলেন; কেউ বাগানে চল্লেন।’— মহাত্মা হুতোম লিখেছেন। 
বিশদ

01st  August, 2021
লোককথায় গাঁথা মহাকাব্য

‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’ কেবল বাঁশবাদির কাহারদের জীবন আখ্যান নয়, এ এক মহাসময়ের সম্পাদ্য। আখ্যানের প্রতিটা বাঁকে মহাকাব্যিক চলন। মানুষের ক্রমে সভ্যতার পথে পা বাড়ানোর ইতিহাসে আগুন আবিষ্কারের আগে থেকেই তার দৃষ্টিশক্তি অন্ধকারেও প্রখর ছিল।
বিশদ

25th  July, 2021
অচেনা তারাশঙ্কর

আমার জীবনে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রভাব এমনই যে, তাঁর স্নেহধন্য হয়ে আজও নিজেকে আমি অতি সৌভাগ্যবান বলে মনে করি। আমার তখন কতই বা বয়স, হাওড়া শ্রীরামকৃষ্ণ শিক্ষালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি।
বিশদ

25th  July, 2021
কথা ও কাহিনিতে
বাংলার রথ
তরুণ চক্রবর্তী

এপার ওপার দু’দিকেই ঘন জঙ্গল আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েকটি জনপদের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে পতিতোদ্ধারিণী গঙ্গা। সেই গঙ্গার নির্জন তীরে পাতায় ছাওয়া এক কুটিরে থাকতেন যে সন্ন্যাসী, হঠাৎই একদিন কোথায় যে উধাও হয়ে গেলেন!কবে কোথা থেকে এসে সেখানে তিনি ডেরা বেঁধেছিলেন, কী তাঁর নাম, তাও তো কেউ জানে না। বিশদ

11th  July, 2021
অচেনা সীমান্তে
অজানা গল্প

সীমান্ত....! দু’দেশের মাঝে কাঁটাতারের বেড়া। আর তার দু’দিকে বাস হাজার হাজার মানুষের। যেখানে কাঁটাতার নেই, সীমান্তের ‘উঠোন’ যেখানে উন্মুক্ত, সেখানে বাস করা যে কী কঠিন, কী যন্ত্রণাদায়ক, তা বোধহয় আমার-আপনার মতো বহু মানুষই জানেন না। বিশদ

04th  July, 2021
আদুর বাদুড়
চালতা বাদুড়

মাম্পস-র‌্যাবিস-নিফা-ইবোলা-হেন্ড্রা-সার্স-মার্স-কোভিড প্রভৃতি মারণ ভাইরাসের সূতিকাগার বাদুড়ের শরীর। অথচ বাদুড়ের টিকিটিও কস্মিনকালে তারা স্পর্শ করতে পারেনি। বাদুড় থেকে মানুষে সরাসরি সংক্রমণের নেই কোনও প্রাক-ইতিহাস। মধ্যবর্তী পোষক উট-ঘোড়া-শিম্পাঞ্জি-শুয়োর-পিপীলিকাভুক থেকেই সংক্রমিত হয়েছে মানুষ। নির্বিচারে অরণ্যনিধন, জীববৈচিত্র্যের সমূল বিনাশই প্রতিটা মহামারীর নেপথ্যের এক এবং অদ্বিতীয় কারণ। মানুষের কি সম্বিত ফিরবে না? সেই অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখি মৃন্ময় চন্দ।   বিশদ

27th  June, 2021
একনজরে
ফার্স্ট সেক্রেটারি স্নেহা দুবের পর রাষ্ট্রসঙ্ঘে কাশ্মীর ইস্যুতে ফের পাকিস্তানকে তীব্র আক্রমণ শানাল ভারত। জম্মু ও কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে — এই দাবিতে ইউএনএইচআরসির ৪৮তম সাধারণ বিতর্ক সভায় সরব হয় পাকিস্তান। ...

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পেতে সরকারি আধিকারিকদের ঘুষ দেওয়া ‘বৈধ’। এমনই ‘সিলমোহর’ দিয়ে বিতর্কে জড়ালেন মধ্যপ্রদেশের বিএসপি বিধায়ক রমাবাঈ পারিহার। শুধু তাই নয়, কত টাকা ...

২০১৬ সালে নবম ও দশম শ্রেণির জন্য ইতিহাসের শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন। ওই বছরেই নেওয়া পরীক্ষার উত্তরপত্রে ভুল থাকার অভিযোগ ওঠে। মামলা ...

মালদহের চাঁচল থানার পুলিস অভিযান চালিয়ে তিন দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিস জানিয়েছে, ধৃতরা হল  সামাদ আলি, মর্তুজা আলি ও সাহেব আলি। ...




আজকের দিনটি কিংবদন্তি গৌতম ( মিত্র )
৯১৬৩৪৯২৬২৫ / ৯৮৩০৭৬৩৮৭৩

ভাগ্য+চেষ্টা= ফল
  • aries
  • taurus
  • gemini
  • cancer
  • leo
  • virgo
  • libra
  • scorpio
  • sagittorius
  • capricorn
  • aquarius
  • pisces
aries

কর্মে সাফল্য ও সুনাম বৃদ্ধি। উকিল, মৃৎশিল্পীদের শুভ। সংক্রমণ থেকে শারীরিক অসুস্থতা হতে পারে। আর্থিক ... বিশদ


ইতিহাসে আজকের দিন

আন্তর্জাতিক কফি দিবস
বিশ্ব হার্ট দিবস
বিশ্ব শিশু অধিকার দিবস

১৭২৫- ভারতের প্রথম ইংরেজ শাসক রবার্ট ক্লাইভের জন্ম
১৮৪১ - ভারতে প্রথম সর্বোচ্চ ফরাসি সম্মান - 'লেজিয়ঁ দনার' এ সম্মানিত বাঙালি উদ্যোগপতি দুর্গাচরণ রক্ষিতের জন্ম
১৮৯২: প্রথম রাতে ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়
১৯২৯: বিবিসি প্রথম পরীক্ষামূলক টিভি সম্প্রচার শুরু করে
১৯৩২: অভিনেতা মেহমুদের জন্ম
১৯৩৫ - ছাপাখানায় প্রথম বাংলা লাইনোটাইপ ব্যবহৃত হয়
১৯৩৯ - ব্রিটেনে পরিচয়পত্র প্রথা চালু হয়
১৯৪২ - স্বাধীনতা সংগ্রামী মাতঙ্গিনী হাজরা শহীদ হন
১৯৭১: ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গে ঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে অন্তত ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু



ক্রয়মূল্য বিক্রয়মূল্য
ডলার ৭২.৯৯ টাকা ৭৪.৭০ টাকা
পাউন্ড ৯৯.৪৫ টাকা ১০২.৯৪ টাকা
ইউরো ৮৪.৭৮ টাকা ৮৭.৮৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
পাকা সোনা (১০ গ্রাম) ৪৬,৮০০ টাকা
গহনা সোনা (১০ (গ্রাম) ৪৪, ৪০০ টাকা
হলমার্ক গহনা (২২ ক্যারেট ১০ গ্রাম) ৪৫,০৫০ টাকা
রূপার বাট (প্রতি কেজি) ৬০,৪০০ টাকা
রূপা খুচরো (প্রতি কেজি) ৬০,৫০০ টাকা
[ মূল্যযুক্ত ৩% জি. এস. টি আলাদা ]

দিন পঞ্জিকা

১২ আশ্বিন ১৪২৮, বুধবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১। অষ্টমী ৩৭/২৭ রাত্রি ৮/৩০। আর্দ্রা নক্ষত্র ৪৪/৪৬ রাত্রি ১১/২৬। সূর্যোদয় ৫/৩০/৫৮, সূর্যাস্ত ৫/২৩/১৪।  অমৃতযোগ দিবা ৬/১৮ মধ্যে পুনঃ ৭/৬ গতে ৭/৫৩ মধ্যে পুনঃ ১০/১৫ গতে ১২/৩৯ মধ্যে। রাত্রি  ৬/১১ গতে ৬/৫৯ মধ্যে পুনঃ ৮/৩৭ গতে ৩/৬ মধ্যে। মাহেন্দ্রযোগ দিবা ৬/১৮ গতে ৭/৬ মধ্যে পুনঃ ১/২৬ গতে ৩/৪৭ মধ্যে। বারবেলা ৮/২৯ গতে ৯/৫৮ মধ্যে পুনঃ ১১/২৮ গতে ১২/৫৭ মধ্যে। কালরাত্রি ২/২৯ গতে ৪/০ মধ্যে। 
১২ আশ্বিন ১৪২৮, বুধবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১। অষ্টমী  অপরাহ্ন ৪/৩৭। আর্দ্রা নক্ষত্র রাত্রি ৯/১৮। সূর্যোদয় ৫/৩১, সূর্যাস্ত ৫/২৫। অমৃতযোগ দিবা ৬/২১ মধ্যে ও ৭/৮ গতে ৭/৫৪ মধ্যে ও ১০/১৪ গতে ১২/৩৩ মধ্যে এবং রাত্রি ৬/১ গতে ৬/৫১ মধ্যে ও ৮/৩০ গতে ৩/৬ মধ্যে। মাহেন্দ্রযোগ  দিবা ৬/২১ গতে ৭/৮ মধ্যে ও ১/১৯ গতে ৩/৩৯ মধ্যে। কালবেলা ৮/২৯ গতে ৯/৫৯ মধ্যে ও ১১/২৮ গতে ১২/৫৭ মধ্যে। কালরাত্রি  ২/২৯ গতে ৪/০ মধ্যে। 
২১ শফর।

ছবি সংবাদ

এই মুহূর্তে
কেন্দ্রীয় বাহিনী বাড়ছে ভবানিপুরে
রাত পোহালেই ভবানিপুরে উপনির্বাচন। তার আগে কেন্দ্র বাহিনী বাড়ানো হচ্ছে ...বিশদ

05:54:46 PM

তৃণমূলে যোগ দিলেন গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী
তৃণমূলে যোগ দিলেন লুইজিনহো। আজ, বুধবার গোয়ার এই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ...বিশদ

04:49:35 PM

ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে চালু হোক বিমান পরিষেবা, আর্জি তালিবানের
ফের চালু করা হোক ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে বিমান পরিষেবা। ...বিশদ

03:02:47 PM

রঘুনাথপুরে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ায় মৃত্যু গবাদি পশুর
গতকাল রাত থেকেই অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ার জের। যার ...বিশদ

02:33:00 PM

মালদহে ব্রাউন সুগার ও এক লক্ষ টাকার জাল নোট সহ গ্রেপ্তার ৩
৩৫১ গ্রাম ব্রাউন সুগার ও এক লক্ষ টাকার জাল নোট ...বিশদ

02:17:37 PM

দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে প্রবল বৃষ্টির জেরে ক্ষতিগ্রস্ত দুর্গাপুজোর মণ্ডপ
দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে নিম্নচাপের জেরে অতিরিক্ত বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ...বিশদ

02:07:46 PM