বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
আইম বর্ত্তমান প্রবন্ধে আরোপ-সাধন সম্বন্ধে কয়েকটি কথা বলিতে ইচ্ছা করি। আমি যাহা বলিব তাহা যদিও কোন বিশিষ্ট ধারা অবলম্বন করিয়াই বলিব তথাপি তাহার মধ্যে যে গভীর তত্ত্ব নিহিত রহিয়াছে তাহা অবস্থা বিশেষে অন্যান্য সাধনপদ্ধতিতেও আংশিকভাবে লক্ষিত হইতে পারে। আরোপ সাধন যোগি সমাজেও অত্যন্ত নিগূঢ় সাধন রূপে স্বীকৃত হয়-ভাগ্যবান্ ভক্ত ভিন্ন অপর ইহার রহস্য অবগত নহে। প্রচলিত অধিকাংশ সাধন আত্মদর্শনের উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত হয়,—আত্মদর্শন হইলেই সিদ্ধিলাভ হইয়াছে মনে করিয়া অগ্রিম পথে আর কেহ অগ্রসর হয় না। এই আত্মদর্শন প্রাথমিক আত্মদর্শন, পূর্ণ আত্মদর্শন নহে। প্রকৃতি হইতে পৃথকভাবে আত্মাকে দর্শন করাই প্রাথমিক আত্মদর্শনের উদ্দেশ্য। এই প্রারম্ভিক আত্মদর্শন না হওয়া পর্যন্ত আরোপ-সাধনের সূত্রপাতই হয় না। আরোপ সাধনের ফলে যে পূর্ণ আত্ম-সাক্ষাৎকার লাভ হয় তাহা অদ্বৈত আত্মস্বরূপে অবস্থিতি। তাহা বহুদূরবর্তী আদর্শ। কিন্তু প্রাথমিক আত্মদর্শন সাধন পথে অতি উচ্চ অবস্থার সূচনা করিয়া থাকে। যাহা হউক, আরোপ-সাধনের বৈশিষ্ট্য ইহা হইতে কিয়দংশে অনুমতি হইতে পারে।
দীক্ষার সময় গুরু শিষ্যের দক্ষিণ কর্ণে ইষ্টমন্ত্র দান করিয়া থাকেন, ইহা সকলেই জানেন। বস্তুত গুরু যে বাহির হইতে সাধারণ ব্যক্তির ন্যায় শিষ্যকে শব্দ-বিশেষ শুনাইয়া দেন তাহা নহে—তিনি দীক্ষার সময় অন্তরে প্রবিষ্ট হইয়া অন্তর্যামি রূপে শব্দব্রহ্মময় জ্ঞান দান করেন। এই জন্যই দীক্ষাদাতা গুরুকে জ্ঞানদাতা রূপে শাস্ত্রকারগণ বর্ণনা করিয়া থাকেন। এই জ্ঞান পরোক্ষ জ্ঞান, কারণ ইহা শব্দ হইতে উত্থিত হয়।
জ্ঞান দুই প্রকার। একটি শব্দজ অর্থাৎ উপদেষ্টা গুরুর উপদেশ-বাণী হইতে শিষ্যের হৃদয়ে পরোক্ষরূপে উদ্ভূত। ইহাকে আগমোত্থ অথবা আগমজন্য জ্ঞান বলা হয়। কেহ কেহ ইহাকে ঔপদেশিক জ্ঞান বলিয়া থাকেন। দ্বিতীয় প্রকার জ্ঞান শব্দ হইতে উত্থিত হয় না অর্থাৎ গুরু বাক্য হইতে জন্মে না, কিন্তু শিষ্যের বিবেক হইতে আপনা আপনি উদ্ভূত হয়। ইহাকে বিবেকজ জ্ঞান বলে—প্রাতিভ জ্ঞান ইহার নামান্তর।
শ্রীগোপীনাথ কবিরাজের ‘বিশুদ্ধবাণী’ (১ম খণ্ড) থেকে