ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়। ... বিশদ
আন্দিজ পর্বতমালার এক স্ট্রাটো বা বহুস্তরের সক্রিয় আগ্নেয়গিরি পিচিঞ্চা। তারই ঢালে শহর সান ফ্রান্সিসকো দে কিতো বা শুধুই কিতো। কিতো যে শুধু দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডর দেশের রাজধানী তা নয়, এই শহরের মধ্যে দিয়ে চলে গিয়েছে নিরক্ষরেখা। শহরের চারপাশ জুড়ে নানা আগ্নেয়গিরি, কোনওটার মাথা বরফে ঢাকা তো কেউ পুরো জঙ্গলে ঢাকা। সেরকমই এক জঙ্গলের উদ্দেশে একদিন বেরিয়ে পড়া হল। নাম মিন্ডো ক্লাউড ফরেস্ট। এইরকম নামের একটাই কারণ, ওই জঙ্গল নাকি পুরো মেঘে ঢাকা আর ওই মেঘের আর্দ্রতা থেকেই ওখানে তৈরি হয়েছে নানা ধরনের গাছ ও ফুল, বাসা বেঁধেছে হাজার রকমের পরিযায়ী পাখি।
পিচিঞ্চা আগ্নেয়গিরির ঢালে ঘোরানো রাস্তা বেয়ে উঠতে উঠতে সেই মেঘেদের মধ্যে ঢুকে পড়লাম। আমাদের বাস এক জায়গায় এসে দাঁড়াতে গাইড বললেন, ‘এখানে আমরা পাখি দেখব।’ আমি একটু হতাশ হলাম কারণ ‘বার্ড ওয়াচিং’-এর বেলায় কপালটা আমার বিশেষ ভালো নয়। পৃথিবীর বেশ কয়েকটা জায়গায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাইনোকুলারে চোখ লাগিয়ে বসে পাখি তো দূরের কথা, একটা ফড়িংও দেখতে পাইনি। তবু গাইডের কথায় ভরসা করে তাঁর সঙ্গে এগতে লাগলাম। শুনলাম, এখানে নাকি প্রায় পাঁচশো রকমের পাখি আছে। একটু এগতেই গাছের ডালে দেখা মিলল এক রঙিন নাম না জানা পাখির। কী অপূর্ব দেখতে! জিজ্ঞেস করে নাম জানলাম, টুকান বারবেট। মাথার কাছটা কালো, গলাটা নীল, শরীরটা লাল। প্রকৃতির কী অকৃপণ রঙের ডালি, দেখলেও অবাক হতে হয়! এ যাত্রা পাখিরা আমায় নিরাশ করেনি।
পাখি দেখা শেষ করে আমরা রওনা দিলাম কেবল কার-এর উদ্দেশে। ক্লাউড ফরেস্টের মেঘের উপর দিয়ে আমরা ভেসে চললাম নাম্বিও ইকোলজিকাল রিসার্ভ দেখতে। আর এক প্রস্থ মেঘের ভিতর দিয়ে, পাহাড় বেয়ে উপরে উঠতে প্রায় সাত-দশটা জলপ্রপাতের দেখা মিলল।
পরের দিন আমরা শহরের মধ্যে প্রথমেই গিয়ে হাজির হলাম মিদাদ দেল মুন্দো বা মিডল অফ দ্য ওয়ার্ল্ড নিরক্ষরেখা মনুমেন্ট দেখতে। বিশাল এলাকা জুড়ে বানানো এক বাগান, তার মাঝে একটা স্তম্ভ। তার মাঝখান দিয়ে, মাটিতে মোটা করে হলুদ রঙের লাইন টানা। ওটাই নিরক্ষরেখা। তার সঙ্গে সূর্যঘড়ির সাহায্যে অয়নকাল বোঝানো রয়েছে।
সেখান থেকে আমরা গেলাম এল পানেসিও পাহাড়ের উপর ভার্জিন অব কিতো-র অপূর্ব সুন্দর স্ট্যাচু দেখতে। পুরোটাই অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে বানানো এই মূর্তি নাকি পৃথিবীতে সবচেয়ে উঁচু।
দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় সব শহরেই একটা সেন্ট্রো হিস্টোরিকো বা ঐতিহাসিক স্কোয়্যার থাকে। কিতোর সেই স্কোয়্যারে প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস বা রাষ্ট্রপতি ভবনের অবস্থান। ভিতরটা খুব ছিমছাম সাজানো। ছবি তোলার জন্য আগে থেকে অনুমতি নিতে হয়। ভিতরে ইকুয়েডরীয় চিত্রকর ও ভাস্কর ওসওয়াল্ডো হুয়াসামিন-এর আঁকা ‘ডিসকভারি অব আমাজন’ দেখে সেদিন ফিরলাম।
এক রোদ ঝলমলে দিনে বেরিয়ে পড়লাম আন্দিজ পর্বতমালার আর এক অতি সক্রিয় স্ট্রাটো আগ্নেয়গিরি ‘কোতোপাকসি’ দেখতে। এই পাহাড়ে ওঠার তিনটে ভাগ আছে— প্রথম ভাগে গাড়ি করে পাকা রাস্তা বেয়ে ওঠা, দ্বিতীয় ভাগে গাড়ি বদলে ফোর হুইল ড্রাইভ-এ উঠে এবড়োখেবড়ো রাস্তা বেয়ে ওঠা। শেষে হেঁটে ওঠা। বরফের মধ্যে দিয়ে সরু লম্বা রাস্তা চলে গিয়েছে পাহাড় বেয়ে। খানিকটা গিয়ে বুঝলাম, শখ থাকলেও শরীরে সাধ্য নেই। যতটুকু যেতে পারলাম সেখান থেকেই পাহাড় দেখা হল। ভ্রমণ অভিজ্ঞতার শেষে এবার ফিরতি পথ ধরলাম আমরা।
কীভাবে যাবেন: মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, আমেদাবাদ ও লখনউ থেকে কিতোর বিমান রয়েছে। পৌঁছতে সময় লাগে মোটামুটি দুই থেকে আড়াই দিন।