অত্যধিক পরিশ্রমে শারীরিক দুর্বলতা। বাহন বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। সন্তানের বিদ্যা-শিক্ষায় অগ্রগতি বিষয়ে সংশয় বৃদ্ধি। আধ্যাত্মিক ... বিশদ
গুরু—ইহা বিশ্বাস করা কঠিন হইলেও সত্য। তোমাদিগকে পূর্ব্বেই বলিয়াছি জীবদেহ সেই আদি পুরুষের দেহের অনুরূপ। তোমার দেহও এই পুরুষের দেহের অনুরূপ। বর্ত্তমানে বিজ্ঞানের কল্যাণে তোমরা সকলেই জান, তোমার দেহে কয়েক লক্ষ কোটি জীবন্ত জীবকোষ বর্ত্তমান। এই জীবকোষ সমূহ বহু শ্রেণীর এবং তাহাদের কাজও নানাপ্রকারের। তুমি ইহা না জানিলেও জীবতত্ত্ববিদ্ বৈজ্ঞানিকগণ ইহা আবিষ্কার করিয়াছেন। অ উ হ ম ধ্বনি সমুদ্ভূত আদি পুরুষের মধ্যে “অহম্” জ্ঞান এবং ওঁম্ জ্ঞান সমানভাবে বিদ্যমান থাকায় তিনি সর্ব্বজ্ঞ সর্ব্ববিৎ। জীব ওঁম্ জ্ঞান বিবর্জিত এবং “অহম্” জ্ঞান সমন্বিত বলিয়া অজ্ঞ। কাজেই জীবের পক্ষে বুঝিতে অসম্ভব হইলেও এই আদি পুরুষের অনুরূপ জীবদেহের মধ্যে যেরূপ অসংখ্য জীবন্ত জীবকোষ আছে আদিপুরুষের দেহেও ঐরূপ অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড এবং অসংখ্য জীব বর্ত্তমান।
শিষ্য—জীবের সাত্ত্বিক, রাজসিক, তামসিক ভাবসমূহ কিভাবে সংক্রমিত হইয়াছে তাহা এবারে বলুন।
গুরু—সচ্চিদানন্দ স্বরূপ জগদ্গুরু এই পুরুষের অহংজ্ঞান এবং ব্রহ্মজ্ঞান এই ধারাদ্বয় ক্রমে তাঁহার ভ্রুসন্ধিতে সহস্রার হইতে চিদানন্দ অমৃতধারা বিকরণ করেন। এই চিদানন্দালোক চন্দ্রের ষোল কলার মত ১৬ কলায় পুরুষের কণ্ঠদেশ আলোকিত করে। এই ষোল কলায় থাকে শক্তিরূপে সৃষ্টি, স্থিতি, লয়, তিরোধান ও অনুগ্রহ এই পঞ্চকৃত্য, ব্যোম, মরুৎ, তেজ, অপ ও ক্ষিতি এই পঞ্চমহাভূত তত্ত্ব এবং কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ মাৎসর্য্য এই ষড় রিপু। বিরাট পুরুষের দেহের জনলোক এই ষোল কলায় উদ্ভাসিত। সাক্ষাৎ চিদানন্দালোকে এই জনলোক উদ্ভাসিত বলিয়া এই স্থান পরম বিশুদ্ধ। আদি পুরুষ এই ষোল কলার সাহায্যেই পঞ্চকৃত্য করেন। ষড় রিপু ও পঞ্চভূত তাঁহার বশীভূত। এই ষোল কলার মধ্যে ব্যোমতত্ত্ব নিত্য অপরিবর্ত্তনীয়। আদি পুরুষের দেহস্থ অহ রূপ প্রজাপতি এবং অহংরূপ জীব দশ ইন্দ্রিয় সৃষ্টি করিয়া দ্বাদশরূপে (অহশক্তি, অহংশক্তি, শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধ, শক্তি, বাক্শক্তি, গ্রহণশক্তি, গমনশক্তি, বিসর্জ্জন শক্তি ও আনন্দ শক্তি এই দ্বাদশ রূপে) পূর্বোক্ত ১৬ কলার ব্যোম বর্জিত ১৫ টী কলা বিভাগ করিয়া গ্রহণ করে। পুরুষের এই দ্বাদশ কলা রূপ দ্বাদশ সূর্য্যের ন্যায় চন্দ্রের উপরোক্ত পঞ্চদশ কলা হেয় এবং উপাদেয় রূপে বিভাগ করিয়া গ্রহণ করায় সোম কলা ও সৌরকলা ৩৬০ কলায় (১৫*১২*২=৩৬০) বিভক্ত হয়। ইহারই ফলে জীবের দেশ
৩৬০ সংখ্যাই এই জন্য দেশ ও কালের মাপ কাঠি। চান্দ্র বৎসরের পরিমান ৩৬০ দিন এবং দণ্ড পল বিপলাদি এই ৩৬০ এরই গুণনীয়ক ও গুণীতক। দেশ বা ভূমি পরিমাপক angle (কোণ) ৩৬০ ডিগ্রি এবং কলা বিকলাদি রূপে এই ৩৬০ ডিগ্রির গুণীতক ও গুণনীয়ক। পুরুষের বক্ষোদেশে চন্দ্রকলা ও সৌরকলা এই ভাবে নিরুদ্ধ হওয়ায় পুরুষের নাভিদেশে সৃষ্টির বিকাশ জনক আকর্ষণ ও বিক্ষেপ শক্তির পরষ্পর সংঘর্ষে অগ্নি উৎপন্ন হইল।
সুধীররঞ্জন সেনগুপ্তের ‘ঔপনিষদিক সাধন রহস্য’ থেকে