উচ্চতর বিদ্যায় সফলতা আসবে। সরকারি ক্ষেত্রে কর্মলাভের সম্ভাবনা। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে মানসিক অস্থিরতা ... বিশদ
“ঈশাবাস্যমিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ।
তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্য স্বিদ্ধনম্।।”
বলা হয়েছে—ঈশ্বর সমগ্র জগৎকে নিজ পক্ষপুটে আচ্ছাদিত করে রয়েছেন। তিনিই আবার জগতের সব কিছুতে অনুস্যূত হয়ে রয়েছেন অর্থাৎ এ জগতের সব কিছু তাঁরই। অতএব ‘আমি-আমার’ জ্ঞান বর্জন করে, লোভকে সংযত ক’রে, ত্যাগের মাধ্যমে ভোগ কর, অপরের ধনে লোভের দৃষ্টি দিও না। একটা চরম জ্ঞানের আলোকময় দৃষ্টিতেই ত্যাগকে দেখা হয়েছে।
শ্রীঠাকুর সত্যানন্দদেব উপনিষদের এই বাণী আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছেন—“ব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু আছে, সবই ঈশ্বরের দ্বারা আবৃত। …এ জগৎ নামরূপের জগৎ, প্রলোভনের জগৎ। আমাদের করতে হবে কি জানো? প্রলোভন থেকে মন সরিয়ে এনে ভগবানের দিকে মোড় ফিরিয়ে দিতে হবে। ঠাকুরকে সব নিবেদন করতে হবে। …এই জগতের ধনজন সবেরই অধিকর্তা তিনি। ধন কার? ভগবানেরই। এই বোধ নিয়ে ত্যাগের মাধ্যমে অর্থাৎ তাঁকে নিবেদনের মাধ্যমে ভোগের পথ গ্রহণ কর। এই হোল সনাতন ঋষি প্রদর্শিত পথ। একেবারে সব ত্যাগ করতে বলছেন না। ভোগ কর, কিন্তু ত্যাগের বাদী সুরটা নিয়ে। …অপরের ধন অপহরণ করো না। অপরের ধন-গৃধ্নু হবে না। কি চমৎকার কথা! মানুষ বড়লোক বা ধনী হয় অপরের ধন হরণ করে আর সে যে-কোনভাবে বা উপায়েই হোক। কিন্তু অপরের ধন হরণ করার ইচ্ছা ত্যাগ করে নিজেরটুকুতে তুষ্ট থেকে, ভোগ করে গেলে জগতে অনেক শান্তি বিরাজ করে। এত হানাহানি, কাড়াকাড়ি, দ্বন্দ্বসংঘাত, যুদ্ধমারামারি সবের মূলেই পরস্বাপহরণ। এই মন্ত্র যদি মনে রেখে চলা যায় তাহলে শান্তি বিরাজ করে। …মনে রাখতে হবে ত্যাগমুখী হয়ে ভোগ না করলে ভোগের অতৃপ্তি, লালসা হুহু করে বেড়ে যাবে। …ত্যাগমুখী ভোগে Mental repression-ও আসে না, আবার ভোগের স্পৃহাও ধীরে ধীরে মন্দীভূত হয়ে আসে। কি গভীর অনুভূতির কথা। কতখানি মনোবিজ্ঞানসম্মত কথা!” সেই পরম সত্যস্বরূপ ঈশ্বরকে পাওয়াই জীবনের চরম লক্ষ্য। তারই জন্য মানুষের আধারের প্রস্তুতি ত্যাগের সাধনায়। মৈত্রেয়ীকে যাজ্ঞবল্ক্য তাঁর সম্পত্তির প্রাপ্য অংশ দিতে চাইলে মৈত্রেয়ী নিলেন না। বললেন, যার দ্বারা সেই পরম তত্ত্বকে জানা যায় না, সেই নশ্বর ধনসম্পত্তি নিয়ে আমি কি করবো? নচিকেতাকে যম সেই পরম জ্ঞানের পরিবর্তে অনেক কিছু দেবার প্রলোভন দেখালেন। নচিকেতা সব অস্বীকার করে পরম সত্যস্বরূপ আত্মতত্ত্বই জানতে চাইলেন। এই চরম প্রাপ্তির একটিই পূর্ব শর্ত, সেটি হচ্ছে সর্বত্যাগ।
স্বামী মৃগানন্দের ‘সাধনার পথে’ (১ম খণ্ড) থেকে