উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
তাহেরপুর পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের এ ব্লকের ২৬ নম্বর রাস্তায় ছোট্ট একটি ঘরে বসবাস এই ছাত্রের। তাঁর মা সীমাদেবী তাহেরপুরের একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। মাস গেলে হাজার-বারোশো টাকা রোজগার তাঁর। তবুও ছেলের উচ্চশিক্ষার স্বপ্নকে কীভাবে বাস্তবায়িত করবেন তা ভাবতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
তিনি বলেন, ছেলের যখন মাত্র পাঁচ বছর তখন ওর বাবা মারা গিয়েছিলেন। তারপর থেকে ছেলে ও মেয়েকে কোলে পিঠে বড় করে তুলেছি। ছেলে ভালো নম্বর নিয়ে পাশ করেছে। কিন্তু আগামী দিনে ওর পড়াশোনার খরচ কীভাবে জোগাড় করব, তা ভাবতে পারছি না। মেয়েও এবছর তাহেরপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। সংসারে উপার্জন নেই। তবুও আমারও খুব ইচ্ছে হয়, ছেলেমেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করবার। কিন্তু আর্থিক কারণই আমার জীবনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাহেরপুর নেতাজি উচ্চ বিদ্যালয় এবছর সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন অনন্ত। আগামীদিনে তিনি ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করে অধ্যাপনা করার স্বপ্নে বুক বেঁধেছেন। তিনি বাংলায় পেয়েছেন ৮২, ইংরেজিতে ৭৩, ভূগোলে ৯৫, ইতিহাসে ৯৬, দর্শনে ৯৪ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৮০ নম্বর।
অনন্ত বলেন, আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়েও নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি। বোনও মাধ্যমিক পাশ করেছে। আমি চাই ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করতে। কিন্তু মায়ের সামর্থ্য নেই আমাকে কলেজে পড়ানোর। নিজে স্থানীয় কয়েকজন খুদে পড়ুয়াদের বাড়িতে পড়াই। তা থেকেই চলে আমার হাত খরচ। আমার এই সাফল্যের পেছনে আমার স্কুলের শিক্ষকরা সব সময় পাশে থেকেছেন। তাই আমার এই সাফল্যকে আমি স্কুল শিক্ষকদের উদ্দেশে উৎসর্গ করতে চাই।
অনন্তদের সাংসারিক খরচ অনেকটাই চালান তাঁর কাকা সমীর দেবনাথ। তিনিও একজন প্লাস্টিকের চেয়ার তৈরির কারখানার কর্মী। তাঁর পক্ষেও সামান্য রোজগারে পরিবারের আটজনের পেট চালানো কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাহেরপুর নেতাজি উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক নীহারেন্দু চক্রবর্তী বলেন, ও ছোট থেকেই পড়াশোনার বিষয়ে আগ্রহী। ও আমাদের কাছে খুবই প্রিয়। আমরা ওর ভবিষ্যৎ শিক্ষা জীবনের সাফল্য কামনা করি।