কাবুল: তালিবানের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গেই শিরোনাম দখল করে বসেন জাবিউল্লা মুজাহিদ। তালিবান মুখপাত্র হিসেবে সামনে আসতেই তাঁকে নিয়ে চর্চা শুরু হয়। কারণ জাবিউল্লা মুজাহিদ নামে আদৌ কেউ আছেন, একথা বিশ্বাস করত না অনেকেই। মনগড়া চরিত্র সামনে রেখে কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছিল তালিবরা, এমনই মনে করা হতো। জাবিউল্লার দাবি, তাঁর অস্তিত্বের প্রতি এই অনাস্থা তাঁকে প্রচুর সুবিধা পাইয়ে দিয়েছে। লোক চোখের আড়ালে থেকে তিনি লড়তে পেরেছেন মার্কিন ও আফগান সেনার বিরুদ্ধে। তাঁদের নাকের ডগায় থেকে চালিয়ে গিয়েছেন কাজকর্ম। দিনের পর দিন চষে বেড়িয়েছেন দেশের একপ্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত। অথচ তাঁকে ধরতে পারেনি সেনা। জাবিউল্লার খোঁজ পেতে স্থানীয়দের অনেক টাকা দিয়েছিল মার্কিন সেনা। তাঁদের খবরের ভিত্তিতে বার বার তল্লাশি চালিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয় সেনাকে। তিনি হারিয়ে গিয়েছেন সেনার চোখে ধুলো দিয়ে। আর তা থেকেই মার্কিন ও আফগান সেনার দৃ‌ঢ় ধারণা হয়, এই নামে কেউ নেই। জাবিউল্লা ভূতুড়ে চরিত্র। বাস্তবে এর কোনও অস্তিত্ব নেই। সব জল্পনার অবসান ঘটে তালিবান কাবুলের ক্ষমতা দখলের পর। জাবিউল্লার কথায়, ‘দীর্ঘ দিন আমি কাবুলে থেকেছি। সবার নাকের ডগায়। দেশের নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছি। তালিবানের প্রতিটি কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত থেকেছি। যা বারবার ধন্দে ফেলেছে প্রতিপক্ষকে।’ ৪৩ বছরের এই নেতার দাবি, তিনি কখনও আফগানিস্তান ছেড়ে যাননি। তবে সেমিনার করতে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন। এমনকী পাকিস্তানেও গিয়েছেন। শত চেষ্টা করেও তাঁর নাগাল পায়নি সেনা। নিজের ছোট বেলার কথা বলতে গিয়ে জাবিউল্লা বলেন, বাল্যকালে তিনি একটি সাধারণ স্কুলে পড়া শুরু করেন। পরে ভর্তি হন মাদ্রাসায়। শুরু হয় তাঁর ধর্মীয় শিক্ষা। খাইবার পাখতুনওয়ার নওশেরা অঞ্চলে হাক্কানি সেমিনারে পড়াশোনা করেন। যাকে অনেকে তালিবান বিশ্ববিদ্যালয় বলেন। ১৬ বছর বয়সে তালিব শিবিরে যোগ দেন। তবে মোল্লা উমরকে কখনও দেখেননি। সেইসঙ্গে জানান, জাবিউল্লাই তাঁর প্রকৃত নাম। তবে বড়রা ডাকতেন মুজাহিদ। কাবুল দখলের পর তালিবান চাইছিল, তাঁদের উদার মুখ তুলে ধরতে। বেছে নেওয়া হয় জাবিউল্লাকে। যাঁর অস্তিত্ব ছিল অবিশ্বাসের পর্দা ঘেরা। বিশ্ব তাঁকেই দেখল সশরীরে।