বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
হাসপাতালের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, চিকিৎসকরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অন্ধকারে রেখে অনুপস্থিত থাকেন। ফলে তাঁদের নাম প্রেসক্রিপশনে ছাপা থাকে। অথচ তাঁদের জায়গায় জুনিয়র ডাক্তাররা রোগী দেখেন। বিষয়টি নিয়ে রোগী কল্যাণ সমিতি এবং মেডিক্যালের অভ্যন্তরীণ বিভাগীয় বৈঠকে বারবার আলোচনা হওয়া সত্ত্বেও ফাঁকিবাজ চিকিৎসকদের শোধরানো যায়নি। এদিকে, চিকিৎসকদের ফাঁকিবাজি মানসিকতায় মেডিক্যালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা মালদহের জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য চরম ক্ষুব্ধ। এদিন সন্ধ্যা নাগাদ জেলাশাসক হাসপাতালের ইনডোর ভবনের মেডিসিন বিভাগ ঘুরে দেখেন। তিনি বলেন, আউটডোরের পাশাপাশি ইনডোরেও এদিন একাধিক চিকিৎসক আগাম নোটিস ছাড়া অনুপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। এদিন হাসপাতালের এমএসভিপিকে সঙ্গে নিয়ে ইনডোরের ওয়ার্ড ঘুরে দেখেছি। অবিলম্বে ফাঁকিবাজ চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মেডিক্যালের অধ্যক্ষকে বলা হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় বলেন, আউটডোরের কোন কোন চিকিৎসক গরহাজির ছিলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এনিয়ে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আউটডোর প্রতিদিন ৯টায় খোলে। চলে দুপুর ২টো পর্যন্ত। এদিন দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ বেশকিছু বিভাগে চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। মনোরোগ বিভাগের সামনে রোগীদের লম্বা লাইন চোখে পড়ে। বিভাগের দরজার সামনে দাঁড়ানো সিভিক ভলান্টিয়ার ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। একজন ইন্টার্ন রোগী দেখছিলেন। সৌগতকুমার গিরি নামে ওই ইন্টার্ন বলেন, যাঁর এদিন ডিউটি ছিল। প্রেসক্রিপশনে তাঁর নাম রয়েছে। তিনি অসুস্থ থাকায় আসতে পারেননি। যদিও এব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ওই চিকিৎসককে পাওয়া যায়নি। ওই বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে ঝাড়খণ্ডের রাজমহলের বাসিন্দা হৃদয় মণ্ডল বলেন, দূর থেকে ভালো চিকিৎসককে দেখাব বলে মালদহ মেডিক্যালে আসি। কিন্তু এদিন চিকিৎসক নেই বলে জানানো হয়। ইন্টার্নকে দেখিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। গাজোলের বাসিন্দা অর্জুন খয়রাতি বলেন, প্রেসক্রিপশনে নাম থাকা চিকিৎসককে না দেখাতে পেরে কিছুটা সংশয় হয়। উপায় না থাকায় ইন্টার্নের কাছে চিকিৎসা করা হয়।
গাইনি বিভাগেও কমবেশি একই চিত্র ধরা পড়ে। গাইনি ওয়ার্ডের সামনের বরান্দায় বসেছিলেন বছর পঁয়তাল্লিশের বদরুজ্জামান। সুজাপুরের নাজিপুরে তাঁর বাড়ি। তিনি বলেন, আমার দিদি রাহিলা বিবির জরায়ুতে টিউমার হয়েছে। একমাস পর অপারেশনের দিনক্ষণ জানানো হবে। কিন্তু এদিন চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। গাইনি বিভাগে কর্তব্যরত এক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, আমাদের বিভাগে প্রয়োজনের তুলনায় কম চিকিৎসক রয়েছেন। তবে চিকিৎসক যে এদিন একেবারেই ছিলেন না তা নয়। রোগীর চাপ থাকায় চিকিৎসায় বিলম্ব হয়। জুনিয়র ডাক্তাররা বেশিরভাগ কাজ করেন।
মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সঙ্গে জড়িত অনেকেই বলেন, মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল একে অপরের পরিপূরক। অধ্যাপক চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিতে শুধুমাত্র রোগীদের সমস্যা হচ্ছে তা নয়, পাশাপাশি ছাত্রদেরও ক্ষতি হচ্ছে। আউটডোরে বিভিন্ন রোগের উপসর্গ নিয়ে আসা লোকজনের চিকিৎসা হয়। সেখানে অ্যাসিস্ট্যান্ট, অ্যসোসিয়েট অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধানরা রোগী দেখেন। তাঁদের সঙ্গে ডাক্তারির পড়ুয়ারাও থাকেন। অধ্যাপকরা হাসপাতালের পরিবর্তে চেম্বারে বেশি সময় কাটান। ফলে পড়ুয়ারাও বেশি কিছু শিখতে পারছে না। চিকিৎসা বিজ্ঞান অন্যান্য পড়াশুনার মতো নয়। এখানে ব্যবহারিক বিষয়ে জ্ঞান না থাকলে মুশকিল। মানুষের মরা-বাঁচা চিকিৎসকদের উপর নির্ভর করে। চিকিৎসকের গরহাজিরার বিষয়ে অবিলম্বে সরকারের হস্তক্ষেপ করা উচিত।