সন্তানের সাফল্যে গর্ব বোধ। আর্থিক অগ্রগতি হবে। কর্মে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। ঘাড়, মাথায় যন্ত্রণা বৃদ্ধিতে বিব্রত ... বিশদ
দীপাবলির এখনও দেড় মাস বাকি। মহালয়া মাত্র দেড় সপ্তাহ দূরে। দেবীপক্ষ শুরুর আগেই ভবানীপুরের গুরুত্বপূর্ণ ভোট। গত অক্টোবর-নভেম্বরের কথা একবার ভাবুন। পুজো যেতে না যেতেই করোনা বিধি উপেক্ষা করে তৃণমূল ভাঙার ব্লুপ্রিন্ট নিয়ে রে রে করে ময়দানে নেমে পড়েছিলেন দিলীপ ঘোষরা। না ভুল হল, উনি তো চিরদিনই বলির পাঁঠা। ব্রাত্য দিলীপবাবুকে সামনে রেখে কিছু লোভী দলবদলু নেতা সেদিন ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাংলা দখলের আড়ালে আখের গোছাতে। দল আড়াআড়ি ভেঙে গিয়েছিল আদি আর নব্য দুই ভাগে। তেলে জলে কখনও মেশে না, এই আপ্তবাক্যকে সত্য প্রমাণ করে সংগঠনও শক্তিশালী হয়নি। ওই যে বললাম, সব জেনেও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার লোভে সুরে সুর মিলিয়েছিলেন তৃণমূল আমলে মেদিনীপুরের সবচেয়ে লাভবান পরিবারের উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছেলেটা। আর এই লাভ ঘরে তোলাটা একদিন দু’দিন নয়, চলেছে গোটা কয়েক দশকজুড়ে। তাঁর আশ্বাসে ভুল পদক্ষেপ করে আরও অনেকে ডুবেছেন। ডোমজুড় থেকে কোন্নগর, তাই হাহাকার সর্বত্র। যাঁকে ঘিরে সবার উত্থান, খাওয়া পড়া, সামাজিক প্রতিষ্ঠা তাঁকে এভাবেই বুঝি ভোটের আগে পিছন থেকে ছুরি মেরে প্রতিদান চোকাতে হয়! এই বিশ্বাসঘাতকতা নিশ্চয়ই অধিকারের মধ্যেই পড়ে এই বিশেষ শ্রেণির লোকেদের! ভাবটা তখন এমন যেন বঙ্গ বিজয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। দেদার টাকা আর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের ধারাবাহিক প্রদর্শনী ভোট পর্যন্ত বড় কম দেখা যায়নি। জেলায় জেলায় রোজ চলত যোগদান মেলা। বইমেলা নেই, শিল্প মেলা নেই, কোভিডে সব হারিয়ে রইল শুধু ধান্দাবাজদের যোগদান মেলা। কত টাকা উড়েছে হিসেব নেই! সৌজন্যে মোদি-অমিত শাহের নোংরা কপট রাজনীতি। কে কবে যোগ দেবে তা নিয়ে কত জল্পনা। এই আজ মেদিনীপুর ভাঙছে, তো কাল বর্ধমান। শিলিগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার তো আছেই। দশ বছর তৃণমূলের খেয়ে পড়ে বিজেপিতে গিয়ে এক-একজন হাঁকছিল ভোটের আগেই নাকি দলটা উঠে যাবে! কত জল্পনা। অমিত শাহ নাকি কানে কানে বলে দিয়েছেন, জিতলে তুমিই মুখ্যমন্ত্রী, আর পায় কে। অথচ ফল বেরতে দেখা গেল মিথ্যে দিয়ে সাজানো গড় মেদিনীপুরেই ঘটি ডোবে না! বঙ্গ বিজয় তো দূর অস্ত।
কার দর কত, তার উপর ঠিক হতো উনি দিলীপ ঘোষের হাত ধরে যোগ দেবেন, না অমিত শাহের মঞ্চ থেকে পতাকা হাতে নিয়ে গেরুয়া হবেন। এমনও হয়েছে একই দিনে একবার দিলীপবাবু হেস্টিংস অফিসে যোগদান করাচ্ছেন, আবার তার আধ ঘণ্টার মধ্যে শহরের কোনও হোটেলে ভিন রাজ্য থেকে আসা মাতব্বর গোছের ‘মগ’ নেতা পাল্টা যোগদান করাচ্ছেন। রাজ্য সভাপতির কী অপমান! সবই হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অঙ্গুলিহেলনে। কেউ আবার প্রকাশ্যে এমনও বলেছেন, না দিলীপবাবুর হাত ধরে যোগদান সম্ভব নয়। ওতে জাত যাবে, পেটও ভরবে না। এমন অভিমান আর আব্দার জুড়েই কেউ আবার চার্টার্ড প্লেনে চেপে দিল্লি ছুটছেন অমিত শাহের বাড়িতে মহার্ঘ প্রসাদ পাওয়ার জন্য। বলি ওই চকচকে বিমানে চেপে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে যাঁরা দিল্লি গিয়েছিলেন, তাঁরা ক’জন এখন বছর ঘোরার আগে গেরুয়া মন নিয়ে বসে আছেন। আর একবার দিল্লি যাবেন নাকি হাওয়াই জাহাজে চেপে। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে কথা! একটা চলতি কথা আছে, যদি তুমি কোনও ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো, জোর করে জনমতের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করো, তার ফল দীর্ঘমেয়াদে ভালো হতে পারে না। একদিন না একদিন তা ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে। বঙ্গ বিজেপি আজ সেই রিটার্ন সিনড্রোমেই কাত। আর তার অভিঘাতেই হতাশ দলবদলুরা বছর ঘোরার আগেই কর্পূরের মতো হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছেন অন্য ফুলে। এমনও অনেকে বলছেন, কোনওদিন ওই নিষিদ্ধ গেরুয়া পাড়ায় যাইনি তো! তাঁদের একজন তো গত ২ মে’র পরদিন থেকে হেন তৃণমূল নেতা নেই যাঁর দরজায় গিয়ে ফিরতে চেয়ে কাকুতিমিনতি করেননি। এখন রোজ শুধু মোবাইলটা নিয়ে বসে ভাবেন কখন ডাক আসবে ক্যামাক স্ট্রিট থেকে। ডাক আর আসে না। আর একজন বলছেন, সামনে মেথরদের ভোটটা মিটলেই (পুরসভার ভোট) যোগদানের চিঠি পাব! ছোট বড় জেলা গ্রাম ব্লক স্তর সর্বত্র উলটপুরাণের পালা। স্রোতের মতো ছোট বড় নেতারা এ ফুল থেকে অন্য ফুলে, এ ডাল থেকে অন্য ডালে। পরজীবী বাংলা বিজেপি তাই অনিবার্যভাবেই ভাঙছে। এমনটাই হওয়ার কথা ছিল। ঠিক যেমন করে লোভ দেখিয়ে, এজেন্সি দিয়ে ভয় পাইয়ে তৃণমূল ভাঙা হয়েছিল এখন তার বিষময় পরিণাম বুঝতে পারছেন দিল্লির গেরুয়া নেতারা। সপুত্র দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি ও এক পুরনো এমপির তৃণমূলে যোগদানে বাস্তবিকই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। আরও এমপি, বিধায়করা পা বাড়িয়ে রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত কতজন এমপি আর বিধায়ক টিকে থাকবেন কে জানে! একবার সিগন্যাল পেলেই দে ছুট। আসলে ভয় যেমন ভয়ঙ্কর, তেমনি সেই ভয় কেটে যাওয়ার পরের মুহূর্তটা আরও সাংঘাতিক। যুদ্ধ, রাজনীতি, ব্যবসা, প্রেম সর্বত্রই এটা সমান সত্য। চাপ আর ভয় দেখিয়ে কাউকে বেঁধে রাখলে ভিতরে ভিতরে পুষে রাখা ক্রোধ আর প্রতিহিংসা একদিন ঠিক আগুন হয়ে সব ছারখার করে দিতে বাধ্য। বিজেপির এখন সেই দশা। হাজার ভয় দেখিয়ে, ইডি, সিবিআই লাগিয়েও আর কাউকে গেরুয়া রঙে আর রাঙানো যাচ্ছে না। ও সব এখন অতীত। টানতে টানতে সুতোটাই ছিঁড়ে গিয়েছে। ২ মে দুপুরের পরই ওই আতঙ্কের মহামরণ ঘটে গিয়েছে। বঙ্গ নেতৃত্ব তাই দিশাহারা, চুরমার। অগত্যা আরও অপরিচিত কাউকে তুলে এনে সভাপতি বদল তাই স্রেফ বাহানা। দিলীপ, সুকান্ত কারও কম্ম নয় এখান থেকে শীঘ্রই দলকে আবার জাগিয়ে তোলা।নিজস্ব সংগঠন তৈরি না করে শুধু আমদানি করা আর দল ভাঙা নেতা দিয়ে যে বাংলার মতো বিশাল রাজ্য দখল সম্ভব নয়, হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন মোদি-অমিত শাহ। আর বাংলার ভার এইসব নেতাদের হাতে পড়লে তাঁদের কী হাল হতো, এই ভেবে বাংলার মানুষ দুর্গা নাম জপছেন। কোথায় এখন মেনন, বর্গী, প্রকাশরা। হোটেলের পর হোটেল ভাড়া নিয়ে ভিনরাজ্যের নেতাদের বাজিকর সাজিয়ে এক পাও এগতে পারেনি গেরুয়া সংগঠন। প্রচারে, হাওয়াই জাহাজ ভাড়া করতে, নেতা কিনতে এত বিপুল খরচের তদন্ত হওয়া উচিত। বিশেষত কোভিড পরিস্থিতিতে যখন সবাই রোজগার হারিয়ে অসহায় তখন নগদ টাকার এই হরিলুট কেন? গেরুয়া শিবির সময় থাকতে বোঝেনি, ছাদ দিয়ে জল পড়া বাড়িতে যত দামি রং-ই দেওয়ালে লাগান কোনও কাজেই আসে না। তাই বাইরের সাময়িক চাকচিক্য ভোট যেতেই খসতে শুরু করেছে। আর দলের ভাঙন রুখতে না পারার ব্যর্থতা মাথায় নিয়ে সরতে হয়েছে গোরুর দুধে সোনার আবিষ্কর্তা দিলীপবাবুকে। তবে তাঁর বদলে যাঁকে আনা হয়েছে তিনিও বঙ্গ বিজেপির এই দুর্দিনে কতটা বালির বাঁধ দিতে সমর্থ হবেন তা গবেষণার বিষয়। রাজ্য রাজনীতির এই সন্ধিক্ষণে ভবানীপুর থেকেই অশুভ শক্তির বিনাশের শপথ নিতে হবে। বাংলার পবিত্র মাটিতে বহিরাগত ষড়যন্ত্র আর কোনওভাবেই বরদাস্ত নয়। ৩০ সেপ্টেম্বর ঝড় বৃষ্টি দুর্যোগ যাই হোক ভোট দেওয়া প্রত্যেক ভবানীপুরবাসীর অবশ্য কর্তব্য। তাহলেই বাংলার মাটিতে এক নয়া ইতিহাস রচিত হবে। আর সেই ভিতের উপর দাঁড়িয়েই চব্বিশে ফের একবার বাঙালি প্রধানমন্ত্রী পাওয়ার স্বপ্ন দেখবে বাংলা। ভবানীপুর থেকেই সেই নয়া ইতিহাস লেখা শুরু হোক।