বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: করোনার ঠেলায় মাত্র ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার ব্যবহৃত পিপিই জমছে রাজ্যে! ওজন হিসেবে যা প্রায় ১৮ টন বা ১৮ হাজার কেজি! গোটা রাজ্যে সমস্ত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও প্রাইভেট চেম্বার থেকে রোজ এই পরিমাণ পিপিই বর্জ্য জমা পড়ছে। এখনও পর্যন্ত চিকিৎসাজাত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সেগুলিকে হলদিয়া ও বিভিন্ন কেন্দ্রে নিয়ম মেনে পোড়ানো চলছে। কিন্তু আর ক’দিন? অবিলম্বে বিকল্প না ভাবলে সামনের দিনগুলিতে করোনা বর্জ্যই বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। পিপিই ও অন্যান্য করোনা বর্জ্য নিয়ে এই মর্মে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরকে চিঠি পাঠাল অধিকাংশ জেলায় চিকিৎসা বর্জ্য সামলানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা। তারা জানিয়েছে, হয় পুনর্ব্যবহারযোগ্য পিপিই আনা হোক। নয়ত, বিকল্প ভাবা হোক। বা নন করোনা হাসপাতালের পিপিই ওই হাসপাতালই নষ্ট করুক। সংস্থার পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান কৃষ্ণেন্দু দত্ত বলেন, আমাদের চিকিৎসা বর্জ্য ধ্বংস করার ঊর্ধ্বসীমা দিনে ২৭ টন। পিপিই’র জন্য এখনই তা পৌঁছেছে ২৫ টনে। হাসপাতালের বেডপিছু আগে ২৫০ গ্রাম চিকিৎসা বর্জ্য বেরত। পিপিই’র জন্য তা দু’কেজিতে পৌঁছেছে। এক মাস পর যাবতীয় গোডাউন উপচে পড়বে। বাড়তি পিপিই বর্জ্য ধ্বংস করা সম্ভব হবে না। তাই বাধ্য হয়ে এই চিঠি। কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, গোটা দেশে এক অবস্থা। পিপিই বর্জ্য ভয়ঙ্কর চেহারা নিচ্ছে। পরিবেশবিদরাও জানাচ্ছেন, পিপিই, গ্লাভস, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতল মিলিয়ে করোনা বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। হাসপাতাল ছাড়া বাড়ি বাড়ি এইসব করোনা প্রতিরোধী সামগ্রীর ব্যবহার চলছে। যেখানে সেখানে তা ফেলা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট নীতি না নিলে ভবিষ্যতে করোনা বর্জ্যের মাশুল গুনতে হবে প্রতিটি রাজ্যকে। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবহিত। অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের এক আধিকারিককে দেখতে বলা হয়েছে। শীঘ্রই এ সংক্রান্ত পরিবর্তিত নীতি আসবে।
রাজ্যজুড়ে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ প্রধানত দু’টি বেসরকারি সংস্থা। একটি দক্ষিণবঙ্গ, অন্যটি উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি সামলায়। শুধু দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডাক্তারবাবুর চেম্বার মিলিয়ে রোজ জমা পড়ছে ১২ টন ব্যবহৃত পিপিই! করোনা রোগীদের ব্যবহৃত থালা, বাসন, বোতল ইত্যাদি আলাদা! উত্তরবঙ্গে রোজ জমা পড়ছে কমবেশি ৬ টন ব্যবহৃত পিপিই। দক্ষিণবঙ্গে সেগুলি মজুত হচ্ছে হাওড়া, কল্যাণী, দুর্গাপুর, হলদিয়ার গোডাউনে। উত্তরবঙ্গেও রয়েছে সেখানকার সংস্থার ইউনিট। বর্জ্যগুলি জীবাণুমুক্ত করে দূষণ বিধি মেনে ধ্বংস করাই নিয়ম। কিন্তু যেভাবে বাড়ছে, তা আর কতদিন সম্ভব? পরিবেশবিদ সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, করোনার জন্য বিপজ্জনক সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক ফিরে এসেছে গ্লাভস ও পিপিইতে। স্যানিটাইজারের বোতল, সেও প্লাস্টিক। করোনা বর্জ্য যেখানে সেখানে পোড়ালে বায়ুদূষণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নিয়ম না মেনে জমালে রোগ সংক্রমণের ভয় আছে। এর মধ্যে করোনা বর্জ্য নষ্ট করার ঊর্ধ্বসীমা পেরলে কী হবে, ভাবলেই দুশ্চিন্তা হচ্ছে।