পড়ে গিয়ে বা পথ দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্তির যোগ থাকায় সতর্ক হন। কর্মে উন্নতি ও সাফল্যের যোগ। ... বিশদ
জুন মাসে বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানায় এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, সাইবার জালিয়াতদের পাল্লায় পড়ে তিনি এক কোটি ১৩ লক্ষ খুইয়েছেন। শেয়ারে বিনিয়োগ করলে বিপুল পরিমাণ রিটার্ন মিলবে, এই ফাঁদে পড়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি। যে অ্যাকাউন্টগুলিতে প্রতারিত ব্যক্তির টাকা জমা পড়েছিল তদন্তে নেমে পুলিস তার সূত্র ধরে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। এখান থেকেই তদন্ত অন্যদিকে মোড় নেয়। দেখা যায়, অন্যের নথি দিয়ে খোলা এই অ্যাকাউন্টগুলিতে দিল্লি, গুজরাতসহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে টাকা ঢুকেছে। ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম পোর্টালে গিয়ে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, এই গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ২৯টি রাজ্যে অভিযোগ জমা পড়েছে। ৮৯৪টি থানায় এফআইআর হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতারণার পরিমাণ ২৫০ কোটি টাকা।
ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, চক্রের মুল পান্ডা হল শিলিগুড়ির বাসিন্দা অভিষেক বানসাল, গুজরাতের মায়াঙ্ক চৌধুরী ও ফরিদাবাদের অমিত জিন্দাল। তিনজনই দুবাইতে রয়েছে। সেখান থেকে তারা চক্র নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে অভিষেক পেশায় সিএ। কলকাতাসহ বিভিন্ন রাজ্যে তাদের অফিস রয়েছে। এই অপরাধে একাধিক সিন্ডিকেট কাজ করছে। শ্রীলঙ্কাতেও ওই সাইবার জালিয়াত চক্র সক্রিয়। সেখানেও অনেকে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। মাঝেমধ্যে অভিযুক্তরা কলকাতায় এসে বিলাসবহুল হোটেলে থাকছে। বুধবার রাতে তদন্তকারীদের কাছে খবর আসে অভিষেক ও অমিত কলকাতায় একটি হোটেলে রয়েছে। কাগুজে কোম্পানি খোলার জন্য একাধিক লোক নিয়ে আসা হয়েছে। সেইমতো টিম সেখানে পৌঁছে এই দু’জনকে গ্রেপ্তার করে। মায়াঙ্ককে ধরা হয় বিহারের মজফফরপুর থেকে।
ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, তাদের এজেন্ট গোটা দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় গ্রুপ খুলে বিভিন্ন লোকজনকে যুক্ত করা হতো। শেয়ারে বিনিয়োগ করে অল্প কয়েকদিনে কে কত টাকা লাভ করেছেন তার তথ্য তুলে ধরা হতো ওই গ্রুপে। সবটাই তাদের সাজানো। লোভে পড়ে কেউ রাজি বলে তাদের একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলত সাইবার জালিয়াতরা। অনলাইনে ট্রেডিং শুরু করার পর প্রতারকদের খোলা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে জমা পড়ত টাকা। প্রথমে কিছু রিটার্ন মিলত। ফাঁদে পড়ে বাড়তি বিনিয়োগ করার পর টাকা রিটার্ন চাইলেই তাকে গ্রুপ থেকে ব্লক করে দিত অভিযুক্তরা। এভাবেই চলত প্রতারণা।
ধৃতরা জানিয়েছে, বিভিন্ন লোকজনের আধার, প্যানকার্ডসহ অন্য নথি দিয়ে কোম্পানি তৈরি করত তারা। যাদের নথি জমা করা হল তাদের কোম্পানির ডিরেক্টর হিসেবে দেখাত জালিয়াতরা। এই কোম্পানিগুলি খুলত সিএ অভিষেক বনসাল। বেশি পরিমাণ লেনদেনের সুবিধা থাকায় কোম্পানির নামে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। দেশজুড়ে ২৫০০ ভাড়ার অ্যাকাউন্ট চলছে তাদের। এই কাজে ব্যাঙ্ক কর্মীদের একাংশ সাহায্য করছে তার প্রমাণ মিলেছে নাগেরবাজার এলাকার বেসরকারি ব্যাঙ্কের এক কর্মী ধরা পড়ায়। প্রতারণার টাকা দিল্লি গুজরাত হয়ে চলে যাচ্ছে দুবাইতে। এই টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে ক্রিপ্টো কারেন্সিতে। শ্রীলঙ্কায় নেপাল ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে বিভিন্ন ক্যাসিনোয় ও অনলাইন বেটিং প্রতারণার অর্থ বিনিয়োগ রয়েছে বলে জেনেছেন তদন্তকারীরা। সেই টাকা আবার ঘুরপথে ভারতে আসার পর পেমেন্ট মেটানো হচ্ছে এজেন্টসহ অন্যদের।