সন্তানের সাফল্যে গর্ব বোধ। আর্থিক অগ্রগতি হবে। কর্মে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। ঘাড়, মাথায় যন্ত্রণা বৃদ্ধিতে বিব্রত ... বিশদ
আফগানিস্তানে তালিবান প্রথম ক্ষমতায় আসে ১৯৯৬ সালে। নেট যুগের গন্ধ ছিল না তখন। মুখবুজে তালিবানি নির্যাতন মেনে নিয়েছিলেন আফগান মহিলারা। যাকে বলে অসহায় আত্মসমর্পণ। এখন সময় বদলেছে। ট্যুইটার, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ মায় ইনস্টাগ্রামের তুখোড় শাসন। সোশ্যাল মিডিয়াই এখন প্রতিবাদী প্ল্যাটফর্ম। শৈশবে যারা মা-দিদি-কাকিমাদের উপর তালিবানি অত্যাচার দেখেছে, তাঁরা এখন যুবতী। গোটা একটা প্রজন্ম। যাদের শিক্ষা-দীক্ষাও কোনও অংশে কম নয়। তাঁরা একুশের তালিবানের চোখরাঙানি এত সহজে মানবেই বা কেন? আর তাই তালিবানি পোশাক-ফতোয়াকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে ‘হ্যাশ ট্যাগ’ আন্দোলনের মাধ্যমে।
শুরুতেই ব্যাপক সাড়া। দলে দলে যোগ দিচ্ছেন আফগান মাহিলারা। তালিবানের বিরুদ্ধে নিন্দা আর ক্ষোভের ভাষায় ভরে উঠছে প্ল্যাটফর্ম। উদ্দেশ্য একটাই—কোনও অবস্থাতেই তালিবানি শাসনে আফগানিস্তানের পোশাক-ঐতিহ্যকে বিসর্জন দেওয়া যাবে না। কালো বোরখা পরে থাকা যে আফগান সংস্কৃতিতে নেই, সেটাও জোর গলায় মনে করিয়ে দিচ্ছেন তালিবানকে। রবিবারও কাবুলের রাস্তায় নেমে ক্লাস-কক্ষে পর্দা বিভাজন তুলে নেওয়ার আর্জি জানিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তিনশো’রও বেশি মহিলা। তাঁদেরকেও কুর্নিশ জানিয়েছে ‘হ্যাশ ট্যাগ’ প্ল্যাটফর্ম।
এখনও মারমান রুকসানাকে মনে পড়বে অনেকেরই। আফগানিস্তানের প্রথম মহিলা সঙ্গীতশিল্পী। বিদেশজোড়া খ্যাতি ছিল তাঁর। এরজন্য কম খেসারত দিতে হয়নি তাঁকে। সেই রুকসানার নাতনি ডঃ খাট আসিল তারভিরদিয়ান এখন অন্যতম পথপ্রদর্শক ‘হ্যাশ ট্যাগ’ আন্দোলনের। তিনি বলেছেন, ‘আফগান মহিলাদের জাগরণ মঞ্চে শামিল হতে পেরে আমি গর্বিত।’ বিশ্বের শুভবুদ্ধি মানুষের চেতনাকে জাগিয়ে তোলার কথা বলে পোশাক-ফতোয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন আফগান তরুণী রুহি খান। রং-বেরঙের ঐতিহ্যবাহী আফগান গাউন পরা ছবিও পোস্ট করছেন সকলেই। সেখানে ঢাকা পড়েছে চূড়ান্ত রক্ষণশীল কালো বোরখা।
যেমন, ডঃ বহর জালালি। ‘হ্যাশ ট্যাগ’ প্রতিবাদকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৌড়ে অনবদ্য ভূমিকা নিয়ে চলছেন তিনি। কিশোরী বয়সে নিজের একটা ছবি পোস্ট করেছেন প্ল্যাটফর্মে। গাউনের স্লিভ থেকে গলাবন্ধনী—আফগান সূচিশিল্পের কারুকাজ। মাথায় আফগান টুপি। ছবির নীচে জালালি লিখেছেন, ‘এই পোশাক আমাকে জাতীয়তাবোধ শিখিয়েছে। মাতৃভূমিকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে। এই পোশাকই আমাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি। সেটাকে ধ্বংস হতে দেব না।’ তাহমিনা আজিজের কথায়, ‘অন্ধকারময় যুগে এই রঙিন পোশাকই আমাদের আলোকবর্তিকা।’ ব্রেসনা তেহরিক। ছিপছিপে আফগান তরুণী। কড়া বাসন্তী রঙা গাউনে ঢাকা গোটা শরীর। সেই ছবির সঙ্গে ব্রেসনার সাফ কথা, ‘আমার দেশমাতৃকার ঐতিহ্য ছাড়তে পারব না। তালিবানি মাতব্বরিকে নিন্দা করছি।’
ব্রেসনা, জালালি কিংবা রুহিদের অর্ধেক আকাশ ছিনিয়ে নেওয়ার এই লড়াইয়ের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা কেউ জানে না। তবে, নিঃসন্দেহে বিশ্বব্যাপী মানব-চেতনায় একটা কুঠারাঘাত করতে পেরেছে। এমনটাই মত গণ-আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত অনেকেরই। কিন্তু তাতে কি আদৌ ঘুম ভাঙবে তালিবানের?