কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। উপার্জন ভাগ্য ভালো। কর্মে উন্নতির যোগ আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা মিলবে। ব্যবসা ... বিশদ
তার কারণ, সর্বভারতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস জোটই বলুন কি ইউনাইটেড ইন্ডিয়া—নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সব দিক থেকে সমানে সমানে দাঁড়াতে পারে এবং একটা ধুন্ধুমার লড়াইয়ের প্রত্যাশা জাগাতে পারে—এমন মুখ একপ্রকার বিরলই বলা চলে। মোদি-বিরোধী শিবিরের প্রথম সারির নেতানেত্রীদের অনেকেরই রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা এবং ভোটযুদ্ধের কলাকৌশলে দক্ষতা আছে সন্দেহ নেই। চন্দ্রবাবু, শরদ যাদব, দেবেগৌড়া, অখিলেশ, ফারুক আবদুল্লা, মায়াবতী, কেজরিওয়াল— এঁদের কারও রাজনৈতিক দক্ষতা যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন নেই। কংগ্রেস শিবিরে রাহুল গান্ধীও এখন অনেক পরিণত এবং তাঁর জনপ্রিয়তাও ক্রমবর্ধমান। ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে ‘মুখের মিলে’র সৌজন্যে তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কাও ভোট ময়দানে নেমেই উত্তরপ্রদেশে ‘ঝড়’ তুলেছেন। অবশ্য সে ঝড় ভোটবাক্স অব্দি কতটা গড়াবে তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের একাংশে যথেষ্ট সংশয় আছে।
মোদ্দা কথা, দেশে যোগ্য রাজনীতিকের অভাব নেই, তাঁদের অনেকের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাও আছে যথেষ্ট। কিন্তু, আসমুদ্রহিমাচল একটা জন-আবেগ গণজাগরণ ঘটানোর ক্ষমতা তাঁদের আছে কার? এঁদের প্রত্যেককে গোটা ভারত চেনে। কংগ্রেস ও তার মহান নেতানেত্রীদের ঐতিহ্য রাহুল গান্ধীকে বাড়তি মাইলেজও দিচ্ছে নিশ্চয়ই। দেশে শেষ পাঁচ বিধানসভার ভোটফলে পদ্মদলের খারাপ রেজাল্টের পর রাহুলজি ও তাঁর দল কংগ্রেস হয়তো অতিরিক্ত কিছু অক্সিজেনও পেয়েছেন। তবে, তথ্যভিজ্ঞরা বলছেন—পুলওয়ামা-কাণ্ডের বদলা হিসেবে সার্জিকাল স্ট্রাইক-টু, লন্ডনে ঋণখেলাপে অভিযুক্ত নীরব মোদির গ্রেপ্তার এবং সর্বশেষ উপগ্রহ ধ্বংসের ক্ষমতাসম্পন্ন মিসাইলের সফল উৎক্ষেপণের মতো ঘটনাগুলোকে হাতিয়ার করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভোটযুদ্ধের আগেই মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে তাঁর বিরোধীদের পিছনে ফেলে দিতে চাইছেন। নির্বাচনী সভা সমাবেশের বক্তৃতায় প্রতিটি ঘটনাকে তাঁর সরকারের এক একটি ‘মহাসাফল্য’ হিসেবে চিহ্নিত করছেন। এই মহাসাফল্যের বাণী সাধারণ দেশজনতার মনে নোটবন্দি-জিএসটির যন্ত্রণা ছাপিয়ে উঠে ভোটযুদ্ধে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক তথ্যভিজ্ঞদের অনেকেই। স্বচ্ছ দুর্নীতিমুক্ত ভারত, দু কোটি চাকরি, গরিবের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ করে টাকা জমার মতো লোভনীয় স্বপ্নময় সব প্রতিশ্রুতিভঙ্গের ব্যথা হতাশা ভুলিয়ে দিয়ে এই ভোট-মরশুমে জনমনের একাংশে ফের একবার মোদিজির ভাবমূর্তির পুনর্মূল্যায়নের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলতে পারে।
রাজনৈতিক তথ্যভিজ্ঞদের মতে, মুখে যে যাই বলুন, কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী বা প্রিয়াঙ্কাই হোন কি অন্য বিরোধী নেতানেত্রী কেউই এই জায়গাটায় মোদিজির সঙ্গে ঠিকঠাক এঁটে উঠতে পারছেন না। এবং এখানেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়োজনীয়তা ও সহযোগ অপরিহার্য হয়ে উঠছে। তাঁর লড়াকু অতীত, বাংলার বুক থেকে সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামেদের ৩৪ বছরের অপশাসন নাশ করে নতুন বাংলা গড়ার উদ্যোগ ও তাতে বিশ্বমঞ্চে কন্যাশ্রীর মতো ঐতিহাসিক সব সাফল্য, মোদিরাজের নানা কাণ্ডের প্রতিবাদে তাঁর অনমনীয় দৃঢ়তা অকুতোভয় পদক্ষেপ এবং সর্বোপরি বাংলার মা-মাটি-মানুষের সুখেদুঃখে আনন্দে-উৎসবে সংকটে-বিপর্যয়ে সারাক্ষণ সর্বতোভাবে পাশে থাকার সুনাম তাঁকে কেবল বাংলায় নয়, গোটা দেশে আজ কার্যত একটি জীবন্ত ‘মিথ’, প্রতিবাদের একটি অনন্য প্রতীকে পরিণত করেছে। দেশের আর পাঁচটা রাজ্যের মতো একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েও তাই কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা, গুজরাত থেকে অরুণাচল দেশজনতার মহলে মমতার খ্যাতি ও গ্রহণযোগ্যতা আজ প্রশ্নাতীত। বিশেষ করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে দেশের মানুষ আজ তাঁকেই দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরেন। অন্তত, বিভিন্ন রাজ্যের বেশ কয়েকজন বন্ধুর কথায় তেমনটাই মনে হয়েছে। বলতে কী, ওই লড়াকু প্রতিবাদী সৎ ভাবমূর্তি এবং দেশজনতার সর্বস্তরে এই গ্রহণযোগ্যতার জন্যই মোদিজির বিরুদ্ধে তাঁকেই নেতৃত্বে চাইছে বিরোধী জোট। কংগ্রেস হয়তো
এক্ষেত্রে কিছুটা দ্বিধায়, আর তাই হয়তো বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী মুখ প্রসঙ্গে অনেক আগেই রাহুলজি জানিয়ে দিয়েছিলেন—ভোটের ফল দেখে সেটা ঠিক হবে!
তবে, কংগ্রেস দ্বিধায় থাকলেও বাদবাকি জোটে মমতাই যে মধ্যমণি তাতে সন্দেহ নেই। বিশাখাপত্তনমে আজকের সভা থেকেই সেটা আরও একবার স্পষ্ট হয়ে যাবে বলেই আমাদের ধারণা। এবং জাতীয় স্তরে তাঁর এই অগ্রগণ্য অবস্থান যে এ রাজ্যের বিরোধীদের রীতিমতো শঙ্কিত করে তুলেছে তা তাঁদের রাজনৈতিক আচার-আচরণেই স্পষ্ট। এ রাজ্যের সিপিএম কংগ্রেস বিজেপি সকলেরই রাজনৈতিক আক্রমণের এক এবং অদ্বিতীয় লক্ষ্য মমতা। দেশ রাজনীতির জাতীয় স্তরে মোদি-বিরোধী শিবিরের সবচেয়ে জনপ্রিয় সবচেয়ে প্রভাবশালী মুখ হওয়া সত্ত্বেও বাংলার ভোটযুদ্ধের ময়দানে প্রধান চাঁদমারি হয়ে উঠেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে যেদিক থেকে পারছেন তাঁকে লক্ষ্য করে দিবারাত্র এন্তার অভিযোগ আর কুৎসার বিষতির ছুঁড়ে চলেছেন!
সে আক্রমণ যে সবসময় রাজনৈতিক থাকছে এমনও নয়। অনেক সময়ই তা নেমে যাচ্ছে একেবারে ব্যক্তিগত স্তরে, এমনকী মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার পরিজনের দিকেও! যাঁরা সারাক্ষণ মুখ্যমন্ত্রী মমতার রাজনৈতিক সৌজন্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এইসব আক্রমণের সময় তাঁদের সে তালজ্ঞান কতটা থাকছে তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে। আমরা সেসবের উত্তর খুঁজতে যাচ্ছি না। সেসবের উত্তর সময়ই দেবে। তবে, মজার কথাটা এই যে, রাজ্যের মমতাবিরোধী দলগুলোর দিল্লি নেতারাও ভোট প্রচারে এসে একই কাণ্ড করছেন! কিছুদিন আগে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী রাজ্যে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা এবং তাঁর দলের কাজকর্ম নিয়ে এক দঙ্গল অভিযোগ করে গেলেন। তৃণমূলে নবাগত মৌসম বেনজির নুর সম্পর্কেও কিছু বাঁকা কথা বললেন। মৌসমের অপরাধ, নানা কারণে বীতশ্রদ্ধ হয়ে তিনি কংগ্রেস ছেড়ে মমতার দলে যোগ দিয়েছেন এবং প্রার্থী হয়েছেন। অথচ, এবারের ভোটে এমন দলবদলের ঘটনা অনেক ঘটেছে। তৃণমূলে বর্জিত বা গুরুত্ব হারানো বেশ কয়েকজন গেরুয়া শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের অনেকেই বিজেপির প্রার্থীও হয়েছেন। হতেই পারেন। যাঁর যেমন রুচি। তাতে বলার কী আছে? রাহুলজি কিন্তু যতদূর মনে পড়ছে বিজেপিতে নবাগতদের নিয়ে তেমন কোনও মন্তব্য করেননি! মৌসমকে নিয়ে করেছেন! কারণটা বলা বাহুল্য। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহও একইভাবে মমতাকে রাজনৈতিক আক্রমণ করে চলেছেন!
আর প্রধানমন্ত্রী মোদিজির তো কথাই নেই। উঠতে বসতে ‘মমতাদিদি...’ হেঁকে অভিযোগের পাহাড় খাড়া করে দিচ্ছেন। সেটা অবশ্য অস্বাভাবিক নয়। তার কারণ, গেরুয়া শিবিরের সুপ্রিমো নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন— জাতীয় স্তরে তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ মমতাই। বিরোধী জোটের প্রধান চালিকাশক্তিও মমতা। তাঁকে ঘায়েল করতে না পারলে লোকসভা-যুদ্ধে মুশকিল হতে পারে। সে জন্য মূল যুদ্ধের বেশ খানিকটা আগে থেকেই বাণ শানানো শুরু করে দিয়েছেন মোদিজি। রাহুলকে ছোট ছেলে বলে রেয়াত করলেও মমতা ক্ষেত্রবিশেষে মোদিজি অমিত শাহের মন্তব্যের পাল্টা দিচ্ছেন। কিন্তু, কে না জানেন—মমতার মূল জবাব মুখে নেই। আছে তাঁর নিষ্ঠায়, কাজে। সিপিএমের ফেলে যাওয়া মৃতপ্রায় বাংলাকে মাত্র কয়েক বছরে যিনি উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে বিশ্ববাংলায় উত্তীর্ণ করে দিতে পারেন—সামান্য কটা রাজনৈতিক অভিযোগে তাঁর কি সত্যিই কিছু এসে যায়? পথেঘাটে মানুষজন কী বলছেন জানেন, বলছেন— মমতার নজিরবিহীন উন্নয়নই বিরোধীদের সব অভিযোগের জবাব দেবে। দেখা যাক। ২৩ মে তো খুব দূরে নয়।