উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য, ব্যবসায় গোলোযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যের অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
প্রতিবাদের আগুনটা দেশজুড়ে দীর্ঘদিন ধরে ধিকিধিকি জ্বলছিল। মোদি সরকারের বিভিন্ন একতরফা সিদ্ধান্তের কারণে সারা দেশের মানুষের মনে ক্ষোভ সঞ্চারিত হচ্ছিল। তাঁর ছাপ্পান্ন ইঞ্চির ছাতির সগর্ব ঘোষণাটা পরবর্তীকালে নানা রসিকতার জন্ম দিয়েছে। আর নোট বাতিল করে তিনি যে ছাপ্পান্ন ইঞ্চির অহঙ্কার করেছিলেন, কালে কালে দেখা গেল তা একটি ব্যর্থ পদক্ষেপ। নোট বাতিলে কোনও গরিব মানুষের লাভ হয়নি। বরং তাদের রুজি-রোজগারে টান পড়েছিল। এটিএমের লাইনে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষের প্রাণও গিয়েছে। এর কি কোনও কারণ ছিল? লাভ হল তো সেই মেহুল চোকসি, বিজয় মালিয়া, নীরব মোদি, আদানি কিংবা আম্বানিদের।
এছাড়া সারাদেশে গোরক্ষদের হিংসা ক্রমেই ছড়িয়েছে, সাম্প্রদায়িকতার বিভেদরেখাটা ক্রমেই স্পষ্টতর হয়ে উঠছে, পাশাপাশি এনআরসি’র চোখরাঙানি। আমরা আর কী দেখলাম! দেখলাম সিবিআইয়ের অন্তর্কোন্দল। সেই দ্বন্দ্ব নেমে এল প্রকাশ্য রাজপথে। দেশের মানুষও হয়তো বুঝতে পারল কত নোংরা জমে আছে সিবিআইয়ের অন্দরে। এরপর দেশের মানুষ দেখতে পেল কী কায়দায় নতুন সিবিআই কর্তা মনোনয়ন হল। সুতরাং অভিযোগ উঠল, সংস্থাটিকে সরকার নিজেদের তাঁবে রাখতে চাইছে। এবং সরকার তাকে যেমন ইচ্ছে তেমনভাবে প্রয়োগ করে তার স্বাধীন সত্তা ক্ষুণ্ণ করতে চাইছে।
এরাজ্যের চিটফান্ড কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআই দীর্ঘদিন তদন্ত করছে। অনেককেই জেলে দীর্ঘদিন আটকে রেখেছিল, এখন আবার ভোটের মুখে সেই ইস্যুতে সিবিআই ঝপাং করে ঝাঁপিয়ে পড়ে অনেক কিছু করতে চাইছে। সুজনের যেমন যুক্তির অভাব হয় না, তেমনই দুর্জনেরও অজুহাতের অভাব হয় না। সিবিআই যে তদন্ত করছে, তার থেকে কী কী মিলেছে, তা সাধারণ মানুষ জানে না। কিন্তু এই তদন্ত যেন প্রতিহিংসার অস্ত্র না হয়ে দাঁড়ায়। দেশের মানুষ মোদির কাছ থেকে সেই গ্যারান্টিই চান। আমরা দেখেছি কিছুদিন আগেই এ রাজ্যে ব্রিগেডের মাটিতে একটা বিরোধী শক্তির উত্থান হয়েছে। একদিকে মোদি এবং অন্যদিকে সঙ্ঘবদ্ধ সারাদেশের রাজনৈতিক দলগুলি। সেই জোট কি কাঁপিয়ে দিল ছাপ্পান্ন ইঞ্চির ছাতিটাকে? বিশেষ করে বিগত কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবির ফল মোদির আত্মবিশ্বাসের ভিতটাকে নষ্ট করে দিয়েছে। পাশাপাশি রাফাল ডিল নিয়ে বিরোধীদের যৌথ সংসদীয় কমিটি গড়ার আর্জি খারিজ করে দিয়েছেন তিনি। অনেকেই মনে করছেন, রাফাল ডিল নিয়ে মোদি বোধহয় কিছু লুকোতে চাইছেন। মোদি সরকারের উচিত অবিলম্বে মানুষের বিশ্বাস ফিরিয়ে দেওয়া। বিরোধীদের পাশাপাশি নিজের দলের বিরুদ্ধেই তাঁর একটা গোপন লড়াই চলছে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ফল যদি ভালো না হয়, তবে সঙ্ঘ পরিবার হয়তো তাঁকে সরিয়েও দেবে। সেজন্য সম্ভবত মুখিয়ে আছেন আদবানিপন্থী কিছু নেতা।
মোদির আমলে এইসব ‘অগণতান্ত্রিক’ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করলেন মমতা। বুঝিয়ে দিলেন, তাঁর ভিতরের আগুনের কণাগুলো এখনও গনগনে। সারা দেশ দেখল প্রতিবাদের এক বিমূর্ত প্রতীককে। অপশাসনের আর প্রতিহিংসার বিরুদ্ধে আসমুদ্রহিমাচল আজ তাঁর পাশে। তাঁর এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সারাদেশ থেকে আসছে শুভেচ্ছাবার্তা। অনেকেই তাঁকে বলছেন, আমরা তোমার পাশে আছি। একদিন যে আগুনে পুড়েছিল বামশাসন, লোকসভা ভোটের প্রাকমুহূর্তে দপ্ করে জ্বলে উঠল তাঁর প্রতিবাদের সেই আগুন। মোদি সরকার কতটুকু দগ্ধ হবে, নাকি মোদি আপন ক্যারিশ্মায় সেই আগুনকে নিভিয়ে ফের জয়ী হবেন, তা এখনই জানা যাবে না। কে জিতল, আর কে হারল সেটা পরের গল্প। এখন শুধু বলা যায়, মমতা আবার স্বমহিমায়।