সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মক্ষেত্রে বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার ... বিশদ
এর মাধ্যমে এক নতুন মাত্রা পেল এই ঘটনা। ক্রাইস্টচার্চের বদলা কি না, তা তদন্তেই প্রমাণিত হবে। তবে নানাদেশে জঙ্গি হামলার ধরন থেকে এটা বোঝা যায়, প্রায় সব জঙ্গি আক্রমণেরই একটি বহুজাতিক চরিত্র থাকে। আবার সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদের বহুজাতিক চরিত্র থাকলেও এগুলো প্রকৃতপক্ষে পরিচালিত হয় স্থানীয়ভাবে। সন্ত্রাসের গডফাদাররা স্থানীয় রাজনীতির সুযোগ নেয়। শাসনব্যবস্থার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্তরে দুর্বলতা থাকলে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির হিংসাত্মক আদর্শ দ্রুতই জায়গা নিয়ে নিতে পারে। উদ্বেগ প্রকাশ করে লিখেছেন জিটিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা। লিখেছেন, শ্রীলঙ্কায় তিন দশকের গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি হয়েছে ২০০৯-এ। কিন্তু এই দশ বছরে তারা বহুত্ববাদের পথ ধরে এগতে গিয়ে বারবার হোঁচট খেয়েছে। শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতা নতুন ঘটনা নয়। তিন দশকের গৃহযুদ্ধে আত্মঘাতী বোমা হামলার সঙ্গেও বারবার পরিচিতি ঘটেছে মানুষের। গত দশ বছরে একাধিকবার সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়েছে বৌদ্ধদের সঙ্গে খ্রিস্টান ও মুসলিমদের। ইস্টার সানডের দিনে চার্চ ও পাঁচতারা হোটেলে সিরিজ বোমা হামলা প্রমাণ করে কালক্রমে এই সাম্প্রদায়িকতা এবং বিরোধের পথ জঙ্গিবাদের দিকে প্রশস্ত হয়েছে। ভয়টা সেখানেই!
ইস্টার সানডে’তে চালানো সিরিজ আত্মঘাতী বোমা হামলার মূল হোতাকে নিয়ে। জানা গিয়েছে, ঘটনার মূল হোতা জাহরান হাশেমি আবার মহম্মদ কাশিম মহম্মদ জাহরান নামেও পরিচিত। আমাক নিউজ এজেন্সি খ্যাত আইএস’র প্রচারমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে সাত আত্মঘাতী হামলাকারীর সঙ্গে একমাত্র হাশেমিকে মুখখোলা অবস্থায় দেখা গিয়েছে। তাকেই হামলার মূল হোতা বলে দাবি করেছে ‘আমাক’। তৌহিদ জামাত নামে পরিচিত একটি স্থানীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা হাশেমি। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে নিজের সম্প্রদায়ের মধ্যে বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হাশমি। অন্য মুসলিমদের বিরুদ্ধে উস্কানি দেওয়ারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। আইএসপন্থী সামাজিক যোগাযোগের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গত কয়েক বছরে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়ে হাজার হাজার অনুসারী জোগাড় করেছে হাশেমি। শ্রীলঙ্কার মুসলিম কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিলমি আহমেদ দ্য টেলিগ্রাফকে বলেছেন, হাশেমির উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড নিয়ে তিন বছর ধরে প্রশাসনের কর্তাদের সতর্ক করে আসছিলেন তিনি। হাশেমি তার কোরান শিক্ষা ক্লাসে তরুণদের উগ্রবাদে আকৃষ্ট করছিল বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। হিলমি দাবি করেন, ঘৃণাবাদী বক্তব্য সম্বলিত তার সবগুলো ইউটিউব ভিডিও ভারত থেকে আপলোড করা হয়েছে। চেন্নাই অথবা বেঙ্গালুরুতে তার ঘাঁটি রয়েছে।
কোনও প্রমাণ ছাড়াই ‘আমাক’-এ সিরিজ বোমা হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। পরে এক ভিডিওতে আট হামলাকারীর ছবি প্রকাশ করে সাত হামলাকারীর হামলার বিবরণ প্রকাশ করা হয়। ভিডিও বার্তায় ইংরেজি ভাষায় যে সাব টাইটেল দেওয়া হয়, সেখানে লেখা ছিল: ‘হে ক্রুসেডারগণ...এই রক্তাক্ত দিনটি তোমাদের জন্য আমাদের পুরস্কার।’ এর পাশাপাশি সেখানে ২১/৪ এর উল্লেখ ছিল, যা ছিল ওই হামলার তারিখ (২১ এপ্রিল)। বিভিন্ন প্রপাগান্ডা ভিডিওতে খ্রিস্টান ও পশ্চিমী বিশ্বকে গালাগালি দিতে গিয়ে প্রায়ই ‘ক্রুসেডার’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে আইএস। ভিডিওতে আরবি ভাষায় দেওয়া একটি বার্তার অডিও ক্লিপও যুক্ত করা আছে। বার্তাটি নিহত আইএস মুখপাত্র আবু মহম্মদ আল আদনানির দেওয়া সতর্কবার্তা। সেখানে আদনানি বলেছিল: ‘অবিশ্বাসীদের দুর্গে বিস্ফোরণ চালাতে প্রতিটি জায়গায় (পর্বত ও উপত্যকায়) আমাদের সেনারা রয়েছে।’ ওই অডিও ক্লিপের পাশাপাশি আদনানির একটি ছবিও স্ক্রিনে ভেসে উঠতে দেখা গিয়েছে। আর তার নীচে তামিল ভাষায় তার নাম ও পদ উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৬ সালের আগস্টে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হয় আদনানি। ভিডিওতে আদনানির অডিও ক্লিপটি শেষ হওয়ার পর শ্রীলঙ্কান তামিল ভাষায় উচ্চারিত একটি কণ্ঠস্বর শোনা যায়। আর সাবটাইটেল দেওয়া হয়েছে আরবি ভাষায়। সেখানে বলা হয়েছে: ‘আমাদের সেনারা সর্বত্র অবস্থান করবে। সরকারের ক্যাসেলগুলো যা কি না কেবল দমন-পীড়নকে অনুমোদন করে, সেখানে বোমা ফেলব আমরা।’ তামিল ভাষায় ব্যবহৃত ক্যাসেল শব্দটিকে ভাষান্তরিত করলে অর্থ দাঁড়ায়: যে সরকারি ভবনে বিধি-বিধান তৈরি করা হয়। এরপর ভিডিওতে একে একে আট ব্যক্তির ছবি উপস্থাপন করা হয়। প্রত্যেকেই আইএসের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত কালো পতাকার সামনে পোজ দিয়েছে। ছবির পাশাপাশি প্রত্যেকের ডাক নাম প্রকাশ করা হয়েছে। আইএসের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতেও সেই একই নাম উল্লেখ করা হয়েছে। নামগুলো হল: আবু উবাইদা, আবুল মুখতার, আবুল খলিল, আবুল মুখতার, আবু হামজা, আবুল বারা, আবু মহম্মদ ও আবু আব্দিল্লাহ।
আরবি ও সিংহলি ভাষায় প্রকাশিত আমাক-এ প্রকাশিত আইএস’র ভিডিও ও ছবি বিশ্লেষণ করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ওই জঙ্গি সংগঠনের পক্ষ থেকে সাত আত্মঘাতী হামলাকারীর হামলার বিবরণ হাজির করা হয়েছে। তাদের দাবি, কলম্বোর কোচিচিকাদের সেন্ট অ্যান্টনি চার্চে আত্মঘাতী হামলা চালায় আবু হামজা। নোগোম্বো শহরে সেন্ট সিবাস্তিয়ান চার্চে হামলা চালায় আবু খলিল। বাট্টিচালোয়ার জিওন চার্চে আবু মহম্মদ তৃতীয় বিস্ফোরণটি ঘটায়। এছাড়া আবু উবাইদা, আবু বারা ও আবু মুখতার চিন্নামোন শহরের সাংগ্রি লা হোটেল ও কলম্বোর কিংসবারি হোটেলে কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটায়। এছাড়া আবদুল্লাহ পুলিসের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং তাদের তিনজনকে হত্যা করে বলেও আইএস দাবি করেছে। তবে বিবৃতিতে মুখ খোলা ব্যক্তির হামলা প্রসঙ্গে কোনও কিছু বলা হয়নি। তাকে শুধু এই হামলার মূল হোতা বলে দাবি করা হয়েছে।
ইরাক এবং সিরিয়ায় আইএসের প্রাথমিক সাফল্য দেশে দেশে মুসলিম তরুণ-তরুণীদের উৎসাহিত করেছিল এই জঙ্গিদের দলে যোগ দিতে। শুধু মুসলিম দেশ থেকে নয়, ইউরোপীয় অমুসলিম দেশের মুসলিম তরুণ-তরুণীও যোগ দিয়েছিল দলে দলে। সেইসময় শ্রীলঙ্কা থেকেও আইএসে যোগ দেওয়ার দৃষ্টান্ত আছে। ইরাক এবং সিরিয়ায় পরাজয়ের পর আইএস নেতৃত্ব এখন যেখানে সম্ভব, সেখানেই তার অবস্থান জানান দিতে কোনও নির্দিষ্ট দেশ বা এলাকা নয়, নানা দেশকে বেছে নিতে পারে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে। কলম্বো তারই উদাহরণ মাত্র। ফাইল ছবি