হায়দরাবাদ: গ্রেপ্তার, ১৪ দিনের জেল হেফাজত, জামিন—একদিনের মধ্যে এভাবেই আবর্তিত হল অল্লু অর্জুনের জেলযাত্রার ‘চিত্রনাট্য’। হায়দরাবাদে ‘পুষ্পা ২’ ছবির প্রিমিয়ারে এক মহিলা অনুরাগীর পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় শুক্রবার সকালে তাঁকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। গ্রেপ্তারির সময়ও খোশমেজাজে দেখা যায় তাঁকে। চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন। সাদা পোশাকে লেখা, ‘ফ্লাওয়ার নেহি, ফায়ার হ্যায়’। পুলিসের সামনেই স্ত্রী স্নেহা রেড্ডির গালে চুম্বন করেন অভিনেতা। তারপর উঠে যান পুলিস ভ্যানে। চিক্কাড়পল্লি থানায় নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। স্বাস্থ্য পরীক্ষাও হয়। বিকেলে নামপল্লি আদালত তাঁর ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন অভিনেতার আইনজীবী। এরপরই ট্যুইস্ট। জেল হেফাজতের রায়ের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উচ্চ আদালতে চার সপ্তাহের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান তিনি। বিচারপতি জে শ্রীদেবী জানান, তারকাদেরও বাঁচার অধিকার রয়েছে। নাগরিক হিসেবে তাঁদের ব্যক্তিস্বাধীনতাও রয়েছে। ৫০ হাজার টাকার বন্ডে তাঁর জামিন মঞ্জুর হয়েছে। এর মধ্যে মৃতার স্বামী ভাস্কর জানান, তিনি অভিযোগ তুলে নিতে প্রস্তুত। তাঁর বক্তব্য, ‘আমার স্ত্রীর মৃত্যুর নেপথ্যে অল্লু অর্জুনের কোনও হাত নেই। আমার ছেলে ছবিটি দেখতে চেয়েছিল, তাই গিয়েছিলাম। পুলিস আমাকে অল্লুর গ্রেপ্তারির কথা জানায়নি।’ গত ৪ ডিসেম্বর হায়দরাবাদের সন্ধ্যা থিয়েটারে ‘পুষ্পা ২: দ্য রুল’ ছবির প্রিমিয়ারে গিয়েছিলেন ভাস্কর মাগুদামপল্লি। সঙ্গী স্ত্রী রেবতী (৩৯), ন’বছরের পুত্র ও আট বছরের কন্যা। রাত ন’টা বেজে ১০ মিনিট নাগাদ প্রেক্ষাগৃহে ঢোকেন তাঁরা। আধঘণ্টা পর আচমকা প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশ করেন অল্লু অর্জুন। অভিযোগ, ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। সুপারস্টারকে দেখার জন্য হলের মধ্যে ঠেলাঠেলি। নীচের ব্যালকনিতে বসেছিলেন রেবতী ও তাঁর ছেলে। হুড়োহুড়িতে ছেলেকে নিয়ে পড়ে যান। তড়িঘড়ি পুলিস তাঁদের নিয়ে যায় হাসপাতালে। সেখানেই মৃত্যু হয় রেবতীর। এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটি। এই ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করেন মহিলার স্বামী। অনিচ্ছাকৃত খুন সহ একাধিক ধারায় অল্লু, তাঁর নিরাপত্তারক্ষী, টিম সহ সন্ধ্যা থিয়েটার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়। এর আগেই অ মৃতার পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন অভিনেতা।
তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি বলেন, ‘আইন নিজের পথে ব্যবস্থা নেবে।’ কংগ্রেস সরকারের সমালোচনায় সরব হন অন্ধ্রপ্রদেশের উপ মুখ্যমন্ত্রী পবন কল্যাণ। অল্লুর পাশে দাঁড়ান তেলুগু সুপারস্টার চিরঞ্জীবীও। তাঁর সমর্থনে মুখ খুলেছেন রশ্মিকা মন্দানা, নানি, বরুণ ধাওয়ানরা। পর্দার ‘শ্রীভল্লি’ রশ্মিকা লিখেছেন, দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। কিন্তু এর জন্য একজনকে দোষী বলাটা দুঃখজনক। অভিনেতা বরুণ ধাওয়ানের মন্তব্য, যে ঘটনা ঘটেছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু এর জন্য একা কাউকে দোষারোপ করা যায় না।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর অভিনেতা অল্লু অর্জুন। ছবি: পিটিআই