কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। উপার্জন ভাগ্য ভালো। কর্মে উন্নতির যোগ আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা মিলবে। ব্যবসা ... বিশদ
পাচারকারীদের হাতে পড়ে কেউ খুইয়েছেন সম্ভ্রম। কেউ বা আবার হারিয়েছেন স্বাধীনতা। অতি-আধুনিক সময়ে দাঁড়িয়ে কাটাতে হচ্ছে দাসত্বের জীবন। কেউ নিজের অজান্তেই পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছেন। কারও আবার প্রতিবাদ করার মতো সুযোগটুকুও মেলেনি। তার আগেই বদলে গিয়েছে ঠিকানা। ছোট একটা ভুল। এক লহমার অসতর্কতা। মানব পাচারকারীরা অপেক্ষায় থাকে এমনই মুহূর্তের। বুঝে ওঠার আগেই শিকারকে জড়িয়ে ফেলে নিজেদের জালে। মাকড়সার মতো। যা কেটে বেরনোর কোনও পথ থাকে না। কিছু মানুষের যৌন লালসা চরিতার্থ করার জন্যও মানব পাচারের ঘটনা ঘটে। এই ধরনের ক্রেতার সংখ্যাও আজকের দুনিয়ায় ভয়াবহভাবে বাড়ছে! এক্ষেত্রে পরিস্থিতির সবচেয়ে বেশি শিকার হয় মহিলা এবং শিশুরা। দারিদ্র যার প্রধান কারণ। সেক্স ট্র্যাফিকিং রুখতে সরকারি সহযোগীদের পাশাপাশি প্রয়োজন বেসরকারি সংস্থাগুলির উদ্যোগও। সেক্স ট্র্যাফিকিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে মানুষকে অবগত করতে এগিয়ে আসছে নতুন প্রজন্ম। বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। ভারতের পড়ুয়ারা যেমন এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচার চালাচ্ছেন, তেমনই উদ্যোগী হয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ক্রিশ্চিয়ান ইউনিভার্সিটির ডঃ ভ্যানেসা বাউশে এবং তাঁর ছাত্রছাত্রীরা। সেখানকার কলেজে প্রচার চালাচ্ছেন তাঁরা।
পাচারকারীদের নজরে থাকে দেনায় ডুবে যাওয়া মানুষরাও। টাকা ফেরত দিতে না পারার কারণে তাঁদের বিক্রি করা হয় দেশের অন্য কোনও প্রান্তে বা দেশের বাইরে। কেউ কেউ আবার পাচারকারীর মুখের কথায় ভরসা করে কাজ পাওয়ার আশায় পাড়ি দেয় বিদেশে। সেখানে তাঁদের ভবিষ্যৎ বলতে বিনা বেতন বা নামমাত্র বেতনে শুধুই দিনরাত খেটে যাওয়া। ঠিকমতো দু’বেলা খাবারও জোটে না তাঁদের। বিশ্বজুড়ে পরিস্থিতিটা এতই ভয়াবহ! আর তাই এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে প্রতিটা দেশ। ভারত সহ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই অপরাধকে সমূলে ধ্বংস করার লক্ষ্যে। প্রতি মুহূর্তে চলছে আলোচনা। মানব পাচারকারীদের রুখতে কড়া থেকে আরও কড়া আইন তৈরি হচ্ছে। আক্রান্তদের রক্ষা করতে নেওয়া হচ্ছে একের পর এক পদক্ষেপ। নানান উদ্দেশে চলতে থাকা এই মানব পাচার রুখতে রাষ্ট্রশক্তির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে পাশে নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে প্রতিরোধ। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে কোনও দেশই এখনও পর্যন্ত এই ভয়াবহ অপরাধকে সম্পূর্ণভাবে রুখতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। একে অপরের থেকে শেখার মধ্যে দিয়ে ধাপে ধাপে লক্ষ্যপূরণের দিকে এগচ্ছি। নতুন নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। পাশাপাশি চালু থাকা কার্যপ্রণালীগুলিকে আরও নিখুঁত করে তোলার ক্ষেত্রেও কোনও ফাঁক রাখা হচ্ছে না।
মানব পাচারের এই জাল ছড়িয়ে রয়েছে ভারতেও। তা রুখতে ভারত সরকার ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে একজোট হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মানব পাচারের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারপর্ব শেষ করে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা, পাচারকারীদের খপ্পরে পড়া মানুষদের রক্ষা করা এবং মানব পাচারের মতো ঘটনা রুখতে একের পর এক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এই কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কলকাতাস্থিত মার্কিন কনস্যুলেটে সম্প্রতি আয়োজিত হল অষ্টম বার্ষিক ‘অ্যান্টি-ট্র্যাফিকিং ইন পার্সনস ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নস কনক্লেভ’। মানব পাচার রুখতে কী কী কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয় এই অনুষ্ঠানে। দুই দেশের সরকার, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্বের পাশাপাশি তরুণরাও এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। পাচারবিরোধী লড়াই আরও জোরদার করার জন্য আন্দোলনকারীদের ক্ষমতায়ন নিয়েও আলোচনা হয় এই অনুষ্ঠানে। বিভিন্ন পরিকল্পনা ও কার্যপ্রণালী নিয়ে আলোচনা ছাড়াও দেখানো হয় বিশেষ একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র। পাচারকারীদের হাত থেকে উদ্ধার হওয়া আটজন নিজেদের অভিজ্ঞতা নিয়ে তৈরি করেছেন এই স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রটি, ‘এন্ডিং হিউম্যান ট্র্যাফিকিং: ওয়ান স্টোরি অ্যাট এ টাইম’। পাচারের অন্ধকার জগত থেকে আলোর পথে ফেরার যে লড়াই, সেই অভিজ্ঞতা নিয়েই তৈরি করা স্বল্পদৈর্ঘ্যের এই চলচ্চিত্রটি। এছাড়া, ইউএস অ্যাডভাইসরি কাউন্সিল অন হিউম্যান ট্র্যাফিকিংয়ের মাধ্যমেও পাচারকারীদের হাত থেকে উদ্ধার হওয়া মানুষদের অভিজ্ঞতার কথা জানতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
মানব পাচার রুখতে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় রাজ্য সরকারের উদ্যোগে জেলা পুলিসের তরফে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে চালু করা হয় স্বয়ংসিদ্ধা প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মানব পাচারবিরোধী লড়াইয়ে স্কুলপড়ুয়া ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে আরও বেশি করে যুক্ত করছে পুলিস। পাচার রুখতে গ্রামে গ্রামে বাবা-মায়েদেরও সচেতন করা হচ্ছে। গত বছরের আলোচনাসভাতেও স্বয়ংসিদ্ধা প্রকল্পের সাফল্য তুলে ধরা হয়েছিল। তখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মানবপাচার রুখতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে একজোট হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে কাজ করছে, তা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি, দেশের অন্য যে সমস্ত রাজ্যগুলি মানবপাচার রুখতে কাজ করছে, তাদেরও স্বয়ংসিদ্ধা প্রকল্পটির বিষয়ে অবহিত করা হয়। আন্তর্জাতিক স্তরে মানবপাচারের মতো ঘৃণ্য অপরাধ সমূলে ধ্বংস করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী রাষ্ট্র ভারত। তবে এই লড়াইয়ের দায় শুধুমাত্র সরকারের একার নয়। এগিয়ে আসতে হবে সামাজিক সংগঠনগুলিকেও।
লেখক: মার্কিন কনসাল জেনারেল, কলকাতা