জীবানন্দ বসু, কলকাতা: কর্মচারীদের যতই আপত্তি থাকুক, টিকিট ছাপার নিজস্ব ব্যবস্থা তুলে দিতে বদ্ধপরিকর রেলমন্ত্রক। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে কেনা পাঁচটি বিদেশি অফসেট মেশিন বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে তারা। ক্রেতা হিসেবে প্রস্তাব দিয়েছে ভারত সরকারের টাকা ছাপানোর নির্ভরযোগ্য সংস্থা সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড মিন্টিং কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড। তাদের দিয়েই টিকিট ছাপানোর কাজও চালাতে আগ্রহী রেল। কিন্তু প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বছর পাঁচেকের পুরনো এই চালু অফসেট মেশিনগুলি তাদের সংস্থায় নিয়ে আসা, বসানো এবং কিছু পরিবর্তনের জন্য মোট ৭৬ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা খরচ পড়বে। তাই ‘রেসিডুয়াল ভ্যালু’ বাবদ তারা সেগুলির ক্রয়মূল্যের মাত্র ৫ শতাংশ দিতে পারবে। অর্থাৎ মাত্র ৩ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা। কার্যত স্ক্র্যাপের দর। তবে জিএসটির খরচ দেবে সংস্থাটি। শুধু তাই নয়, আগামী পাঁচ বছর দূরপাল্লার ট্রেনের প্রতি ১,০০০ টিকিটে ২৬০ টাকা এবং লোকাল ট্রেনের প্রতি ৫০০ টিকিটের রোলে ৫২ টাকা ২০ পয়সা ছাপার খরচ দিতে হবে। সঙ্গে জিএসটি। বর্তমান ছাপার খরচের কয়েকগুণ বেশি। ফি বছর আরও অতিরিক্ত ৫ শতাংশ দাম যুক্ত করার শর্তও রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এই প্রস্তাব নিয়ে উঠে গিয়েছে বড়সড় প্রশ্ন।
রেলবোর্ড সূত্রের খবর, দিন কয়েক আগে তাদের কাছে সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস বিভাগের চিফ জেনারেল ম্যানেজারের তরফে ওই ‘বিতর্কিত’ প্রস্তাব এসেছে। মন্ত্রকের অফিসারদের একাংশ বলছেন, এই পাঁচটি মেশিন কিনতে ৭৫ কোটি টাকার উপর খরচ পড়েছিল। এখন দৈনিক কমপক্ষে ১৪ লক্ষ টিকিট ছাপা হয় সেগুলিতে। কোন মাপকাঠিতে সরকারি প্রিন্টিং সংস্থা কার্যত স্ক্র্যাপের দরে মেশিনগুলি কিনতে চাইছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। বিতর্ক তৈরি হয়েছে টিকিটের দামের চুক্তি নিয়েও। এব্যাপারে মমতা সহ দেশের তামাম বিরোধী শিবিরের হস্তক্ষেপ চাইছেন ছাপাখানাগুলির সঙ্গে যুক্ত কর্মচারী-অফিসাররা। উল্লেখ্য, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে হাওড়া সহ দেশের পাঁচ প্রান্তে অবস্থিত ছাপাখানা গুটিয়ে ফেলার নির্দেশ জারি করেছে রেল। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই মন্ত্রকের কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন।