প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ
অকালবার্ধক্য ঠেকানোর উপায় কে না খোঁজে? মুখের ভাঁজ, দাগ সব মুছে যৌবন ধরে রাখতে কে না আগ্রহী? বার্ধক্য আসবে, সকলেই জানেন। তবু তার আসার পথটা ত্বরান্বিত না করে যদি একটু যত্নআত্তি করে যৌবনের পরশ থাকে মুখেচোখে, তা মন্দ কী! মুখচ্ছবি সুন্দর থাকলে মনও থাকে খুশি। মানসিকভাবে বুড়ো হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না।
বুড়িয়ে যাওয়া স্বাভাবিক
কসমেটোলজিস্ট রেশমা বানু জানালেন, বয়স বেড়ে যাওয়া একটা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। তাকে আমরা চাইলেও কেউ পুরোপুরি আটকাতে পারব না। কিন্তু বয়সের আগেই বুড়িয়ে যাওয়া তো ঠেকাতে পারি। সেই পথেরই সন্ধান রয়েছে কসমেটিক সায়েন্সে। কীভাবে? তাঁর কথায়, ‘বয়স বেড়ে যাওয়ার দুটো পথ। একটা হচ্ছে ‘ইনট্রিনসিক’, যেটা শরীরের ভেতরে জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আর একটা হচ্ছে ‘এক্সট্রিনসিক’, যেটা পরিবেশ ও জীবনযাত্রা এবং বাইরের নানা বিষয়ের উপরে নির্ভরশীল। এই দ্বিতীয় দিকটিকেই আমরা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
সেই প্রক্রিয়াটা কীরকম? রেশমা বললেন, ‘প্রথম যেটা আমাদের করতে হবে, সেটা হচ্ছে সান প্রোটেকশন-এর ব্যবহার। এটা ভীষণ জরুরি। নিয়মিতভাবে করা উচিত। সূর্য থেকে বাঁচতে প্রয়োজনমতো কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকা, লং স্লিভ জামাকাপড়, সানগ্লাসেস তো আছেই। কিন্তু সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম যেটা ব্যবহার করবেন, সেটা যেন ব্রড স্পেকট্রামের হয়। এসপিএফ ৩০ বা তার বেশি। তবে এমন সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করবেন, যেটা ওয়াটার রেজিস্ট্যান্ট বা জল লাগলেও ধুয়ে যায় না। অনেকে জানতে চায় কোন বয়স থেকে সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করা উচিত? তাদের জন্য কসমেটোলজিস্টের পরামর্শ, সানস্ক্রিন খুব কম বয়স থেকেই ব্যবহার করা যায়। স্কিন ক্যান্সার ফাউন্ডেশনের সুপারিশ অনুযায়ী, ছ’মাস বয়স অতিক্রান্ত হলেই শিশুকে সানস্ক্রিন দেওয়া যাবে। আর এসপিএফ-এর ক্ষেত্রেও বলা হচ্ছে ৩০ বা তার বেশি। সবসময়েই ৫০-এর উপরে সানস্ক্রিন খোঁজার কোনও দরকার নেই। সঙ্গে রাখতে হবে ময়েশ্চারাইজার। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে এটা খুব দরকার। যাদের তৈলাক্ত ত্বক, তাদের অনেকেই ভাবে তার ময়েশ্চারাইজার দরকার নেই। এটা একেবারেই ঠিক নয়। এই ধরনের স্কিনে অয়েল-ফ্রি ময়েশ্চারাইজার দিতে হবে। অনেকেই জানে না, অ্যান্টি এজিং ক্রিমেও সিংহভাগ থাকে ময়েশ্চারাইজার। মুখের যত্নে আর একটি বিষয় বললেন তিনি। মুখ পরিষ্কার করার সময় খুব হালকা ধরনের ক্লেনজার ব্যবহার করতে হবে। সাবান নয়।
সৈন্ধব লবণ
বাইরে থেকে এই সব উপকরণ ব্যবহার করে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা সম্ভব। কিন্তু ভেতর থেকেও আর্দ্রতা যাতে বজায় থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনেকে ভাবে, সারাদিন ধরে প্রচুর জল খেলেই শরীরের আর্দ্রতার ভারসাম্য থাকবে। তাই চার-পাঁচ লিটার জল খেয়ে নিল। এতে কিন্তু আদতে লাভ হয় না। অতিরিক্ত জল শরীর থেকে মূত্রের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। তাতে হাইড্রেশন বজায় থাকে না। কীভাবে তাহলে সেটা করা যাবে? রেশমার মতে, এটা করা সম্ভব অন্য পথে। পিঙ্ক সল্ট বা সৈন্ধব লবণ যদি সকালবেলা একগ্লাস জলে অল্প পরিমাণে গুলে খেয়ে নেওয়া যায়, তাহলে সার্বিকভাবে আর্দ্রতা বজায় থাকবে। সৈন্ধব লবণে সোডিয়ামের স্তর অনেকটাই নীচে। হাইপারটেনশনের রোগীরাও এটা খেতে পারেন। এই নুনে জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম, নিকেল এমন নানাবিধ খনিজ থাকে। যেগুলো শরীরে দরকার। এতে আমাদের সরাসরি সেলুলার হাইড্রেশন হয় অর্থাৎ কোষের মধ্যেই আর্দ্রতাকে ধরে রাখা যায়। সেলিব্রিটিরা এখন অনেকেই এই পদ্ধতি অনুসরণ করছেন।
এছাড়া দ্রুত বার্ধক্য এসে যাওয়ার পিছনে দায়ী ধূমপানে আসক্তি। আজকাল ১৮-১৯ বছর বয়স থেকে এধরনের নেশায় আসক্ত হচ্ছে ছেলেমেয়েরা। এত কম বয়েসে এই ধরনের আসক্তি অকালবার্ধক্যের জন্য দায়ী। রেশমার মতে, তামাকের নিকোটিন ত্বকের রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাতে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। এসে যায় কুঞ্চন। ধূমপানের অভ্যাস তাই একেবারেই পরিত্যাজ্য। এর সঙ্গে দরকার সুষম ডায়েট। তাতে কী থাকবে? সেগুলোর ব্যাপারে সঠিক পথ দেখাবেন ডায়েটিশিয়ান। প্রয়োজন এক্সারসাইজও। রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর ক্ষেত্রে শরীরচর্চা খুবই কাজে দেয়। সঙ্গে বাড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
মুখের ভাঁজ
অনেকের অভ্যাস থাকে অত্যধিক ভুরু কুঁচকে বা ভুরু তুলে কথা বলার। এধরনের অভ্যাস কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য ভালো নয়। কারণ এই ধরনের মৌখিক অভিব্যক্তি বারংবার হতে থাকলে কুঞ্চন বাড়বে। এই অভ্যেস থেকে সচেতনভাবে সরে আসতে হবে, বলছেন রেশমা। কারণ এর ফলে মুখে চিরস্থায়ী দাগ তৈরি হয়ে যায়। তাহলে ফেসিয়াল যোগা করা কি খারাপ? সেখানেও তো নানারকম মুখের অভিব্যক্তি থাকে যা বারবার করতে হয়। রেশমার মতে, তা একেবারেই নয়। ফেসিয়াল যোগা আর কথা বলার সময়কার অভিব্যক্তি এক বিষয় নয়।
মহিলাদের ত্বক
বুড়িয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মহিলাদের ত্বকে অন্য কিছু শর্ত কাজ করে। হরমোন সংক্রান্ত ভারসাম্য নষ্ট হওয়া তার মধ্যে একটা বড় কারণ। মেনোপজের পরে যেটা খুব বেশি হয়। এই সময়ে মহিলাদের ত্বকের কোলাজেন ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। একটা গবেষণা অনুযায়ী, মেনোপজ আসার প্রথম পাঁচ বছরে ৩০ শতাংশ কোলাজেন হ্রাস হয় মহিলাদের। রেশমা এই তথ্য দিয়ে বললেন, কোলাজেন হ্রাস পেলেই ত্বকে রিংকলস বা কুঞ্চন আসবে। রোমকূপ বা পোরস বড় হয়ে যায়। ৫০-এর আশপাশে ত্বকের যে পিএইচ লেভেল, সেটাও অনেকটা কমে যায়। তাতে ত্বক খুব সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। তাই ত্বকে ফ্রেকলস, হাইপারপিগমেন্টেশন বা লালচে ভাব— এসব আসে। এই বয়েসে পৌঁছে সংবেদনশীল ত্বক হওয়া সত্ত্বেও কেউ যদি নিয়মিতভাবে সানস্ক্রিন ব্যবহার না করেন, তাতে ত্বকের আরও ক্ষতি হয়। অর্থাৎ ত্বকে যে ভাঁজ পড়ার কথা ষাট বছর বয়সে, সেটা পঞ্চাশ বছরেই চলে আসে। ত্বকে চিরস্থায়ীভাবে সেই ভাঁজ রয়ে যায়।
মনে রাখবেন, যে কোনও বয়সেই সঠিক যত্ন শুরু করে দিতে পারেন। অনেকে ভাবেন, আমি তো চল্লিশে এসে সানস্ক্রিন ব্যবহার শুরু করেছি, দশ বছর বয়স থেকে মাখিনি। কত ক্ষতি হয়ে গেল! এটা ভেবে লাভ নেই। আর প্রতি বয়সের জন্য সঠিক চিকিৎসাও আছে।
রেশমার কাছে অনেকেই প্রশ্ন করেন, ‘ত্বকের পিছনে এত সময় দিতে পারব না। খুব অল্প সময় ব্যয় করে কী করা সম্ভব বলুন।’ তিনি তাঁদের ত্বকের ধরন অনুযায়ী ক্লেনজার, ময়েশ্চারাইজার এবং সানস্ক্রিন বেছে নিতে বলেন। তার সঙ্গে নাইট ক্রিমে রাখতে বলেন রেটিনল। এগুলো সবই মেডিকেটেড হওয়া ভালো। রেটিনল আবার গর্ভাবস্থায় ব্যবহার করা যাবে না। সপ্তাহে এক বা দু’দিন ব্যবহার করা যায়। ০.০২% রেটিনল দেওয়া হয় ত্বকের ধরন বয়স বুঝে।
এরপর কেউ যদি চান ফেস লিফট বা মুখে অন্য ধরনের পরিবর্তন ঘটাতে, যেমন উজ্জ্বলতা বাড়ানো ইত্যাদি, সেখানে রেশমারা ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা করেন। এই পদ্ধতিতে ‘এপিডারমিস রিসারফেস’ করার লক্ষ্য থাকে। ক্ষতিগ্রস্ত এপিডারমিস সরিয়ে সেখানে পাতলা আস্তরণ বিশিষ্ট স্তরের কোষ রিপ্লেস করা হয়। এতে নতুন কোলাজেন তৈরি করা সম্ভব। এইরকম পদ্ধতির মধ্যে আছে কেমিক্যাল পিলিং, স্কিন টাইটেনিং, মাইক্রো নিডলিং। এছাড়া আছে ফিলার্স, বোটক্স।
মাইক্রোনিডলিং
ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এর মধ্যে কোন প্রক্রিয়াটি রেশমা পরামর্শ দেন? তাঁর কথায়, ‘মাইক্রোনিডলিং। এতে কোলাজেন ১০০ শতাংশ স্টিমুলেট হয়। কাটাছেঁড়ার পরে যেভাবে ত্বক আপনা থেকেই সেরে ওঠে। বডি মেকানিজমে আপনা থেকেই কোলাজেন তৈরি হয়, মাইক্রোনিডলিং-ও একেবারেই একইরকম প্রক্রিয়া। এতে কারও কোলাজেন বাড়তে একমাস সময় লাগতে পারে, কারও বা দু’মাস। যেভাবে আমরা দেখি কারও কাটাছেঁড়া সারতে সাত দিন লাগে, কারও দু’সপ্তাহ বা তার বেশি সময় লেগে যায়। কিন্তু সারবেই। ২৫ বছরের উপরে যে কোনও বয়সি মানুষ এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে পারেন, জানাচ্ছেন রেশমা। এতে ত্বকে কোলাজেন বাড়ে, তার ফলে ত্বক আবার টানটান হয়।
মাইক্রোনিডলিংয়ে থাকে পিআরপি বা প্লেটলেট রিচ প্লাজমা এবং জিএসপি। এই প্রক্রিয়ায় তে ৫-১০ মিলি রক্ত টেনে নেওয়া হয় শরীর থেকে। সেটা মেশিনে দিয়ে রোগীর রেড ব্লাডকে হোয়াইড ব্লাড থেকে আলাদা করা হয়। ছোট ছোট মাইক্রো ইনজুরি তৈরি করা হয় ত্বকে, তার মাধ্যমে আবার ত্বকে ইনফিউজ করা হয় হোয়াইড ব্লাড।
এই প্রক্রিয়ায় খরচ কেমন পড়ে? কোন ব্র্যান্ডের জিনিস ব্যবহার হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে এই খরচ। কেমিক্যাল পিলিং-এ দু’হাজার টাকা থেকে খরচ শুরু বলা যায়। মাইক্রোনিডলিং কার কতগুলো দরকার, তার উপর খরচ নির্ভর করে। কারও হয়তো দুটো লাগে, কারও তিনটে। সেটা অনুযায়ী খরচ নির্ধারিত হয়। প্রতি সিটিংয়ে খরচ ২-৩ হাজার টাকার মতো। সময় লাগে ৩০-৪০ মিনিট। কেমিক্যাল পিলিং-এ ‘স্কিন কারকেশন’ সম্ভব। বিভিন্ন কেমিক্যাল পিলিং বিভিন্ন ফল দেয়। কারও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো, কারও দাগ কমিয়ে ত্বকের নিখুঁত ভাব ফেরানো ইত্যাদি। তবে সব ক্ষেত্রেই কোলাজেন বৃদ্ধি হয়। এই প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তর থাকে। কারও লাগে সুপারফিশিয়াল স্তরে। কারও লাগে মিডিয়াম স্তর। এর সঙ্গে রিঙ্কলস কমানো, হাইপার পিগমেন্টেশন কমানোর অপশনও থাকে। এতেই বুড়িয়ে যাওয়া আটকানো সম্ভব।
কারা এই ধরনের চিকিৎসা করান? পেশার প্রয়োজনে শুধুই কি সেলিব্রিটি অভিনেতা বা অভিনেত্রী বা মডেলরা? রেশমার মতে, এই প্রয়োজনটা সাধারণ মানুষের মধ্যে নেই ভাবলে ভুল হবে। এই চাহিদা অনেকের মধ্যেই আছে। কিন্তু চিকিৎসা করার সঠিক জায়গাটার খোঁজ হয়তো তাঁরা জানেন না। কসমেটোলজিস্টের কথায়, ‘সুন্দর হতে কে না চায় বলুন? মুখের একটা দাগ কারও কি ভালো লাগে? কোথায় গিয়ে চিকিৎসা করানো যাবে, জানলে অনেকেই আগ্রহী হন। এই প্রবণতাই দেখেছি রোগীদের মধ্যে।’ অনেক রোগী আসেন একেবারে ৫০ বা ৬০ পেরিয়ে। যারা কাজ ও সংসারের চাপে এতদিন কোনও ট্রিটমেন্ট করাতে পারেননি। এখন মনে হচ্ছে নিজের দিকে একটু তাকাই, নিজেকে ভালো রাখি। তাঁদের জন্য বোটক্স, ফিলার্সই পথ। ছ’মাসে একবার করে কারেকশন হয়তো তাঁকে করাতে হল। সঙ্গে মাইক্রোনিডলিং-ও চলতে পারে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
এই ধরনের প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পর চোখের চামড়ার ভাঁজ বা ঠোঁটের পাশে ভাঁজ না হয় মুছে গেল কিছু দিনের জন্য। কিন্তু তার খেসারত অন্যভাবে দিতে হবে না তো? কারণ বয়স বাড়লে হরমোন সংক্রান্ত নানা পরিবর্তন মানুষের শরীরে ঘটতে থাকে। রেশমা বলছেন, ‘শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের সঙ্গে কসমেটিক্যাল পরিবর্তনের সেভাবে কোনও সংগযোগ নেই। আমরা বাহ্যিক দিক থেকে সবটা করছি। অনেকে বলেন, কোলাজেন বাড়ানোর ট্যাবলেট খাচ্ছি। ট্যাবলেট থেকে ১০-১২ শতাংশ কোলাজেন ত্বকে কাজ দেয়। বাকিটা নষ্ট হয়। তাই কোলাজেন ট্যাবলেট খেয়ে বিশেষ লাভ হয় না। অনেকে ভিটামিন ই ক্যাপসুল ভেঙে জেল ত্বকে মাখেন। ভাবেন, সরাসরি ত্বকে ভিটামিন ই চলে যাচ্ছে। এটাও সম্ভব নয়। কারণ ভিটামিন ই বেশ বড় মলিকিউল। এটা চট করে ত্বকে ওভাবে প্রবেশ করতে পারে না। এই ভিটামিন তবু খাওয়া ভালো। স্কিন কেয়ার নেওয়ার অর্থ প্রচুর প্রোডাক্ট কিনে নিলাম, এটাও অনেকে ভাবেন। সেগুলো কিন্তু সবারই কাজ দেবে না। টোনার, ময়েশ্চারাইজার, সেরাম পর পর মাখা মানে স্কিনে স্তরের পর স্তর তৈরি হয়ে যাওয়া। দুটো স্তরের পরে ত্বকে আর কোনও স্তর কার্যকরীভাবে সক্রিয় হতে পারে না। তৃতীয় স্তর থেকে আর কাজ করে না।’ কিন্তু সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞরা যে বলেন, সিটিএম অর্থাৎ ক্লেনজিং, টোনিং এবং ময়েশ্চারাইজিং অবশ্য কর্তব্য? রেশমা জানাচ্ছেন, টোনিং সেভাবে প্রয়োজন নেই এখন। আগেকার ক্লেনজার পিএইচ স্তর মেনটেন করে বাজারে আসত না। এখন মেডিকেটেড সব প্রোডাক্ট-এ পিএইচ স্তর রক্ষা করা হয়। সাবান বা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ না ধুয়ে ঠিকঠাক পিএইচ স্তরযুক্ত ক্লেনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন। তারপর ময়েশ্চারাইজার ও সানস্ক্রিন। ত্বকের আলাদা করে কোনও সমস্যা না থাকলে এর বেশি কিছু যত্ন লাগে না।
কোরিয়ান মিথ
কোরিয়ান বা ‘কে বিউটি’ নিয়ে এখন বাজারে খুব মাতামাতি হচ্ছে। অনেকেই লাফিয়ে পড়ে ত্বকের যৌবন ধরে রাখতে ‘কে বিউটি’ প্রোডাক্ট কিনছে। এটা কি ঠিক পথ? রেশমার মতে, ‘একেবারেই না। ‘কোরিয়ান গ্লো’ কোরীয়দের জন্য ঠিক আছে। ওদের ত্বকের সঙ্গে এবং ওদের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে সেটা ব্যবহার হচ্ছে। ওদের ত্বকের ধরন আর আমাদের ত্বকের ধরন তো এক নয়। তাই এই ধরনের প্রক্রিয়ায় যে উজ্জ্বলতা আসছে, অনেক বেশি পরিমাণে প্রোডাক্ট ব্যবহার করা হয় তাতে। আমাদের মুখের ত্বকের জন্য সেটা ঠিক নয়। এতে মুখের ত্বকে আরও বেশি ‘ইরিটেশন’ বা জ্বালাভাব তৈরি হতে পারে। আমাদের ত্বকের ধরনের জন্যই সেটা হয়।’
তিনি জানালেন, অনেকে আবার কম এসপিএফ-এর সানস্ক্রিন লোশন নিয়েও অভিযোগ করেন। মনে রাখবেন, আমাদের দেশের আবহাওয়া এবং ত্বক অনুযায়ী, এসপিএফ ৫০ প্রয়োজন নেই। এসপিএফ ৩০ যথেষ্ট। বিদেশিদের ত্বকে মেলানিন অনেক কম থাকায় রোদের সংস্পর্শে দীর্ঘক্ষণ থাকলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাই ওদের ৫০ বা তার বেশি এসপিএফ প্রয়োজন। আমাদের ত্বকের দাগছোপ ইত্যাদি থাকে। পুরোপুরি ব্লেমিশেস চলে যায় না আমাদের ত্বক থেকে। অ্যাকনে-ফ্রিও হয় না। কিছু প্রক্রিয়ায় ওগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায় শুধু। আমাদের আবহাওয়াতেই এই সব সম্ভাবনা তৈরি হয়। তার মধ্যে ভেতরের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে হবে। কে বিউটি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে তাই বি বিউটি অর্থাৎ ‘বেঙ্গল বিউটি’-র কথা ভাবুন। নিজেকে মেনে নিতে শিখতে হবে।’