নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: স্ত্রীয়ের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল ১৪ জুন রাতে। তার ঠিক দু’দিন পরে ১৬ জুন মধ্যরাতে রহস্যজনকভাবে জাহাজ থেকে নিখোঁজ হয়ে যান বাঁশদ্রোণীর গাছতলার বাসিন্দা তথা বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার সম্বিত মজুমদার। পরিজনরা সর্বত্র চিঠি দিয়ে তাঁকে খুঁজে দিতে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কোনও সদুত্তর পাননি তাঁরা। এরই মধ্যে তাইওয়ানের নৌবাহিনী সমুদ্রে রুটিন টহল দেওয়ার সময় তাইতুং উপকূলে সমুদ্রের মধ্যেই একটি দেহ ভাসতে দেখে। তারা খবর দেয় সে দেশের উপকূলরক্ষী বাহিনীকে। উপকূলবর্তী শহর চাংবিং থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে সেই দেহটি উদ্ধার করে উপকূলরক্ষী বাহিনী। তাইওয়ানের একটি সংবাদপত্রে এই প্রতিবেদন বের হয়। যা নজরে আসে সম্বিতবাবুর পরিজনদের। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেহটি দেখে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসক এবং তদন্তকারীদের ধারণা, দীর্ঘসময় জলে থাকায় পচন ধরেছে তাতে। এই প্রতিবেদন পড়ে ওই ইঞ্জিনিয়ারের পরিজনদের মনে হয়েছে, এই দেহটি সম্বিতবাবুরই। কিন্তু কেন? তাঁরা বললেন, প্রায় পচে গলে যাওয়া ওই দেহে যে সোনার চেনের হদিশ মিলেছে, তাতে হনুমানের ছবি দেওয়া লকেট রয়েছে। তাছাড়া যে পোশাকের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তাও মিলে যাচ্ছে সম্বিতবাবুর সঙ্গে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মৃতের পরনে ছিল ক্রোকোডাইলের লোগো দেওয়া গাঢ় নীল রঙের পোলো শার্ট, ধূসর শর্টস। পায়ে ছিল কালো চটি। মৃতের দেহের দৈর্ঘ্য ১.৮০ মিটার। সবই প্রায় হুবহু মিলে গিয়েছে সম্বিতবাবুর সঙ্গে। তবে যতক্ষণ না ডিএনএ পরীক্ষা হবে, ততক্ষণ বোঝা যাবে না, আদৌ দেহটি ওই ইঞ্জিনিয়ারের কি না। ইঞ্জিনিয়ারের বাড়ির লোকজনের কথায়, ওই শার্ট, শর্টস এবং জুতোর যে বর্ণনা পাওয়া গিয়েছে, তা এমটি সেরেংগেটি জাহাজে কাজে যোগ দেওয়ার আগে কিনেছিলেন সম্বিতবাবু। তাঁরা ওই হনুমানের ছবি দেওয়া লকেটটিও সম্বিতবাবুর বলে চিহ্নিত করেছেন। ইতিমধ্যেই তাঁরা তাইওয়ান পুলিসের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন বলে জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা ৫০ বছরের সম্বিত মজুমদার ১৬ জুন রাতে তেলবাহী জাহাজ এমটি সেরেংগেটি থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান। ওই জাহাজে সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার পদে কর্মরত ছিলেন তিনি। নাইজেরিয়ার এসক্রাভোস তেলের খনি থেকে তেল বোঝাই করে দক্ষিণ কোরিয়ার ডায়সান বন্দরের দিকে যাচ্ছিল জাহাজটি। মাঝে সিঙ্গাপুরের বন্দরেও থামে সেটি। ডায়নাকন ট্যাঙ্কার ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড নামক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার হয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে এমটি সেরেংগেটি জাহাজে কাজে যোগ দেন সম্বিতবাবু।