উচ্চতর বিদ্যায় সফলতা আসবে। সরকারি ক্ষেত্রে কর্মলাভের সম্ভাবনা। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে মানসিক অস্থিরতা ... বিশদ
উত্তর—দেখতে গেলে উভয়ই সমান, উভয়ই মনের discipline (শৃঙ্খলা)। দুঃখী-জীবের যখন সেবা কচ্ছ, তখন তোমার চিত্ত করুণায়, সহানুভূতিতে, প্রেমে কোমল হচ্ছে, নির্ম্মল হচ্ছে। তাই, দুঃখীর সেবায় তোমার চিত্তসংযমের ক্ষমতা বর্দ্ধিত হচ্ছে। এই করুণাটুকু যদি না থাকে, হৃদয় যদি তোমার সহানুভূতিতে গ’লে না যায়, তা হ’লে কি তোমার চিত্ত-সংযমের ক্ষমতা লাভ হবে? মোটেই না। প্রেমহীন চিত্ত সর্ব্বস্ব দান ক’রেও সংযম লাভ করতে পারে না। যতক্ষণ তুমি করুণায় আপ্লুত না হচ্ছ, ততক্ষণ রোগীর সেবাই বল, ক্ষুধার্ত্তকে অন্নদানই বল, মূর্খকে বিদ্যা-বিতরণই বল, মোহান্ধকে ব্রহ্মজ্ঞানের পন্থা-প্রদর্শনই বল, আর পরাধীনকে স্বাধীনতার পথে টেনে নেওয়ার চেষ্টাই বল, কোনটাতেই তোমার সংযম-লাভের সহায়তা হবে না। প্রাণের ভিতরে সহানুভূতি না থাক্লে আর্ত্তের সেবা ক’রেও সে আনন্দ পাওয়া যায় না, যা চিত্ত সংযমের সহায়ক। আবার বাহ্যতঃ কোনও প্রকার সেবা না ক’রেও সে মানসিক সম্পদটী লাভ করা যায়, যদি দুঃখীর দুঃখ-স্মৃতিতে প্রাণের মাঝে করুণার জোয়ার বইতে থাকে। আসল কথাটাই ত’ হ’ল মন নিয়ে। মনকে সংযমের অনুকূল করার জন্য এখন সূক্ষ্ম পথেই চল, আর স্থূল পথেই চল। যারা স্থূল পথেই চলে, তাদের সংযম-লাভ বিলম্বে হয়। যারা সাধ্যমত দুই প্রণালী নিয়েই চলে, মনকে নিরিবিলি ব’সে একাগ্র কত্তেও যেমন চেষ্টা করে, আবার দীন-দুঃখীর সেবা ক’রে মৈত্রী-করুণা প্রভৃতি চিত্তভাবেরও অনুশীলন করে, তারা এগিয়ে যায় অতি দ্রুত।
প্রশ্ন—কিন্তু আমার যদি চিত্তকে একাগ্র কর্ব্বার জন্য নিরিবিলি চেষ্টা সম্ভব না হয়?
উত্তর—সম্ভব না হবার কোনও সঙ্গত কারণ নাই। অন্য সময় না মেলে রাত্রিতে শোবার আগে, আর শেষ রাত্রিতে ঘুম থেকে জেগে কতক্ষণ চিত্তকে সচ্চিন্তায় লাগিয়ে রাখবার পদ্ধতিবদ্ধ চেষ্টা সবাই কত্তে পারে। যার কোনও প্রকারেই তেমন সময়টুকু হবে না, বল্তে হয় যে, মন নিয়ে কসরৎ করার তার রুচি নেই।
প্রশ্ন—বাস্তবিকই তাই। আমাদের এখন আর ধ্যানজপে প্রকৃতই রুচি নেই। প্রায় সময়ই আমাদের মনে হয় যে, ধ্যানজপ এসব শুধু সাধুদেরই জন্য, আমাদের জন্য নয়।
উত্তর—তোমরাও যে সাধু নও, সে কথা বল্লে কে? কৌপীন প’রে গুহাবাসী হ’লেই সাধু হবে, আর বন্দুক কাঁধে ক’রে লড়াই কল্লেই সাধু হবে না, এসব কথা নিতান্ত গ্রাম্য লোকের। যে সাধন করে, সেই সাধু।
অখণ্ড সংহিতা শ্রী শ্রী স্বামী সরূপানন্দ পরমহংস দেবের উপদেশ থেকে