নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শীতলকুচিতে আক্রান্ত হয়েই গুলি চালিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী—এই যুক্তি প্রতিষ্ঠার মরিয়া চেষ্টা শুরু করেছে গেরুয়া বাহিনী। আর সেই মরিয়া চেষ্টার অঙ্গ হিসেবে একের পর এক ‘ফেক’ ভিডিও ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে চলেছে বিজেপি। সোমবারের পর ফের মঙ্গলবার সেরকমই এক ভিডিও ফুটেজকে নিয়ে উত্তাল হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। এক পোলিং বুথে জনতার হামলা এবং তার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর শূন্যে গুলি ছোঁড়া ও লাঠিচার্জের ওই ভিডিও ফুটেজকে শীতলকুচির বলে দাবি করে বিজেপি বলেছে, বুথ দখল রোখা এবং আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এদিন সকালে ফেসবুকের ‘কামারহাটি বিজেপি’ গ্রুপে ওই ভিডিও ফুটেজটি পোস্ট করেন ভাটপাড়া কেন্দ্রে গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী পবন সিং। এরপর ‘ভক্তকুল’ তা ছড়িয়ে দিতে থাকে সোশ্যাল মিডিয়ার নানা প্ল্যাটফর্মে। এরপরই জানা যায়, ভিডিও ফুটেজটি ‘ফেক’। গত ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল লোকসভা ভোটের দিন ওই হাঙ্গামার ছবিটি মণিপুরের পূর্ব ইম্ফল জেলার। প্রসঙ্গত, সোমবারই বিজেপি সাংসদ তথা পবন সিংয়ের বাবা অর্জুন সিং জখম এক সিআইএসএফ জওয়ানের ছবি পোস্ট করে সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেছিলেন, ওই জওয়ান আক্রান্ত হয়েছেন শীতলকুচিতে জনতার আক্রমণে। তাই বাধ্য হয়েই গুলি চালাতে হয়েছে সিআইএসএফ’কে। পরে জানা যায়, ওই ফুটেজটি ধানবাদের বাগমারা কোলিয়ারি এলাকায় কর্মরত সিআইএসএফ’এর আরপি সিং নামে এক এএসআইয়ের। গত ৯ এপ্রিল এক লেঙ্গুরের আক্রমণে জখম হয়েছিলেন তিনি।
এদিন বিজেপি’র তরফে দেওয়া ভিডিও ফুটেজটি আসলে কী? খোঁজখবর নিয়ে ‘তথ্য অনুসন্ধানকারী’ সর্বভারতীয় কয়েকটি সংস্থা জানিয়েছে, মণিপুরের পূর্ব ইম্ফল জেলার কায়ামগেই এলাকায় ছিল ওই পোলিং বুথটি। লোকসভা ভোটের দিন ইভিএম দীর্ঘক্ষণ খারাপ হয়ে থাকায় উত্তেজিত গ্রামবাসীরা চড়াও হয় ‘মুসলিম মাখা লেইকাই’ নামে ওই বুথটিতে। ভাঙচুর করা হয় ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট মেশিন। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে সিআরপিএফ সেখানে লাঠিচার্জ এবং শূন্যে গুলি চালায়। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ওই এলাকাটিকেই শীতলকুচি বলে চালিয়েছে গেরুয়া শিবির। খোঁজখবর নিয়ে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করা ওই ভিডিও ফুটেজটি @TNsubbaRao1 এই অ্যাকাউন্ট থেকে সোমবারই পোস্ট করা হয়েছে। ওই পোস্টে হাঙ্গামাকারীদের শীতলকুচির বুথ থেকে হটিয়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ধন্যবাদও দেওয়া হয়েছে। ওই ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট থেকেই ভিডিও পোস্টটি ছড়িয়ে দিয়েছে ‘ভক্তকুল’। তৃণমূল কংগ্রেসের কামারহাটির প্রার্থী মদন মিত্র এই ভুয়ো ভিডিও ফুটেজ ছড়ানোর জন্য দায়ী বিজেপি নেতাদের শাস্তির দাবি করেছেন।