উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
তবে জেলায় এবছর উচ্চমাধ্যমিকে পাশের হার কিছুটা কমেছে। গত বছর পাশের হার ছিল ৮৪.৯৯ শতাংশ। এবার পাশের হার হয়েছে ৮৪.৯০ শতাংশ। তবে সামগ্রিক রেজাল্ট ভালো। অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে পুরোপুরি টিউশনি নির্ভর। যে কৃতী ছাত্ররা মেধাতালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন, তাঁদের প্রতি বিষয় পিছু একাধিক গৃহশিক্ষক ছিলেন। স্কুলের শিক্ষকদের শিক্ষাদানের উপর পড়ুয়াদের আস্থা নেই।
মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল কৃষ্ণনগর সদর থেকে আশানুরূপ হয়নি। যা নিয়ে হতাশ হয়েছিলেন শিক্ষকমহল। তবে উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল হয়েছে। তাই মাধ্যমিকে ভালো ফলের ঘাটতি উচ্চমাধ্যমিকে অনেকটা পূরণ হয়েছে। কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল থেকে দুই মেধাবী ছাত্র রাজ্যের মেধাতালিকায় স্থান অর্জন করল। ঋতম নাথ ৪৯৬ নম্বর পেয়ে যুগ্মভাবে দ্বিতীয় হয়েছেন। আর অত্রি বিশ্বাস ৪৯০ পেয়ে হয়েছেন যুগ্মভাবে ষষ্ঠ। কল্যাণী মহকুমা থেকে ৪৮৮ নম্বর পেয়ে অয়ন চক্রবর্তী অষ্টম স্থান দখল করেছেন। ৪৮৭ নম্বর পেয়ে মানস প্রতিম বিশ্বাস নবম স্থান অর্জন করেছেন। চার কৃতী ছাত্রের মধ্যে তিনজনেই ডাক্তার হতে চান। দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী ঋতম সোমবার আইআইটির প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়েছেন। আইআইটিতে পড়াশোনা করতে চান ঋতম। ষষ্ঠ স্থানে থাকা কৃষ্ণনগরের কাঁঠালপোতার বাসিন্দা অত্রি বিশ্বাস চিকিৎসক হতে চান। তিনি জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষাও দিয়েছেন। জয়েন্টের ফল প্রকাশিত হলেই তিনি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কল্যাণী ইউনিভার্সিটি এক্সপেরিমেন্টাল হাইস্কুলের ছাত্র অয়ন চক্রবর্তী। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৮। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চান অয়ন। একজন চিকিৎসক হিসেবে তিনি নিজেকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করতে চান। কল্যাণীর স্প্রিঙ্গেল হাইস্কুলের ছাত্র মানসপ্রতিম বিশ্বাস। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৬। তিনিও চিকিৎসক হতে চান।
এবার নদীয়ায় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ৫৩ হাজার ১৩৭ জন। যার মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি ছিল। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ছিল ২৬ হাজার ২৪০ জন। আর ছাত্রীর সংখ্যা ২৬ হাজার ৮৯৭ জন। এবার পাশের হার একটু কমেছে। জেলায় পাশের হার ৮৪.৯০ শতাংশ। যার মধ্যে ছাত্র পাশ করেছে ৮৫.২৩ শতাংশ। ছাত্রীদের পাশের হার ৮৪.৫৭ শতাংশ। গতবছর পাশের হার ছিল ৮৪.৯৯ শতাংশ। যার মধ্যে ছাত্রদের পাশের হার ছিল ৮৬.৬২ শতাংশ। ছাত্রীদের ৮৩.৩৪ শতাংশ পাশ করেছিল। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের নদীয়া জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক দিলীপ সিংহ বলেন, পাশের হার সামান্য একটু কমলেও সামগ্রিক রেজাল্ট ভালো। জেলা থেকে ৪জন কৃতী ছাত্র রাজ্য মেধাতালিকায় রয়েছে। এটা নদীয়া জেলার গর্বও।
এদিকে, স্কুলগুলিতে শিক্ষার হাল নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে অভিভাবকদের মধ্যে। তাঁদের অভিযোগ, টিউশনি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনও ছাত্রকে গৃহশিক্ষক না দিলে ভালো ফল করতে পারবে না। নামী স্কুলগুলি থেকে কৃতী ছাত্রদের নাম থাকে ঠিকই। কিন্তু কৃতী ছাত্র ছাত্রীরা স্কুলের শিক্ষকদের শিক্ষাদানের উপর নির্ভরশীল নয়। সিংহভাগ কৃতী ছাত্র স্কুলে গরহাজির থাকে। গৃহশিক্ষকের কাছে তারা বেশি সময় দেয়। একটি বিষয়ের উপর তাদের একাধিক গৃহশিক্ষক রয়েছেন। সরকারি ও আধা সরকারি স্কুলের শিক্ষকরাও টিউশনিতে ব্যস্ত। স্কুলের শিক্ষকরা এমনও নির্দেশ দেন, টিউশনিতে ভালোভাবে চ্যাপ্টারটা বোঝানো হবে। এক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত বা অভাবী পরিবারে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়। সরকারি স্কুলগুলিতে ক্লাসে পড়াশোনার প্রতি আরও বেশি জোর দেওয়া দরকার। তার জন্য ছাত্র ছাত্রীদের স্কুলমুখী করা দরকার। কৃষ্ণনগর শহরের এক অভিভাবক বলেন, কোচিংয়ে পড়লে প্রতি বিষয় পিছু মাসে ৫০০ টাকা করে দিতে হয়। পাঁচটি বিষয় পড়লে মাসে আড়াইহাজার টাকা দিতে হয়। আর বাড়িতে এসে কোনও শিক্ষক পড়ালে প্রতি বিষয় পিছু ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা দিতে হয়। তার জন্য একজন ছাত্র পিছু মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। এই শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার।