অত্যধিক পরিশ্রমে শারীরিক দুর্বলতা। বাহন বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। সন্তানের বিদ্যা-শিক্ষায় অগ্রগতি বিষয়ে সংশয় বৃদ্ধি। আধ্যাত্মিক ... বিশদ
জামনগরে তিন জন অগ্নিহোত্রী গৃহস্থ ছিলেন, তন্মধ্যে বাবাভাই বৈদ্য প্রধান। ইনি নাগর ব্রাহ্মণজাতীয়, মহাপণ্ডিত—উদয়পুর দরবারে রাজবৈদ্য ছিলেন। তাঁহার চাতুর্মাস্য যাগ এই ধন্বন্তরী ধামেই মহাসমারোহে সুসম্পন্ন হয়। কাঠিয়াওয়াড় ও উদয়পুরের বহু সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি উহাতে নিমন্ত্রিত হইয়া আসেন। তাঁহাদের মধ্যে উদয়পুরের মহারাণা ফতেসিংজীর সহোদর সুরথসিংজী এবং ভবনগরের দেওয়ান উদয়শঙ্করের পৌত্রের সঙ্গে আমার আলাপ হয়।
বহুদিন হইতে আমার চরক-সুশ্রুত-সংহিতা পড়িবার ইচ্ছা ছিল। ধন্বন্তরী-ধামে পৌঁছিয়াই সুশ্রুত সংহিতা পড়িতে আরম্ভ করিলাম। জীবানন্দ বিদ্যাসাগর-প্রকাশিত চরক-সুশ্রুত-সংহিতার টীকা না থাকায় উদয়পুরাধিপতি মিবারের মহারাণা-প্রকাশিত সুবৃহৎ শব্দার্থচন্দ্রিকা-নামক কোষ আমার একমাত্র অবলম্বন ছিল। সেই ধন্বন্তরী-ধামের সংলগ্ন একটি বৈদিক চতুষ্পাঠী ছিল। ঋক্, যজুঃ, সাম ও অথর্ব বেদ পড়িবার জন্য কাঠিয়াওয়াড়ের বিভিন্ন গ্রামবাসী দরিদ্র বালকগণ মুষ্টিভিক্ষা-লব্ধ দ্রব্য স্বপাকে এক সন্ধ্যা খাইয়া বেদপাঠ করিত।
বৈদিক শিক্ষকগণের হস্তপাঠ ও স্বরপাঠ ভিন্ন বেদের একটি শব্দেরও অর্থবোধ ছিল না। কিন্তু শুক্লযজুর্বেদের শিক্ষক উদাত্ত, অনুদাত্ত, স্বরিত সুরে হাত নাড়িয়া ছাত্রগণ সহ ‘শার্দ্দূলরুতোপম’ ধ্বনিতে বেদপাঠ করিতে লাগিলেন। তখন আমি পুলকিত শরীরে যে অননুভূত আনন্দ উপভোগ করিয়াছিলাম, তাহা ভাষায় প্রকাশ করিবার নয়। প্রত্যেক বৈদিক শিক্ষকের কাছে বসিয়া আমি চার বেদের পাঠ শুনিতাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় শিক্ষকগণের মধ্যে কাহারও বেদাঙ্গের কোন জ্ঞান ছিল না। বিভিন্ন স্থানের বিদ্যার্থী দরিদ্র ব্রাহ্মণবালকগণের কষ্ট দেখিয়া আমি কাশীর রইস্ সুপণ্ডিত বাবু প্রমথদাস মিত্রের সাহায্যে এক অন্নসত্র খুলিয়া দিয়াছিলাম। এই সত্র হইতে প্রত্যহ দরিদ্র ছাত্রগণকে যথোপযুক্ত গমের আটা, ডাল, ঘৃত, ইত্যাদি দেওয়া হইত। অনধ্যায়ের সময় ছাত্রেরা চলিয়া গেল। তখন সেই অন্নসত্র বন্ধ হইয়া যায়।
আমিও শুক্লযজুর্বেদের (মাধ্যন্দিনী শাখার) ছাত্র হইয়া হস্তপাঠ ও স্বরপাঠ শিখিতাম। এইরূপ বৈদিক চতুষ্পাঠীতেও সার্থ-বেদজ্ঞ শিক্ষকের অভাব দেখিয়া আমার মর্মান্তিক দুঃখ হইয়াছিল। তখন মনে করিতাম, বেদবেদাঙ্গে ব্যুৎপন্ন পণ্ডিত নিশ্চয়ই কাশীধামে পাওয়া যাইবে; চেষ্টা করিব।
স্বামী অখণ্ডানন্দের ‘স্মৃতি-কথা’ থেকে