নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শ্যামবাজারের উলটপুরাণ হাতিবাগানে। করোনা আতঙ্কে শ্যামবাজার ট্রাম ডিপোর উল্টোদিকের ফুটপাতে পড়ে থাকা অসুস্থ বৃদ্ধকে ছুঁয়ে দেখেননি কেউ। ঠিক একদিন পর মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন হাতিবাগানের বাসিন্দারা। তাঁদের তৎপরতায় ভবঘুরে বৃদ্ধ পেলেন নতুন ঠিকানা। আর সেই সঙ্গে অবশ্যই ফুল মার্কস পেলে শহর কলকাতার উদার মানসিকতা। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে হাতিবাগানের ফুটপাতে। হাতিবাগান চারমাথা মোড় থেকে খান্নার দিকে অরবিন্দ সরণি ধরে কিছুটা এগিয়ে গেলে বাঁদিকে ফুটপাতে দীর্ঘক্ষণ পড়েছিলেন এক বয়স্ক ব্যক্তি। স্থানীয় সূত্রে দাবি, কোনওরকমে নাম বলেছিলেন শৈলেন সাহা। ঠিকানা বলতে পারেননি। তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসেন স্থানীয় দুই বাসিন্দা শুভাশিস মল্লিক ও শাশ্বত বসু। তাঁরাই সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ এই দৃশ্য দেখার পর খবর দেন ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর অতীন ঘোষের কাছে। এক মুহূর্ত দেরি না করে কলকাতা পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের অন্যতম সদস্য তথা স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতীন ঘোষ অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। আধঘণ্টার মধ্যে বড়তলা থানার পুলিস এবং পুরসভার অ্যাম্বুল্যান্স এসে ফুটপাত থেকে ওই ভবঘুরেকে নিয়ে গিয়ে কালীঘাট নির্মল হৃদয়ে পৌঁছে দেন। তাঁর সেবা-শুশ্রূষা হয়।
শুভাশিস মল্লিক বলেন, ওনাকে পড়ে থাকতে দেখে মনে হয়েছিল মৃতদেহ পড়ে আছে। জরাজীর্ণ, অর্ধনগ্ন শরীর। শহরে একের পর এক অমানবিকতার ঘটনা ঘটছে। নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি। অতীন ঘোষকে ফোন করে বিস্তারিত জানানোর পর উনি সব ব্যবস্থা করে দেন। এই প্রসঙ্গে অতীন ঘোষ বলেন, গতকাল শ্যামবাজারের ঘটনা শোনার পর সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক মনে হয়েছিল। কমিউনিকেশন গ্যাপের জন্য অনেকেই অ্যাম্বুল্যান্স পাচ্ছেন না। পাশে পড়ে থাকা মানুষের জন্য কেউ আতঙ্কে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন না। গতকালের ঘটনা আমার ওয়ার্ডে হয়েছিল। তাই আরও বেশি আক্ষেপ ছিল। আজকে স্থানীয়দের থেকে ফোন পাওয়ার পরেই অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানোর ব্যবস্থা করে ওই ভবঘুরে বৃদ্ধকে উদ্ধার করা হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শহর কলকাতায় দুই চিত্র। একদিকে শ্যামবাজারের ফুটপাতে সারারাত, বেলা গড়িয়ে পড়ে থাকা বৃদ্ধ। যাঁকে ছুঁয়েও দেখল না কেউ। অবশেষে অ্যাম্বুল্যান্স এসে দুপুরে নিয়ে গেলে হাসপাতালে। অন্যদিকে, এদিন সকালে হাতিবাগানে কলকাতার চিরাচরিত মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির উদাহরণ। আবারও প্রমাণিত, শত আতঙ্কেও অটুট সিটি অফ জয়- এর উদারতা।