উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য, ব্যবসায় গোলোযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যের অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
মঙ্গলবার সকালে চেতলাহাট রোড এলাকার বাসিন্দারা বলেন, তাঁদের পাড়া থেকে বেরিয়ে বিপরীত দিকে শঙ্কর বোস রোডের উপরে একটি পার্কে সরস্বতী পুজোর আয়োজন করা হয়। সোমবার রাতে প্রতিমার বিসর্জনের জন্য এলাকার যুবকরা একটি মিনিডোর ভাড়া করেন। সম্রাটের নিজের বাইক থাকলেও, তা তিনি নেননি। তাঁর বাইকে সমস্যা থাকায় তিনি অমিতের বাইকটি নেন। সম্রাটের বাবা সমরেন্দ্র চক্রবর্তী কাঁদতে কাঁদতে বললেন, রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরনোর সময়ে ও হেলমেট নিল। কিন্তু নিজে না পরে বাইকের পিছনে বসা অমিতকে দিল। আমাকে বলে গেল, আমি যেন খেয়ে শুয়ে পড়ি। ঠাকুর বিসর্জন দিয়েই সে ফিরে আসবে। কিন্তু আর ফিরল না। রাত সওয়া ১১টা নাগাদ পুলিস খবর দিল, সম্রাট দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি। আমার বোনের ছেলে পরে জানায়, সম্রাট মারা গিয়েছে।
পুলিস জানিয়েছে, বাইকটি অত্যন্ত তীব্র গতিতে চলছিল। ক্লাবের প্রতিমা যে গাড়িতে ছিল, সেটা বাইকের থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিল। ওই যুবক বিনা হেলমেটে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে সেতুর উপর দিয়ে চালানোর সময় নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে রেলিংয়ে গিয়ে ধাক্কা দেয়। যার জেরেই ওই ভয়ানক ঘটনা ঘটে যায়। যদিও মৃতের পড়শিদের কথায়, সম্রাট অত্যন্ত ভালো বাইক চালাত। রাতের বেপরোয়া লরি তাঁর বাইকে ধাক্কা মারার জন্যই এই দুর্ঘটনা। তাঁদের দাবি, রাতে রাস্তায় পর্যাপ্ত পুলিস থাকে না। তাই বেপরোয়া গাড়ি থেকে দুর্ঘটনা বাড়ছে। মৃতের বন্ধুদের কথায়, বাইকের পিছনে একটি মালবাহী গাড়ি ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়। তাঁরা দৌঁড়ে এসে সম্রাটকে বীভৎস অবস্থায় দেখতে পান। থানায় খবর দিলে প্রায় এক ঘণ্টা পর পুলিস আসে। এদিন ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে সম্রাটের দেহের ময়নাতদন্তের কাজের তদারকি করেন মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সম্রাটের পাড়ার বাসিন্দারা জানালেন, অত্যন্ত ভালো ফুটবল খেলতেন ওই যুবক। গোলকিপিং করতেন। আদ্যপান্ত ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সমর্থক সম্রাট নামজাদা একটি ক্লাবের হয়ে বাস্কেটবল খেলায় বাংলার হয়ে প্রতিনিধিত্বও করে পুরস্কারও পেয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে রীতিমতো শোকস্তব্ধ গোটা এলাকা।
চেতলাহাট রোডে টালির ঘরে বাস সমরেন্দ্রবাবুর। সেখানে এদিন গিয়ে দেখা গেল, সম্রাটের মা পুতুলদেবীকে সামলাচ্ছেন পড়শিরা। পুতুলদেবী অনবরত কেঁদে চলেছেন। তিনি বিলাপের সুরে বললেন, আমার পায়ে ব্যথা। প্রতিদিন ছেলে আমার পায়ে তেল মাখিয়ে দিত। আমরা একসঙ্গে খেতাম। ও নাকতলায় যে বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি করত, সেখান থেকে মঙ্গলবার বেতন পাওয়ার কথা ছিল। আমায় বলেছিল, বেতন পেলেই ভালো চিকিৎসক দেখাবে। ওর বাবার হৃদরোগ রয়েছে। চিকিৎসা করাবে বলেছিল। ওই আমাদের একমাত্র অবলম্বন ছিল। সব শেষ হয়ে গেল। প্রতিমা বিসর্জনের জন্য যখন ও বের হয়, বলেছিলাম, যাস না। আমাদের সময় ভালো যাচ্ছে না। কিন্তু আমাকে বলে গেল, একটা ওমলেট তৈরি করে রাখ। এসে একসঙ্গে খাব। কিন্তু আর ফিরল না আমার সম্রাট। কাকে নিয়ে বাঁচব আমি এবার!