বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
দুটো ঘটনা দিয়ে আলোচনা শুরু করি—
ঘটনা ১: এক উচ্চপদস্থ সরকারি মহিলা অফিসার আর তাঁর স্বামী একদিন আমার চেম্বারে এলেন বন্ধ্যাত্বের সমস্যা নিয়ে। তাঁর স্বামীও সরকারি অফিসার। পদাধিকারবলে স্ত্রী কিন্তু স্বামীর চাইতে উচ্চপদে রয়েছেন। মহিলার সঙ্গে কথা বলা শুরু করলাম। আর তখনই একটা আশ্চর্য বিষয় নজরে এল। মহিলা কর্মক্ষেত্রে মারাত্মক সফল। এমনকী কথায় কথায় স্বামীর কাছ থেকেও জানলাম, সংসারের মূল ব্যয়ভার বহন করেন তাঁর স্ত্রী। তারপরেও কী ভয়ঙ্কর শূন্যতায় ভুগছেন! কারণ সন্তানহীন হওয়ার কারণে শ্বশুরবাড়িতে তাঁকে বারবার কথা শুনতে হয়!
ঘটনা২: হঠাৎ করেই মেসেঞ্জারে একটা এসএমএস এল। ‘শেষ পর্যন্ত আমাকে বাপের বাড়িতেই রেখে দিয়ে গেল’। মেসেজটা দেখার পর দীর্ঘসময় চুপ করে বসেছিলাম। বার্তার প্রেরক এক নিম্ন মধ্যবিত্ত বাড়ির বউ। বারতিনেক আইভিএফ করেও তাঁর কোলে সন্তান এনে দিতে পারিনি। মাসছয়েক আগে তাঁকে আমার অপারগতার কথা জানাতেই তিনি ডুকরে কেঁদে বলেছিলেন, যে করেই হোক একটা সন্তান এনে দিন। নাহলে আমার স্বামী আমাকে বাপের বাড়িতে রেখে আসবে! সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। অথচ কী আশ্চর্য, পইপই করে ওই ওই মহিলা এবং স্বামীকে বলেছিলাম, সমস্যাটা একজনের নয়। দু’জনেরই। স্ত্রী’র ইউটেরাস যেমন দুর্বল তেমনই স্বামীর স্পার্মের গুণগত মানও ভালো নয়। অথচ দুর্ভাগ্যের বোঝা বয়ে বেড়াতে হল মহিলাকে!
ঘটনা দু’টো বললাম একটাই কারণে। এই যে পশ্চিমী দেশের অনুকরণে আমরা নীরদিবস পালন করছি তাতে লাভটা কার কোথায় হচ্ছে, কে জানে! এসব না করে সমাজে মহিলাদের ক্ষমতায়ন অনেক জরুরি কারও সমর্থনের প্রত্যাশা না করে একলা নিজের পথ বেছে নেওয়া। কেউ যদি নিজের থেকে পাশে দাঁড়ায় তাহলে স্বাগত! তা হচ্ছে কোথায়? এখনও বহু মেয়ে কাজ করার কথা ভাবে না। বরং ক্রমাগত চেষ্টা করে স্বামীর কাছে গুণবতী বউ হয়ে উঠতে। নিরন্তর প্রচেষ্টায় থাকে স্বামীর সন্তান ধারণ ও লালনপালন করে নিজেকে পরিবারের কাছে প্রয়োজনীয় করে তুলতে। তাতে আখেরে লাভবান হন কারা? বুদ্ধিমান মাত্রেই এর উত্তর জানেন।
এবার দুই ঘটনার মহিলা চরিত্রগুলির দিকে তাকান। একজন উচ্চপদস্থ সরকারি অফিসার, অন্যজন গৃহবধূ। অথচ তাঁরা আজ দু’জনেই এক সরলরেখায় দাঁড়িয়ে। কেন? কারণ তাঁরা মনে করেন সন্তান ধারণই নারীর জীবনের একমাত্র মোক্ষ! এর জন্য শুধু সমাজকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। কারণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ একাই করতে হয়, কখনও একাই চলতে হয়। এমন একা চলা অসংখ্য মানুষ যখন রাস্তায় নামেন তখন আর তাঁরা অসংখ্য হয়ে যান। হয়ে ওঠেন ক্ষমতার অধিকারী।