উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
শান্তিপুর থানার বাবলা গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণপাড়ার ডিঙ্গাপোতা এলাকায় টিনের দোচালা ঘরে বাবা ও মায়ের সঙ্গে থাকেন এই কৃতী ছাত্র। মা সীমা দেবী গৃহবধূ। বাড়িতে চরকায় সুতোর কাটার কাজে স্বামীকে সাহায্যও করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি চরকা ঘুরিয়ে তাঁতের কাজে বাবাকে কাজে সাহায্য করেন সুশোভন। এর মাঝেও এবার ভালো ফল করেছে সুশোভন। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৬১, দর্শনে ৯৩, ইতিহাসে ৯০, সংস্কৃতে ৯০ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৮২।
সুশোভনের বাবা সুদেব প্রামাণিক বলেন, আমার একমাত্র ছেলে সুশোভন ছোট থেকেই পড়াশোনার বিষয়ে আগ্রহী। আমার যা রোজগার তাঁতে তিনজনের পেট চালানো কষ্টকর। সেই জায়গায় ছেলেকে কীভাবে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। তাঁত কাপড়ের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সুতো এনে আমি বাড়িতে বসে তাঁত বুনি। একটা তাঁতের কাপড় বুনতে পারলে মাত্র ২০০ টাকা পাই। তাতে সময় লাগে দু’দিন। মাসে রোজগার বলতে মাত্র তিন হাজার টাকা। বর্ষাকালে তাঁতে কাজ হয় না বললেই চলে। তবে অভাবী পরিবারের মধ্যে থেকেও ছেলের ভালো ফল করায় আমরা খুশি।
মাত্র দু’জন গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াশোনার পাশাপাশি দিনে প্রায় আট ঘণ্টা করে বাড়িতে পড়াশুনা করতেন সুশোভন। ২০১৭ সালে শান্তিপুরের গোবিন্দপুর দ্বারিকানাথ ইনস্টিটিউশন বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকে ৫৫০ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। সুশোভন বলেন, আগামী দিনে আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে চাই। ভবিষ্যতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। আমার এই সাফল্যের জন্য স্কুলের শিক্ষক ও দুই আত্মীয় সুজন প্রামাণিক ও সুজল প্রামাণিক আমাকে পড়াশোনার জন্য প্রথম থেকেই সাহায্য করেছেন। সুজলবাবু বলেন, আমি নিজেও শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। যখন যেমন সময় পাই পড়াশোনার বিষয়ে ভাই সুশোভনকে সাহায্য করি। আমরা দেখেছি, বাড়িতে তাঁতের কাজ চালিয়েও ও নিজের তাগিদেই পড়াশোনাটা চালিয়ে গিয়েছে। নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ে সুশোভন কখনও তাঁতে কাপড় বুনেছে। কখনও আবার চরকা ঘুরিয়ে বসে সুতো পাকিয়েছে।
ছেলের সাফল্যে খুশি মা সীমাদেবীও। তিনি বলেন, খুব কষ্টের মধ্য দিয়ে ওর বাবা কোনওরকমে সংসারটা ধরে রেখেছেন। আমাদের যা রোজগার তা দিয়ে সংসারই ঠিকভাবে চলে না। তবুও ছেলে অনেক দূর পর্যন্ত পড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। তবে সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনও সাহায্য পেলে ছেলের পড়াশোনার চালিয়ে যেতে পারবে। তা না হলে আগামী দিনে ওর কলেজের পড়ার খরচ চালানো যাবে বুঝতে পারছি না।
শান্তিপুর হিন্দু উচ্চ বিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক আশিস টিকাদার বলেন, সুশোভন আমাদের খুব প্রিয় ছাত্র। পড়াশোনার প্রতি ওর আগ্রহ ওকে এই সাফল্য এনে দিয়েছে। স্কুলে পরীক্ষার সময়েও ও ভালো ফল করত। আগামী দিনে প্রয়োজন সুশোভনকে পড়াশোনার জন্য সমস্ত রকম সহযোগিতা করা হবে।