কর্মপ্রার্থীরা বেশ কিছু সুযোগের সংবাদে আনন্দিত হবেন। বিদ্যার্থীরা পরিশ্রমের সুফল নিশ্চয় পাবে। ভুল সিদ্ধান্ত থেকে ... বিশদ
এপিএমসি-র ভালো ও মন্দ দিক
কারণগুলো স্পষ্ট। কৃষকদের ৮৫ শতাংশই ছোট জোতের মালিক। মানে এক হেক্টরের চেয়েও ছোট ছোট জোতের মালিক তাঁরা। ফলে, বিক্রি করার মতো উদ্বৃত্ত ফসল তাঁদের কমই থাকে। এপিএমসি মার্কেটগুলো যেসব ছোট কৃষকের খামার থেকে অনেক দূরে, তাদের জন্য এই ব্যবস্থা লাভদায়ক নয়। কারণ পণ্যগুলো সামান্য কয়েকটা বস্তায় ভরা, লোডিং করা, গাড়ি করে নিয়ে যাওয়া এবং আনলোডিং করার একটা ভালো খরচ রয়েছে। তারপর আসে এপিএমসিতে পৌঁছে প্রতীক্ষা-সহ ফি জমা করার পালা। এরপর বিক্রীত পণ্যের দাম আদায় করতে কেটে যায় দু’দিন! ছোট ছোট কৃষকের জন্য এ এক নিরর্থক ব্যবস্থা। সেই তুলনায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অনেকটাই নির্ভরযোগ্য বন্ধু হয়ে ওঠেন। কারণ, তাঁরা খামারে গিয়েই পণ্য কেনেন এবং হাতে হাতে দাম মিটিয়ে দেন। দামটা তখন এমসিপি-র চেয়ে কিছুটা কম হলেও পুষিয়ে যায়।
এপিএমসি মার্কেট চত্বরগুলো পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মতো রাজ্যগুলোর জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কারণ, এসব রাজ্যে বিক্রি করার মতো বিপুল ফসল উদ্বৃত্ত থাকে। এই দুই রাজ্যে উৎপাদিত ধান ও গমের ৭৫ শতাংশ সরকারি এজেন্সিগুলো মারফত কেনা হয়ে থাকে। অন্য রাজ্যগুলোর বেলায় কী হয়—কতিপয় পণ্ডিত এই নিয়ে তর্ক করেন যে বাজারের সংখ্যা পর্যাপ্ত নয় এবং সেগুলো বেশ দূরে দূরেও। উদাহরণ হিসেবে তামিলনাড়ুর কথা বলতে চাই। ৩৬টি জেলায় ২৮৩টা বাজার রয়েছে। মানে জেলাপিছু গড়ে ৮টা বাজার। এগুলোতে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে সর্বমোট ১২৯ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকার ব্যবসা হয়েছে। আর যদি মহারাষ্ট্রের কথা ধরি, সেটাও খুব ভালো দৃষ্টান্ত নয়। সেখানে বাজারের সংখ্যা ৩২৬। ফসল ওইসব বাজারে নিয়ে যেতে কৃষকদের গড়ে ২৫ কিমি যেতে হয়।
কোনও সংশয় নেই যে এপিএমসি আইন কৃষিপণ্যের অবাধ কেনাবেচা নিয়ন্ত্রণ করে এবং বাজার চত্বর কৃষকদের জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় এই ধরনের মার্কেট থেকে সংগৃহীত ফি দ্বারা রাজ্যের সরকারি কোষাগার বিশেষভাবে লাভবান হয়। সংশ্লিষ্ট সরকারও ওই টাকা খরচ করে কৃষি
এবং গ্রামীণ পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য। তৎসত্ত্বেও আমি মনে করি যে সময় হলে এপিএমসি আইন অবশ্যই অবাধ বাণিজ্যের পক্ষে সুফলদায়ক হবে। এজন্য অবশ্য বাজারের সংখ্যা অনেক গুণ বাড়াতে হবে এবং সেগুলোকে সব কৃষকের জন্য সুবিধাজনক করে গড়ে তুলেত হবে।
কংগ্রেসের ইস্তাহার বনাম বিজেপির বিল
২০১৯ সালে কংগ্রেসের ইস্তাহারে এটাই ছিল প্রতিশ্রুতি। কংগ্রেসের ইস্তাহার ‘ফার্মার প্রডিউসার কোম্পানিগুলোকে/সংগঠনগুলোকে প্রমোট করার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কেন? ‘তথ্যাদি, প্রযুক্তি এবং বাজারকে নাগালে পাওয়ার মতো কৃষকদের উপযুক্ত করে তোলার জন্য’। আরও উদ্দেশ্য ছিল—‘উপযুক্ত পরিকাঠামো সমেত ফার্মার্স মার্কেট তৈরি করা। বড় গ্রাম এবং ছোট শহরগুলোকে এমনভাবে সাপোর্ট দেওয়া হবে যে কৃষকরা সহজেই তাঁদের ফসল বাজারে নিয়ে যেতে পারবেন এবং অবাধে বেচাকেনা সেরে ফেলবেন।’ দেশজুড়ে এই ধরনের হাজার হাজার বাজার নির্মাণ করাই ছিল কংগ্রেসের ওই প্রতিশ্রুতির নির্যাস। এই ধরনের বাজার তৈরি করতে পারবে রাজ্য সরকার নিজেই, অথবা স্থানীয় পঞ্চায়েত, সমবায় সমিতি কিংবা লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোনও বেসরকারি উদ্যোগী। এই বাজারগুলোতে হালকা নিয়ন্ত্রণ থাকবে এবং প্রতিটা লেনদেন এই শর্তে সম্পন্ন হবে যে, কোনও ক্ষেত্রেই এমএসপি-র কম দাম গ্রাহ্য হবে না। তখন এপিএমসি আইন বাতিল করার প্রস্তাবটা হয়ে উঠত—কৃষকদের নাগালের ভিতরে কয়েক গুণ বাজার তৈরির একটা স্বাভাবিক পরিণতি।
উল্টো দিকে, মোদি সরকার কী করল? তারা এমএসপির নিরাপত্তাটিকে দুর্বল করে দিল এবং শস্য সংগ্রহের সরকারি ব্যবস্থাটিকে হালকা করে ফেলল। কৃষকরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন। কারণ, তাঁরা ভয় পাচ্ছেন যে এমএসপি ব্যবস্থাটিকেই তুলে দেওয়া হবে না তো? রাজ্য সরকারগুলির আতঙ্ক হল—খাদ্যশস্যের সরকারি সংগ্রহ এবং গণবণ্টন ব্যবস্থা (রেশন) ধ্বংস হয়ে যাবে। খাদ্য নিরাপত্তার তিনটি পিলারের গোড়া একবার যদি নড়বড়ে করে দেওয়া হয়, তবে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন, ২০১৩-র মাধ্যমে যে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়া হয়েছে, সেটি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে।
মোদি সরকারের আইন হাজার হাজার বিকল্প বাজার সৃষ্টি করছে না। তার পরিবর্তে বরং তারা চুক্তি চাষের অনুমতি দেবে। কর্পোরেটদের জন্য, এবং পরিশেষে, কার্টেলদের (দাম নিয়ন্ত্রণে দক্ষ বড় ব্যবসায়ীদের জোট) জন্যও দরজা হাট-আলগা করে দেবে। এই ধরনের পরাক্রমশালী ক্রেতাদের বিরুদ্ধে ছোট/মাঝারি কৃষকদের দর কষাকষির অথবা চুক্তি সম্পাদনের সমান ক্ষমতা থাকবে না। নতুন আইনে বিতর্ক-বিবাদ মীমাংসার ব্যবস্থাটিও এমন জটিল যে কৃষকরা একেবারে শেষ হয়ে যাবেন।
আরও একটি ফাঁকা আওয়াজ
কৃষিমন্ত্রী সংসদকে বলেছেন যে এমএসপি নিয়ে নতুন আইনের কোনও কিছুই করার নেই। সেটা আক্ষরিক অর্থেই সত্যি! তবুও, তিনি বলেছেন যে সরকার কৃষকদের এমএসপির ‘গ্যারান্টি’ বা নিশ্চয়তা দেবে। এটি একটি উদ্ভট প্রতিশ্রুতি। সরকার কীভাবে জানবে—কোন কৃষক, কোন ফসল কোন ক্রেতাকে বিক্রি করল? যদি এমএসপি বাধ্যতামূলক রাখাই সরকারের উদ্দেশ্য, তবে কেন এই সংক্রান্ত বিলে সেইমতো একটি ধারা (ক্লজ) রাখা হল না—কৃষককে ক্রেতা যে দাম মেটাবেন, সেটি ‘সরকারের তরফে নির্দিষ্ট করে দেওয়া এমএসপির কম হবে না’?
নোট বাতিল ছিল একটি বিপর্যয়। ২০১৭-১৮ থেকে দেশজুড়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অব্যবস্থা ছিল তারই ধারাবাহিক পরিণাম। তেমনি আইনে পরিণত হওয়ার পথে কৃষি বিল দু’টিও ভারতীয় কৃষক শ্রেণীকে এবং কৃষি অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেবে। তারা রাজ্যগুলির অধিকার এবং ফেডারালিজমের উপরেও আঘাত হানল। আপাতভাবে, মোদি সরকার বিশ্বাস করে যে সে সব মানুষকে সব সময়ের জন্য বোকা বানাতে ওস্তাদ।