Bartaman Patrika
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
 

দেশবন্ধু ১৫০
রজত চক্রবর্তী

১৮৯৭। কলকাতা সরগরম। বিশেষ করে শিক্ষিত সমাজে কিছুদিন ধরেই আলোচনা তুঙ্গে। চারিদিকে ছি ছি পড়ে গিয়েছে! ব্রাহ্ম সমাজের মাথারা আলোচনায় বসেছেন। কারণ, বরদানাথ হালদার ও ভুবনমোহন দাশ সমাজের অগ্রগণ্য দুই মানুষ জড়িয়ে গিয়েছেন এই ঘটনায়। বরদানাথ হালদার বিক্রমপুরের নওগাঁ গ্রামের বাসিন্দা আর ভুবনমোহন দাশ কলকাতার। বরদানাথ হালদারের আর্থিক অবস্থা ভালো হলেও ঋণগ্রস্ত ভুবনমোহন দাশের অর্থনৈতিক অবস্থা জর্জরিত। এই দুই ব্রাহ্মের একটা সিদ্ধান্ত নিয়েই কলকাতার বাঙালি শিক্ষিত মানুষজন উত্তেজিত। 
‘বরদানাথ কি পাগল?’
‘যাদের ঘরে খাবার সংস্থান নেই, সেই ঘরে কেউ মেয়ের বিয়ে দেয়!’
‘ঈশ্বর-বিদ্রোহী, নাস্তিক একজনের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে! ছ্যা ছ্যা ছ্যা ছ্যা...’
পরনিন্দা-পরচর্চা আগুনের আগে পৌঁছে যায় পাঁচ কানে। বাসন্তী দেবী মায়ের কাছে বসে চোখের জল সামলাতে পারে না। বাবা জেদ করে কার সঙ্গে বিয়ে দিচ্ছে! নাস্তিক-মাতালের হাতে তুলে দিচ্ছে! বরদানাথ বুঝতে পারলেন মেয়ে ও মেয়ের মায়ের মন— ‘বাসন্তী, তোকে যার হাতে দিচ্ছি, একদিন দেখবি ভারতের এক প্রান্ত থেকে আর-এক প্রান্ত পর্যন্ত তার নাম ধ্বনিত হবে, হয়তো আমি তখন থাকব না, কিন্তু তুই এটা নিশ্চয়ই দেখবি।’
সত্যি দেখেছিলেন বাসন্তী দেবী, জীবনময় একজন দেশের বন্ধুকে নিজের পাশটিতে পেয়ে। দেশবন্ধু। চিত্তরঞ্জন দাশ।
১৮৯৭ সালের ৩ ডিসেম্বর ব্রাহ্ম ধর্মের আচার মেনেই বিয়ে হয়েছিল চিত্তরঞ্জন দাশের সঙ্গে বাসন্তী দেবীর। উদারপন্থী শিক্ষিত ব্রাহ্ম সমাজকেও কিন্তু নিয়মতান্ত্রিকতার জাঁতাকলে পড়ে অযৌক্তিক গোঁড়ামির পথে হাঁটতে হয়েছিল। চিত্তরঞ্জন জীবন দিয়ে বুঝলেন সংস্কারমুক্ত মনের প্রসার ও প্রচার দরকার। উদারমন ও স্বাধীন সমাজ গঠনের জন্য জীবন গড়ার ব্রত নিলেন দারিদ্র্যের সঙ্গে ধুলোমাখা পথে হাঁটতে হাঁটতেই । 
প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাশ করেছিলেন ১৮৯০-এ। সেই বছরেই লন্ডন যান উচ্চশিক্ষার জন্য। ১৮৯৪ সালে ব্যারিস্টার হয়ে ফিরে আসেন। ফিরে দেখলেন ঋণভারে জর্জরিত বাবাকে। লোকের উপকার করতে গিয়ে ঋণভার। সংসারের অসচ্ছলতার বোঝা তুলে নিলেন কাঁধে। শুরু করলেন আইনজীবীর কাজ। সেই সময়ে সাময়িক সিটি কলেজের ল-লেকচারার হিসাবে যোগ দিলেন। সামান্য পারিশ্রমিকের জন্য তখন দেখা গিয়েছে চিত্তরঞ্জন দাশকে মফস্‌স঩লের কোর্টে সওয়াল করতে। হাইকোর্টেও তখন প্রবল সব প্রতিপক্ষ। জায়গা করে উঠতে পারছিলেন না।
১৮৭০ সালের ৫ নভেম্বর জন্মেছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ কলকাতার পটলডাঙা স্ট্রিটে। নিঃশব্দে পেরিয়ে গেল দেশবন্ধুর জন্ম সার্ধশতবর্ষ। মাত্র ২৩-২৪ বছর বয়সে তরুণ চিত্তরঞ্জন কাঁধে তুলে নিয়েছেন সংসারের ভার। পসার তেমন না জমলেও সাহিত্য সৃষ্টি জমেছে মনের কোণে। কবিতা লিখছেন। যাচ্ছেন রবীন্দ্রনাথের জোড়াসাঁকোর ‘খামখেয়ালি’ ক্লাবে। ক্লাবের সভ্য ছিলেন। লিখছেন কবিতা। প্রকাশ হচ্ছে ‘সাহিত্য’, ‘নির্মাল্য’, ‘মানসী’ প্রভৃতি পত্রিকায়। ১৮৯৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘মালঞ্চ’। এই কাব্যগ্রন্থে চিত্তরঞ্জন লিখেছেন ‘ঈশ্বর’ ও ‘বারোবিলাসিনী’ নামে দু’টি ব্যতিক্রমী কবিতা। যে কবিতা দু’টি নিয়েই যত বিতর্ক। জুটেছিল ‘ঈশ্বর বিদ্রোহী’, ‘নাস্তিক’ ও ‘মাতাল’ বিশেষণ । 
***********
‘কুমড়োর ছেঁচকি আরেকটু দিন দেখি বউঠান!’
বাসন্তী দেবী নিজের হাতে খেতে দিচ্ছেন স্বামী চিত্তরঞ্জন দাশ আর ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়কে। ঘোমটা-টা টেনে এক হাতা কুমড়োর ছেঁচকি ব্রহ্মবান্ধবের কাঁসার থালায় দিলেন।
‘এমন চমৎকার রান্না আমি আর খাইনি, আমি ফিরে এসে আবার আপনার হাতের কুমড়োর ছেঁচকি খাব!’ বলেই হেসে উঠলেন মুণ্ডিত মস্তক গেরুয়া পোশাক পরা এক সাধক স্বদেশি পণ্ডিত। ঘোমটার আড়ালে বাসন্তী দেবীর নাকের নোলক লজ্জায় ঝলক দিয়ে উঠল, ‘তা বটেই, দেশমাতা আপনাদের রক্ষা করবে!’
ফিরে আসেননি ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়। সেদিনই গ্রেপ্তার হন কোর্টের সওয়াল জবাবের পরেই। লড়েছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ। গ্রেপ্তারের সময় ব্রহ্মবান্ধব বলেছিলেন চিত্তরঞ্জনকে, ‘আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, ইংরেজের সাধ্য নেই আমাকে জেলে পাঠায়।’ ব্রহ্মবান্ধবকে অসুস্থতার কারণে ক্যাম্পবেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অপারেশন করতে হয়। ধনুষ্টঙ্কার হয়ে মারা যান হাসপাতালেই। 
বলতে গেলে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন চিত্তরঞ্জন। তখনও ওকালতির পসার জমেনি। কারণ, ১৯০৬ সালে দেখা যাচ্ছে চিত্তরঞ্জনকে দেউলিয়া ঘোষণা করে আদালত। অসম্মান নীরবে সহ্য করে একদিকে লড়াই চালাচ্ছেন দারিদ্র্যের সঙ্গে অপরদিকে লড়াই চালাচ্ছেন দেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে। দেশকে স্বাধীন করার লড়াই। তখন বাংলা উত্তাল হয়ে উঠেছে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে। রবীন্দ্রনাথ এগিয়ে এসেছেন তাঁর গান ও রাখীবন্ধন উৎসব নিয়ে। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিচ্ছেন। সেইসব সভায় বক্তৃতা দিচ্ছেন চিত্তরঞ্জন। দেখা যাচ্ছে বাসন্তী দেবীকেও। ১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট কলকাতার টাউন হলে ডাকা হল সেই ঐতিহাসিক সভা যেখানে লোকমান্য তিলক, লালা লাজপত রায়, মদনমোহন মালব্য, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ ঘোষের সঙ্গে দেখা গেল চিত্তরঞ্জন দাশকে। এই সভা থেকে ডাক দেওয়া হল স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনের। ‘বন্দেমাতরম’ মন্ত্র উচ্চারণে ঝাঁপিয়ে পড়ল বাংলা। সেই সময়ে চিত্তরঞ্জন তাঁর ছেলে চিররঞ্জনকে ভর্তি করেছিলেন ‘জাতীয় শিক্ষামন্দির’ স্কুলে, যেখানে অধ্যক্ষ হয়ে এলেন অরবিন্দ ঘোষ সুরাটের মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে। রসা রোডের বাড়িতে তখন বিপিন পাল, সুরেন বাঁড়ুজ্যেদের ঘন ঘন যাতায়াত প্রমাণ করে চিত্তরঞ্জন জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। 
অরবিন্দ ঘোষের নেতৃত্বে এই সময়ে গড়ে উঠছে সশস্ত্র স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপরেখা। প্রমথনাথ মিত্র,অরবিন্দ ঘোষ প্রমুখের সঙ্গে ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ ‘অনুশীলন সমিতি’ গঠনে। প্রথম ঘটনা কিংসফোর্ড সাহেবের উপর মুজফ্‌ফরপুরে বোমা মারা ৩০ এপ্রিল, ১৯০৮। ছিলেন দুই বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী। প্রফুল্ল চাকী আত্মহত্যা করেন এবং ক্ষুদিরাম বসু গ্রেপ্তার হন। সেই সময়েই তৈরি হচ্ছে অস্ত্র ও বোমা গোপন কেন্দ্রে— কলকাতারই ৩২ নম্বর মুরারি পুকুর লেনে।
************
‘আজ আত্মাচক্র বৈঠকে অরবিন্দের মোকদ্দমার কথা জিজ্ঞাসা করব,’ চিত্তরঞ্জন কথাটা বলেই তাকালেন বাসন্তী দেবী মুখের দিকে। বাসন্তী দেবী লক্ষ করেছেন ইদানীং তিনি পরলোকতত্ত্ব নিয়ে চর্চা শুরু করেছেন বেশ। বই আনিয়ে পড়ছেন। আলোচনা করছেন। বাসন্তী দেবী মৃদু আপত্তি করেছিলেন শরীর-স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই। কিন্তু নাটোরের মহারাজা জগদীন্দ্রনাথের দিকে তাকাতেই তিনি সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়লেন। অর্থাৎ তিনিও বসতে চান আজকের আত্মাচক্র বৈঠকে।
গভীর রাত। একটা প্রদীপ জ্বলছে ঘরে। অমাবস্যার অন্ধকার। ব্রহ্মবান্ধবের আত্মাকে ডাকা হয়েছে। হঠাৎ পেন্সিল নড়ে উঠল। কিছু একটা লেখা হচ্ছে! খসখসখস। লেখা হল— ‘You must defend Aurobinda’। পেন্সিল উত্তেজিত। উত্তেজিত চিত্তরঞ্জনও। তখনও পর্যন্ত আলিপুর বোমার মামলার কেস তার কাছে আসেনি। ব্যারিস্টার ব্যোমকেশ চক্রবর্তী লড়ছেন অরবিন্দের পক্ষে। তার ভিজিট দিতে দিতে ফতুর বিপ্লবীদের তহবিল। এর কিছুদিন পরেই ‘বন্দেমাতরম’ পত্রিকার তরফ থেকে কৃষ্ণকুমার মিত্র এবং শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী এলেন চিত্তরঞ্জনের কাছে মামলার দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে ।
একদিন সকালে উল্লাসকর দত্তের মা এলেন চিত্তরঞ্জনের কাছে সেই শিবপুর থেকে।
‘আমি শুধু আমার ছেলের জন্য বলতে আসিনি, সব ছেলেদের বাঁচাবার ভার তুমি নাও, বাবা।’
চিত্তরঞ্জন প্রণাম করলেন, ‘ক’জন মা বলতে পারে আমি শুধু আমার ছেলের জন্য আসিনি? এই মায়েরাই দেশকে ধন্য করে রেখেছে।’ খুবই কম পারিশ্রমিকে চিত্তরঞ্জন মামলা শুরু করলেন। সারাদিন সারারাত আইনের বইয়ে ডুবে থাকলেন চিত্তরঞ্জন। প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার পক্ষের ব্যারিস্টার আর্ডলি নর্টন। বিচারপতি ছিলেন বিচক্রফট। যিনি বিলেতে অরবিন্দের সহপাঠী ছিলেন। এজলাসে বিচারপতি বসেছেন। এজলাস শুরু হল। বাদী পক্ষের উকিল চিত্তরঞ্জন উঠলেন। পেতে আঁচড়ানো চুল। সরু গোল্ডেন ফ্রেমের চশমার আড়ালে শান্ত ও স্থির দৃষ্টি। নলিনীকান্ত গুপ্ত তাঁর স্মৃতিচারণে লিখছেন— ‘... চিত্তরঞ্জনের কণ্ঠ ধীরে ধীরে উঠে চলল গমকে গমকে ... শুনলাম চিত্তরঞ্জন দেবাদিষ্ট হয়ে যেন বলে চলেছেন, He stands not only before the bar of this Court, but stands before the bar of the High Court of History...Long after he ( Aurobindo) is dead and gone, his words will be echoed and re-echoed not only in India, but across seas and lands...’
কলাপাতা কেটে আনছে ভোম্বল ( চিররঞ্জন) আর চাকররা। বাড়ির মেয়েরা এবং আশপাশের বাড়ির মেয়েরা আজ ভোর থেকেই চিত্তরঞ্জন দাশের অন্দরমহলে হেঁশেল সামলাচ্ছে। সবাই ব্যস্ত। বেলা বয়ে যাচ্ছে। কলাপাতা আর গেলাস ধুয়ে বারান্দার এক কোণে ডাঁই। এলাকার মেয়েরা নতুন কাপড় পরে হাতে শাঁখ ও ফুল নিয়ে রসা রোডের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ শোনা গেল ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনি। মেয়েরা শাঁখ বাজাতে শুরু করল। বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নামলেন অরবিন্দ আর চিত্তরঞ্জন। অন্য গাড়িতে এলেন মুক্তি পাওয়া বন্দিরা। মুক্ত কণ্ঠে স্বদেশি গান গাইছেন তাঁরা। মুক্তি পাওয়া বন্দিরা বাড়ির পুকুরে স্নান করে, নতুন ধুতি-জামা পরে বারান্দায় লাইন দিয়ে বসেছেন দুপুরের খাবার খেতে। ওঁদের সঙ্গে অরবিন্দ ও চিত্তরঞ্জন পাশাপাশি বসেছেন। সবার মুখে হাসি।
পসার ও যশের বৃদ্ধি লাভ শুরু হয়েছে চিত্তরঞ্জনের এই আলিপুর মামলার পর থেকেই। ব্যারিস্টার মহলে নাম হয়ে গেল, ‘Maker of Criminal Law’ হিসেবে। শুধু ফৌজদারি নয় দেওয়ানি মামলাতেও তিনি ছিলেন দক্ষ।
দ্রুত কতগুলি ঘটনা ঘটতে থাকে চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনে- ১৯১৩ ও ১৯১৪ সালে। প্রথমে মা ও পরে বাবা মারা যান। ১৯১৩ সালের ১৪ মে বাবার সমস্ত ঋণ পরিশোধ করে চিত্তরঞ্জন ‘দেউলিয়া’ নাম থেকে মুক্ত হলেন। ১৯১৪ সালে তিনি ‘নারায়ণ’ পত্রিকা প্রকাশ করলেন। ততদিনে চিত্তরঞ্জনের পাঁচটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর মতে, ‘এই সমগ্র জীবনের অনুভূতিই সাহিত্য এবং তার জীবন্ত জ্বলন্ত প্রকাশই শ্রেষ্ঠ শিল্পকলা, সেই অনুভূতিই সাহিত্যের রস।’
চিত্তরঞ্জন দাশের সাহিত্য প্রতিভা নিয়ে খুব একটা আলোচনা আমরা দেখি না। তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা ‘নারায়ণ’-এর প্রায় প্রতিটি সংখ্যায় তখন ছাপা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য সৃষ্টির কঠোর সমালোচনা। এদিকে রসা রোডের দাশ বাড়ির সঙ্গে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির সম্পর্ক খুবই ভালো, পারিবারিক বলা যায়। দার্শনিক ও সমাজকর্মী তথা রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে একটা বিরোধাভাষ সবসময়েই ছিল। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একজন দার্শনিক। তাঁর বিশ্ব মানবতার সুর ছিল অন্য তারে বাঁধা। তাই তিনি চিত্তরঞ্জন দাশের মেয়ের (অপর্ণা) বিয়েতে অসংকোচে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে চলে আসেন। যদিও ব্রাহ্ম সমাজের সবাই এই বিয়ে সমর্থন করেননি এবং বিয়েতে অনুপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি রবীন্দ্রনাথ। তিনি উপস্থিত থেকে বাংলায় প্রথম অসবর্ণ বিয়েকে সমর্থন করে গেলেন আশীর্বাদ করে। পারিবারিকভাবে ব্রাহ্ম চিত্তরঞ্জন মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন হিন্দু মতে। চিত্তরঞ্জনের চিত্তের দৃঢ়তাও যেমন লক্ষ্যণীয়, তেমনই উল্লেখ্য রবীন্দ্রনাথের আধুনিক উদার মানসিকতা।
জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের পর রবীন্দ্রনাথ যেমন গান্ধীজির কাছে পাঞ্জাবে প্রতিবাদ হিসাবে যাওয়ার অনুরোধ নিয়ে পাঠিয়েছিলেন অ্যান্ড্রুজকে। গান্ধীজি প্রত্যাখান করেন সেই অনুরোধ। কারণ, তিনি রাজনৈতিক নেতা। তাঁকে ভেবে নিতে হয় দূরগত বাস্তবতা। তেমনই তিনি গিয়েছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশের কাছে। একজন মানবতাবাদী গিয়েছিলেন একজন পুরোদস্তুর রাজনৈতিক নেতার কাছে, জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ সভা ডাকার অনুরোধ নিয়ে। তখন চিত্তরঞ্জন বলেছিলেন, ‘আপনি সভাটা ডাকুন।’ অনেকেই এখানে বিরোধাভাষ খুঁজে পান, খুঁজে পান বিদ্বেষ। কিন্তু গভীরভাবে দেখলে পরিষ্কার হয়— রাজনীতির মানুষের কাছে মঞ্চ, সভা, কে ডাকছেন, কেন ডাকছেন, কী তার আসু ও দূরবর্তী ফল এই সমস্তটার চুলচেরা বিশ্লেষণ জরুরি। কিন্তু একজন কবির পক্ষে, একজন দার্শনিকের পক্ষে, মানবিক অভিঘাত বড় হয়ে দেখা দেয়। তাই গান্ধীজি ও চিত্তরঞ্জন যা অস্বীকার করেন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রবীন্দ্রনাথ মানবিকতার দিক থেকে সেটাকেই গ্রহণ করেন ও প্রতিবাদ করেন তীব্র— ফিরিয়ে দেন নাইটহুড উপাধি। কিন্তু প্রত্যেকের পারস্পরিক শ্রদ্ধা থাকে অটুট। শ্রদ্ধাশীল মতপার্থক্য সমষ্টিকে গতিশীল করে। সমাজ-ভাবনায় তোলে ঢেউ।
********** 
৭ জানুয়ারি, ১৯২৫। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রবল ‘কলিক’ যন্ত্রণায় কষ্ট পেয়েছেন। সঙ্গে জ্বর। বেশ কয়েকটা মরফিয়া ইঞ্জেকশন নিতে হয়েছে। রাতের পর রাত নির্ঘুম কেটেছে তাঁর। চোখের কোণে ক্লান্তি ও যন্ত্রণা জমে আঁধার হয়ে আছে। বাসন্তী দেবী স্বামীর পাশে বসে। চিত্তরঞ্জন তাকালেন, ‘আজ আমাকে যেতেই হবে।’
বাসন্তী দেবী স্থির তাকিয়ে থাকেন। তিনি জানেন তাঁর স্বামীর কাছে কর্তব্য আগে। 
চিত্তরঞ্জন মাথাটা তোলার চেষ্টা করলেন, ‘আমার শরীরের আগে আমার কর্তব্য...যদি আমি মরেও যাই তবুও কারও কথা শুনব না...।’
বাসন্তী দেবী জানেন। তিনি যাবেন। তিনি এটাও জানেন কারারুদ্ধ সুভাষচন্দ্র ছাড়াও অন্য বন্দিমুক্তির জন্য তাঁর কাউন্সিল হাউসে যাওয়া জরুরি। যে অর্ডিন্যান্স বলে ব্রিটিশ সরকার সুভাষ সহ অন্যান্যদের গ্রেপ্তার করে রেখেছে তার মেয়াদকাল ছিল ১৯২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। সরকার তাই অর্ডিন্যান্সটিকে আইন হিসাবে পাশ করার জন্যই কাউন্সিল হাউস ডেকেছে। 
‘আজ আমার সোনার ছেলেরা বিনা বিচারে কারারুদ্ধ, নির্বাসিত আর ওদের আইন করিয়ে নেবার সুযোগ দেব! কিছুতেই না, প্রাণ থাকতে নয়...’ অসুস্থ অবস্থায় স্ট্রেচারে করে তিনি গেলেন। কাউন্সিল হাউসে তাঁর শোবার ব্যবস্থা হয়েছিল। টাউনহলের বাইরে হাজার হাজার মানুষের ভিড় । কাউন্সিল হাউসে দৃপ্ত বক্তৃতা দেন চিত্তরঞ্জন। ভোট হয়। অর্ডিন্যান্স-এর বিরুদ্ধে ভোট ৬৬ আর পক্ষে ৫৭। রদ হয় আইন। সুভাষ সহ সমস্ত রাজনৈতিক বন্দিমুক্তির পথ সুগম হয়। স্ট্রেচারে শুয়েই বেরিয়ে আসেন টাউনহল থেকে।
১৯২১ সালের ১০ ডিসেম্বর চিত্তরঞ্জন দাশ গ্রেপ্তার হন। ওই একই দিনে সুভাষচন্দ্র বসু, বীরেন্দ্রনাথ শাসমল, মৌলনা আবুল কালাম আজাদ সহ অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তার আগে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন ছেলে চিররঞ্জন (ভোম্বল) আর স্ত্রী বাসন্তী দেবী। বাসন্তী দেবীকে সেদিনই মুক্তি দিলেও চিররঞ্জনের উপর চলেছিল অত্যাচার। এদিকে সেই বছরই অর্থাৎ ১৯২১ সালের ২৩-২৪ ডিসেম্বর আমেদাবাদ কংগ্রেসে চিত্তরঞ্জন দাশ সভাপতি নির্বাচিত হলেন। যদিও তিনি তখন কারাগারে। সরোজিনী নাইডু পাঠ করলেন তাঁর লিখিত বক্তৃতা। ১৯২২ সালে চট্টগ্রাম প্রাদেশিক সম্মেলনে সভানেত্রী হলেন বাসন্তী দেবী কারণ তখনও চিত্তরঞ্জন দাশ কারাগারে। শরীর তাঁর ভেঙে পড়ছে। সুভাষ খুব যত্ন করছেন। মজা করে স্ত্রীকে বলছিলেন, ‘সুভাষ খুব ভালো নার্স!’ ১৯২২ সালের ৯ আগস্ট রাতে চিত্তরঞ্জন বেরিয়ে এলেন জেল থেকে। কারামুক্তি। অত রাতেও রসা রোডের বাড়ির সামনে মানুষের স্রোত। সেইদিন থেকে তিনি মানুষের কাছে হলেন ‘দেশবন্ধু’।
মতিলাল নেহরুকে সঙ্গে নিয়ে নতুন দল গড়লেন ‘স্বরাজ দল’। শুরু করলেন সমগ্র ভারতবর্ষে সংগঠন গড়ে তোলা এবং কাউন্সিল হাউসের নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া ও জেতানোর লড়াই। কাউন্সিল হাউসে ব্রিটিশ সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপে তীক্ষ্ম সমালোচনা করছেন। বাধা দিচ্ছেন।  তারপর তৈরি হয়েছিল ‘গান্ধী-দাশ প্যাক্ট’। ভারতবর্ষের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠছে ‘স্বরাজ দল’। 
সংগঠক চিত্তরঞ্জনের নেতৃত্বে ‘স্বরাজ দল’ তখন বাংলার কাউন্সিল হাউসের অধিকাংশ পদে নির্বাচিত হয়েছিল। অবস্থা এমন হয়েছিল যে, ১৯২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর গভর্নর লর্ড লিটন চিত্তরঞ্জন দাশকে মন্ত্রিসভা গঠন ও পরিচালনা করার দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ করেন। চিত্তরঞ্জন অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ, তিনি চান পূর্ণস্বরাজ। ১৯২৪ সালেই চিত্তরঞ্জন খসড়া তৈরি করলেন- দ্য বেঙ্গল হিন্দু-মুসলিম প্যাক্ট। উদার জাতীয়তাবাদের নিদর্শন ছিল এই প্যাক্ট। যদিও এই প্যাক্ট কার্যকর করা যায়নি। সেই বছরেই কলকাতা কর্পোরেশন এর নির্বাচনে ‘স্বরাজ দল’ সমস্ত ওয়ার্ডে প্রার্থী দিল। প্রায় প্রত্যেক ওয়ার্ডে ‘স্বরাজ দল’ জয়যুক্ত হল। চিত্তরঞ্জন দাশ হলেন কলকাতা কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র। সুরাবর্দি হলেন ডেপুটি মেয়র। আর নিজের প্রিয় শিষ্য সুভাষ বসুকে এগজিকিউটিভ অফিসার করে কলকাতা কর্পোরেশনে নিয়ে এলেন। ভারতবর্ষের প্রান্তে প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন সংগঠক চিত্তরঞ্জন । কর্পোরেশনের মেয়র পদের কাজ। স্বরাজ দলের নেতৃত্ব। ভোটের প্রচার। শরীর ভাঙছিল। ১৯২৫ সালের ফরিদপুর প্রাদেশিক সম্মেলন ২ মে তাঁর শেষ সভা। ৭ জানুয়ারি অসুস্থ অবস্থায় কাউন্সিল হাউসে সেই ঐতিহাসিক বক্তৃতা ও অর্ডিন্যান্স এর বিরুদ্ধে ভোটপর্ব। তারপর তিনি স্বাস্থ্যোদ্ধারের জন্য চলে যান পাটনা। যাওয়ার আগে রসা রোডের ওই বাড়িটি নারী কল্যাণ কাজে ব্যবহার করার জন্য ট্রাস্ট ডিড করে যান দানবীর দেশবন্ধু। 
*********
১৯২৫ সাল। ১৮ জুন ভোরের কলকাতা মেঘলা। ভেজা ভেজা রাস্তা-ঘাট। আগের দিন বৃষ্টি হয়েছে। একটা মোটরগাড়িতে মহাত্মা গান্ধী, অপর্ণা দেবী, তাঁর স্বামী পেরিয়ে গেলেন কলকাতার সীমানা। যাবেন ব্যারাকপুর। মহাত্মা গান্ধীর মুখ থমথমে। স্থির তিনি। অচঞ্চল। ব্যারাকপুর স্টেশনে যেন জনসমুদ্র। এখান থেকেই গান্ধীজি উঠবেন দার্জিলিং মেলে। ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনি উঠছে মুহুর্মুহু। ট্রেনটি ঢুকছে। ভলান্টিয়াররা গান্ধী ও তাঁর সঙ্গে আসা অপর্ণা দেবী এবং তাঁর স্বামীকে ঘিরে আছে। প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনের কম্পার্টমেন্ট বেশ উঁচু। ছাত্ররা বসে পিঠ পেতে দিচ্ছে। তাদের পিঠে পা দিয়ে উঠতে বলছে। গান্ধীজি রাজি হলেন না। যাই হোক ধীরে ধীরে কামরায় উঠলেন। এক ঝলক তাকিয়ে থাকলেন চিত্তরঞ্জনের দিকে। ফুলে ফুলে ঢেকে গিয়েছে চিত্তরঞ্জনের দেহ। স্থির। গভীর ঘুমে। 
দার্জিলিং থেকে কলকাতায় আনা হচ্ছে। পথের প্রতিটি স্টেশনেই ট্রেন দাঁড়িয়েছে শুধু মানুষের ভিড়ের কারণেই। সবাই প্রিয় নেতাকে জানাতে চান শেষ শ্রদ্ধা।
উদার জাতীয়তাবাদের পরাকাষ্ঠা চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যু হয়েছিল দার্জিলিংয়ে ১৯২৫ সালের ১৬ জুন। ১৮ জুন শিয়ালদহ স্টেশনে যখন শববাহী ট্রেন এসে দাঁড়াল, তখন স্টেশন জনারণ্যে পরিণত হয়েছে। স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল। গান্ধীজি কামরার গেটে এসে দাঁড়ালেন। হাতের ইশারায় চুপ করতে বললেন মানুষকে। নিস্তব্ধ হয়ে গেল স্টেশন চত্বর। ফুলে ফুলে ঢেকে গেল জননেতার নশ্বর দেহ। সকাল ৭-৪৫ মিনিটে শববাহী মিছিল শুরু হল। গান আর বন্দেমাতরম ধ্বনি। রাজপথে শুধু মানুষের মাথা। পথের দু’ধারে মানুষ আর মানুষ।
অঙ্কন : সুব্রত মাজী
20th  December, 2020
আমার সন্তান যেন থাকে
ভ্যাকসিন  ভাতে
সুন্দর মুখোপাধ্যায়

দু’হাজার কুড়ি বিদায় নিয়েছে, দুর্যোগও যেন শেষ হতে চলল। তবে এ ব্যাপারটা হোল-ওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে আগে বুঝেছে বরানগরের বিল্টু। তার প্রেমিকা মিতা পুরো বছরটা ঝুলিয়ে রেখে একেবারে বছর শেষে বাড়ির অমতে বিয়েতে মত দিয়েছে। এই সুবর্ণসুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়, বিল্টুও করেনি। বিশদ

 কলকাতার গর্বের চার্চ
 ​​​​​​শান্তনু বসু

১৬৯০ সালের ২৪ আগস্ট। সুতানুটির ঘাটে জাহাজ ভেড়ালেন জোব চার্নক। কলকাতা, সুতানুটি ও গোবিন্দপুর এই তিনটি গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠল ইংরেজদের বাণিজ্যঘাঁটি। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী হিসেবে অবশ্য ইংরেজরাই কলকাতায় প্রথম নয়, তাদের আগে বসতি স্থাপন করেছিল আর্মেনিয়ান ও পর্তুগিজরা। বিশদ

27th  December, 2020
লৌহপুরুষ
সমৃদ্ধ দত্ত

মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের প্রয়াণদিবস। ৭০ বছর হয়ে গেল তিনি আর নেই। কিন্তু স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের অখণ্ডতা রক্ষায় তাঁর অবদান আজও প্রাসঙ্গিক। তিনি সত্যিই এদেশের এক ও একমাত্র আয়রনম্যান।
বিশদ

13th  December, 2020
সিটিজেন বনাম 
সিনিয়র সিটিজেন
শংকর

আগামীকাল, ৭ ডিসেম্বর আমার জন্মদিন, কিন্তু আজ তো ৬ ডিসেম্বর, জোর করে বলা যায় না আমি এইট্টি সেভেন নট আউট হতে চলেছি আগামী কাল। নানা অনিশ্চয়তা নিয়ে এখনকার দিনকাল। তার সঙ্গে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ ও ব্লাড সুগার, যাদের ধরবার জন্য নবাগত একটি ভাইরাস নাকি বিশেষ আগ্রহী। দেখা যাচ্ছে, মানুষ থেকে জীবাণু পর্যন্ত কেউই নিজের জোরে রাজত্ব চালাতে আগ্রহী নয়, তাই বাংলা ভাষাতেও ‘কো-মরবিডিটি’ বলে একটা ইংরেজি শব্দের বেআইনি অনুপ্রবেশ ঘটল।  বিশদ

06th  December, 2020
অবিশ্বাস্য
রাতুল ঘোষ

পার্থিব জীবন থেকে মুক্তি মিললেও ডিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা অমর হয়ে থাকবেন। অন্তত এই গ্রহে যতদিন ফুটবল খেলা বেঁচে থাকবে। খ্যাতি-অখ্যাতির নেপথ্যে তাঁর এই চিরপ্রস্থানে ব্যথিত, শোকস্তব্ধ ফুটবল দুনিয়া। ফিফা আয়োজিত ফুটবলপ্রেমীদের গরিষ্ঠাংশের ভোটে মারাদোনা বিংশ শতাব্দীর সেরা ফুটবলারের সম্মান যৌথভাবে পেয়েছিলেন ফুটবল সম্রাট পেলের সঙ্গে ভাগাভাগি করে। বিশদ

29th  November, 2020
হেমন্তের দুর্গা 
সুখেন বিশ্বাস

মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের স্বপ্নে পাওয়া জগদ্ধাত্রী। এই পুজো এখন আর কৃষ্ণনগর বা চন্দননগরে সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে গিয়েছে বাংলার সর্বত্র। হেমন্তকালের শুক্লা কার্তিকের নবমীতিথিতে তাই বাংলায় নতুন করে দেখা যায় শরতের রোদ্দুর। আকাশবাণীর প্রভাতী অনুষ্ঠান বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর’ নেই... তবু প্রবাসীরা ঘরে ফেরে। দুর্গাপুজোর মতোই নতুন পোশাকে মানুষ বেরিয়ে পড়ে ঠাকুর দেখতে।  
বিশদ

22nd  November, 2020
শ্যামাসংগীত...
আলাদা একটা অধ্যায়
শ্রীকান্ত আচার্য্য

 ছোটবেলা থেকেই শ্যামাসংগীতে আমার বিশেষ আকর্ষণ ছিল। সেটা পান্নালাল ভট্টাচার্যের গান শুনেই। বাড়িতে রেকর্ড ছিল। ‘দোষ কারও নয় গো মা...’ পাগল করা একটা গান, দাশরথি রায়ের অপূর্ব লিরিক। পুজোআচ্চা বা মন্দিরে যাওয়া, এসবে আমি নেই ঠিকই... কিন্তু ভক্তিগীতি বরাবর ভালো লাগে। শ্যামাসংগীত আমাদের বাংলা গানের ইতিহাসে পৃথক একটা অধ্যায় বলা যেতে পারে। এই গান ঘিরে যে সাহিত্য-সম্পদ তৈরি হয়েছে, তা অমূল্য। বিশদ

15th  November, 2020
একবার দেখা দিলি না মা... 

 আর দশ বছর পরই তাঁর জন্মশতবর্ষ। বাঙালি তাঁকে মনের মণিকোঠায় কতটা রেখেছে, বলবে সময়ের দলিল। কিন্তু একটা বিষয়ে সকলেই একমত... ফুল ছাড়া যেমন পুজো হয় না, পান্নালাল ভট্টাচার্যের শান্ত-মিঠে কণ্ঠ ছাড়া মা কালীর আরাধনাও যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বহু সাধক-কণ্ঠে মায়ের গান শুনেও পান্নালালের সেই আর্তি খুঁজে পেয়েছেন, এমনটা হলফ কেউ বলতে পারেন না। মায়ের পায়ের জবা হয়ে ফুটে ওঠা পান্নালাল ভট্টাচার্যকে সেদিন ভুলে থাকে, সাধ্য কার! পান্নালালের চেয়ে আট বছরের বড়, তাঁর মেজদা ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য। তাঁরই ছেলে দীপঙ্কর ভট্টাচার্য... পান্নালালের ভাইপো। যিনি গর্ব করে বলতেই পারেন, তাঁর বাবা-কাকার মতো শিল্পী আগামী দু’শো বছরে আর আসবে না এ বাংলায়। বলতেই পারেন, কালীপুজোর নির্ঘণ্ট মানে জবাফুল, বেলপাতা আর পান্নালালের গান। এই অমূল্য রত্নকে কাছ থেকে দেখা ভাইপো দীপঙ্কর ভট্টাচার্যর স্মৃতিচারণায় উঠে এলেন এক অন্য সাধক। শুনলেন অন্বেষা দত্ত। বিশদ

15th  November, 2020
মোদির মিশন বিহার
সমৃদ্ধ দত্ত

নরেন্দ্র মোদি রেকর্ড গড়তে ভালোবাসেন। যে কোনও একটি সাফল্যকেই তাঁর অনুগামী ও দল রেকর্ড হিসেবে প্রচার করে এবং বিশ্বাসও করে। রেকর্ড করতে কে না ভালোবাসে? তাই এটা কোনও অন্যায় নয়। অপার জনপ্রিয়তা, অপরিসীম ক্যারিশমা, দল ও সরকারের উপর একচ্ছত্র অথরিটি।   বিশদ

08th  November, 2020
হোয়াইট হাউসের 
ভাগ্য গণনা
সুদীপ্ত রায়চৌধুরী

ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের কথা। বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধে। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে মোবাইলের চেনা রিংটোন। স্ক্রিনে +৯১... নম্বর, মায়ের। অসময়ে ফোনটা দেখেই নাতাশার ভ্রূ দু’টো একে অপরকে আলতো করে ছুঁয়ে ফেলেছিল। ফোন কানে দিতেই বয়ে এল দুঃসংবাদ। আচমকাই মারা গিয়েছেন শ্বশুর। ব্যাঙ্কের কনফারেন্সে স্বামী তখন অন্য শহরে। বাড়ি ফিরে একটা ব্যাগে টুকিটাকি সমস্ত কিছু গুছিয়ে চার বছরের ছেলেকে নিয়ে সোজা এয়ারপোর্ট। এর মধ্যেই বরকে খবর দেওয়া, প্লেনের টিকিট কাটা...। বিশদ

01st  November, 2020
জাগরিত জ্যোতির্ময়ী 
সৌম্য নিয়োগী

১৯ বছর পর... আরও একবার কার্তিকে মায়ের আগমনি।
আজ মাস পয়লা। ১ কার্তিক, ১৪২৭। ক্যালেন্ডার থেকে আশ্বিনের পাতা ঝরে গিয়েছে। শরৎ নেই। আকাশের দিকে চোখ রাখা যায় না। মাটিতে রোদ্দুরের ছায়া। হেলে পড়া আলো আর বিষাদ। ঋতুর কি কোনও ভাবনা থাকে? মানুষ কি সৃষ্টি করে তাকে?   বিশদ

18th  October, 2020
থিমের বিবর্তন
প্যান্ডেলওয়ালা থেকে শিল্পের সফর
বন্দন রাহা

 একটি অগ্নিকাণ্ড একরাতেই বদলে দিয়েছিল বাংলার দুর্গাপুজো। একচালার সাবেকি দুর্গাপ্রতিমাকে পাঁচটি চালচিত্রে ভেঙে দিয়েছিলেন শিল্পী গোপেশ্বর পাল। দুঃসাহসিক এই পদক্ষেপের নেপথ্যে ছিলেন এক মহান বাঙালি, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। ১৯৩৮ সালে কুমোরটুলি সর্বজনীনে। বিশদ

11th  October, 2020
থিমের বিবর্তন
শিল্প হল ‘সর্বজনীন’
ভবতোষ সুতার

 পুজোয় প্রথম কাজ ২০০০ সালে। বড়িশা জনকল্যাণ সংঘ। বেহালা চৌরাস্তা ও সখেরবাজারের মধ্যিখানে। স্বল্প পরিচিত একটি ক্লাব। তারাই আমার উপর ভরসা রাখার সাহস দেখিয়েছিল। অক্লান্ত পরিশ্রম সেবার ছিল আমার সঙ্গী। দিনরাতের খেয়াল নেই। বিশদ

11th  October, 2020
ছৌ নাচের ইতিকথা
মৃন্ময় চন্দ

সিঁদুরের বিন্দু বিন্দু মূষিক বাহন/ নমঃ নারায়ণ/ গণেশদেব হর গৌরীর নন্দন...।  তাক ধিন দা ধিন—বেজে উঠল ঢোল-ধামসা। সূত্রধর সানাইয়ে একতালে ঝুমুরে শুরু করেছে গণেশ বন্দনা। হেলতে দুলতে শুঁড় নাড়াতে নাড়াতে, নাচের তালে পা ফেলে আসরে আগমন গণেশ বাবাজির। বিশদ

04th  October, 2020
একনজরে
ধন্দ কাটিয়ে নতুন বছরের প্রথম মাস জুড়ে চলবে শ্রমিক মেলা। শনিবার শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের খাসতালুক আসানসোলে এই কর্মকাণ্ডের সূচনা হল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বিগত বছরগুলিতেও এই প্রথা চালু রেখেছিল। ...

আবর্জনা সাফাই নিয়ে বচসা। তার জেরে পুরসভার মহিলা সাফাই কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠল এলাকাবাসীদের বিরুদ্ধে। ...

ফ্ল্যাটের বেআইনি নির্মাণ ভাঙা বন্ধ করা নিয়ে আদালতে জোর ধাক্কা খেলেন অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত। বেআইনি নির্মাণ ভাঙা বন্ধ করা নিয়ে তাঁর আর্জি খারিজ করে দিয়েছে ...

নতুন বছরের শুরুতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত কমছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় মাত্র ছ’জন আক্রান্ত হয়েছেন। ...




আজকের দিনটি কিংবদন্তি গৌতম ( মিত্র )
৯১৬৩৪৯২৬২৫ / ৯৮৩০৭৬৩৮৭৩

ভাগ্য+চেষ্টা= ফল
  • aries
  • taurus
  • gemini
  • cancer
  • leo
  • virgo
  • libra
  • scorpio
  • sagittorius
  • capricorn
  • aquarius
  • pisces
aries

আপনার মনে ধর্মভাব জাগ্রত হবে। কর্মপ্রার্থীরা কর্মের সুযোগ পাবেন। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির সূচনা হবে। অর্থ নিয়ে ... বিশদ


ইতিহাসে আজকের দিন

১৪৯৬ - লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি উড়োজাহাজ চালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
১৯৫৬- আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত আইফেল টাওয়ারের একাংশ।
১৯৫৬- অভিনেতা মেল গিবসনের জন্ম।
১৯৬৯- ফর্মুলা ওয়ান রেসের চালক মাইকেল শ্যুমাখারের জন্ম।
২০১০ - বিশিষ্ট সাহিত্যিক মতি নন্দী প্রয়াত।
২০১১ - বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী সুচিত্রা মিত্র প্রয়াত।
২০১৯ -  বিশিষ্ট কবি, ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার দিব্যেন্দু পালিত প্রয়াত।



ক্রয়মূল্য বিক্রয়মূল্য
ডলার ৭২.৩৮ টাকা ৭৪.০৯ টাকা
পাউন্ড ৯৮.০০ টাকা ১০১.৪৭ টাকা
ইউরো ৮৮.৪১ টাকা ৯১.৬১ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
01st  January, 2021
পাকা সোনা (১০ গ্রাম) ৫০,৯৫০ টাকা
গহনা সোনা (১০ (গ্রাম) ৪৮,৩৪০ টাকা
হলমার্ক গহনা (২২ ক্যারেট ১০ গ্রাম) ৪৯,০৭০ টাকা
রূপার বাট (প্রতি কেজি) ৬৭,৭০০ টাকা
রূপা খুচরো (প্রতি কেজি) ৬৭,৮০০ টাকা
[ মূল্যযুক্ত ৩% জি. এস. টি আলাদা ]

দিন পঞ্জিকা

১৯ পৌষ, ১৪২৭, রবিবার, ৩ জানুয়ারি ২০২১, চতুর্থী ৫/৪ দিবা ৮/২৩। মঘা নক্ষত্র ৩৩/৫৮ রাত্রি ৭/৫৭। সূর্যোদয় ৬/২১/১৯, সূর্যাস্ত ৫/০/৪১।  অমৃতযোগ দিবা ৭/৪ গতে ৯/১১ মধ্যে পুনঃ ১২/২ গতে ২/৫৩ মধ্যে। রাত্রি ৭/৪১ গতে ৯/২৮ মধ্যে পুনঃ ১২/৭ গতে ১/৫৪ মধ্যে পুনঃ ২/৪৮ গতে উদয়াবধি। মাহেন্দ্রযোগ দিবা ৩/৩৬ গতে ৪/১৯ মধ্যে। বারবেলা ১০/২০ গতে ১/০ মধ্যে। কালরাত্রি ১/২০ গতে ৩/১ মধ্যে। 
১৮ পৌষ, ১৪২৭, রবিবার, ৩ জানুয়ারি ২০২১, চতুর্থী দিবা ৭/৫৬। মঘা নক্ষত্র রাত্রি ৮/২। সূর্যোদয় ৬/২৪, সূর্যাস্ত ৫/১। অমৃতযোগ দিবা ৭/৫ গতে ৯/১৩ মধ্যে ও ১২/৩ গতে ২/৫৪ মধ্যে এবং রাত্রি ৭/৪২ গতে ৯/২৮ মধ্যে ও ১২/৯ গতে ১/৫৫ মধ্যে ও ২/৪৯ গতে ৬/২৪ মধ্যে। মাহেন্দ্রযোগ দিবা ৩/৩৬ গতে ৪/১৯ মধ্যে। বারবেলা ১০/২৩ গতে ১/২ মধ্যে। কালরাত্রি ১/২৩ গতে ৩/৩ মধ্যে। 
১৮ জমাদিয়ল আউয়ল।

ছবি সংবাদ

এই মুহূর্তে
আপনার আজকের দিনটি
মেষ: কর্মপ্রার্থীরা কর্মের সুযোগ পাবেন। বৃষ:  ব্যবসায়ীদের জন্য শুভ সময়। মিথুন: উচ্চশিক্ষালাভের সুযোগ। কর্কট: নানা উপায়ে ...বিশদ

04:29:40 PM

ইতিহাসে আজকের দিনে
১৪৯৬ - লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি উড়োজাহাজ চালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ ...বিশদ

04:28:18 PM

আইএসএল: নর্থ ইস্টকে ২-০ গোলে হারাল মোহন বাগান 

09:31:13 PM

আইএসএল: মোহন বাগান ২ নর্থ ইস্ট ০ (৫৬ মিনিট) 

08:51:49 PM

আইএসএল: মোহন বাগান ১ নর্থ ইস্ট ০ (৫০ মিনিট) 

08:45:32 PM

আইএসএল: মোহন বাগান ০ নর্থ ইস্ট ০ (হাফটাইম) 

08:25:22 PM