সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মক্ষেত্রে বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার ... বিশদ
ইরানে এমন ঘটনা কিন্তু নতুন কিছু নয়। ইরানের তরুণী দাবা খেলোয়াড় ডোরসা ডেরাখাসানির কাহিনীও ঠিক এমনই। একটা সময় অনূর্ধ্ব ১৬-এর সেরা দাবারুদের একজন ছিলেন ডোরসা। ভারতেও খেলে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ২০১৭ সালে একটি প্রতিযোগিতায় হিজাব না পরায় তাঁকেও একইরকম গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। শুধু ডোরসাই নয়, ওই প্রতিযোগিতায় এক ইজরায়েলি গ্র্যান্ড মাস্টারের বিরুদ্ধে খেলায় শাস্তির মুখে পড়তে হয় তাঁর ১৫ বছরের ভাইকেও। বাধ্য হয়েই সেদিন দেশ ছেড়ে, বাবা-মাকে ছেড়ে আমেরিকায় আশ্রয় নিতে হয়েছিল ডোরসাকে। এই প্রতিভাবান দাবাড়ু বলেছিলেন, ইরানের সরকার আমার মাথায় হিজাব রয়েছে কি না, তা নিয়ে বেশি তৎপর। কিন্তু মাথার ভিতরে যে মস্তিষ্কটা রয়েছে, তা নিয়ে নয়।
বছর দুই পরে ঠিক একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ইরানি বংশোদ্ভূত ফরাসি কোচ মেহের মনসিপোর তখন ছাত্রীর সাফল্যে আনন্দে ভাসছেন। ইরানের মতো একটা দেশ, যেখানে মহিলাদের মার্শাল আর্ট বা বক্সিংয়ের মতো খেলায় নামাটাই একটা লড়াই, সেই দেশ থেকে চ্যাম্পিয়ন মহিলা বক্সার। মনসিপোর বলছিলেন, সাদাফ ইরানের নাম উজ্জ্বল করেছে। ও যা করেছে, তার প্রভাব এখন সমগ্র বিশ্ব প্রত্যক্ষ করবে। লড়াইয়ে জেতার পরে সাদাফও বলেছিলেন, আরও অনেক মহিলা এবার বক্সিংয়ের রিংয়ে নামবেন। কিন্তু বিধি বাম। আন্তর্জাতিক খেতাবি লড়াইয়ে হিজাব পরেননি সাদাফ। পরেছিলেন শর্টস আর টি-শার্টস। সেই টি-শার্টস ছিল ইরানের জাতীয় পতাকার রঙেই। নিজেকে ইরানের একজন মহিলা প্রতিনিধি হিসেবেই তুলে ধরতে চেয়েছিলেন সাদাফ।
খেতাব জয়ের পর দেশে ফেরার বিমানের টিকিটও কেটে ফেলেছিলেন সাদাফ। সোশ্যাল মিডিয়াতেই ছিল অভিনন্দনের বন্যা। টিভি চ্যানেলেও তাঁকে ঘিরে ইইচই। সব দেখে শুনে সাদাফ একবারও ভাবেননি উল্টো কিছু ঘটতে পারে। বিমানবন্দরে আসার পথে হঠাৎ-ই কোচ শোনেন গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কথা। তারপরেই বিমানের টিকিট বাতিল করেন সাদাফ ও তাঁর কোচ। আপাতত ফ্রান্সই তাঁর ঠিকানা। হয়তো ডোরসার মতোই রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে হবে ইরানের এই প্রতিভাবান বক্সারকে। আশ্চর্যের ইরানের বক্সিং ফেডারেশনও এ ব্যাপারে চুপ। তাঁদের যুক্তি, সাদাফ ফেডারশনের নথিভুক্ত খেলোয়াড় নন।
যন্ত্রণাটা ভুলতে পারছেন না সাদাফ। বক্সিং ভালো লাগত ছোট থেকেই। কিন্তু বছর চারেক আগে বক্সিং খেলার ব্যাপারেই মনস্থির করেন সাদাফ। কিন্তু ওই পোশাক বিধির কারণে প্রকাশ্যে অনশীলন করতে পারতেন না। সবটাই করতেন গোপনে। বাবা-মা তাঁর এই সিদ্ধান্তে স্বভাবতই চিন্তিত ছিল। লক্ষ্যে অবিচল সাদাফ ১০০ কেজি থেকে ওজন ঝরিয়েছিলেন ৬৮ কেজিতে। ২০১৭ সালে একবার তেহেরানের একটি পাহাড় ঘেরা এলাকায় প্রশিক্ষণের জন্য এসেছিলেন মসিপোর। সেখানে গিয়েছিলেন সাদাফও। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করে মসিপোরকে প্রশিক্ষণ দিতে অনুরোধ করেন সাদাফ। ইরানে যেহেতু মহিলা বক্সারদের রিংয়ে নামার অনুমতি ছিল না, তাই সেই অনুরোধ রাখেননি মসিপোর। কিন্তু সম্প্রতি সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ইরান সরকার। সেই ঘোষণায় খুশিতে ফেটে পড়েছিলেন সাদাফ। আর লুকিয়ে বক্সিং করতে হবে না। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের স্বপ্ন তখন থেকেই দেখা শুরু করলেন সাদাফ। কিন্তু রাতারাতি সব বদলে গেল। একটা খেতাবি লড়াই সবকিছু পাল্টে দিল। ইরানে বক্সিংকে জনপ্রিয় করতে চেয়েছিলেন সাদাফ। চেয়েছিলেন মহিলারা আরও বেশি করে রিংয়ে নামুন। চাওয়া-পাওয়া মিলল কই?