পড়ে গিয়ে বা পথ দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্তির যোগ থাকায় সতর্ক হন। কর্মে উন্নতি ও সাফল্যের যোগ। ... বিশদ
প্রবাদপ্রতিম সাংবাদিক প্রয়াত বরুণ সেনগুপ্তের স্বাক্ষর সংবলিত এই চিঠি আজও সযত্নে আগলে রেখেছেন কোচবিহারের দেবীবাড়ির বকুলতলার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী দিলীপকুমার সরকার। ‘বর্তমান’-এর পথচলা শুরু হয়েছিল ১৯৮৪ সালের ৭ ডিসেম্বর। সম্পাদক বরুণ সেনগুপ্ত। আজ যা মহীরুহে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সেই শুরুর সময়টা কিন্তু ছিল অত্যন্ত কঠিন। ভালো ছাপার জন্য চাই উন্নত মানের মেশিন। তারজন্য প্রয়োজন ছিল প্রচুর অর্থের। সেই কারণেই সাধারণ মানুষের সহায়তা চাওয়া হয়েছিল, সেকথা আজও মনে আছে বর্ষীয়ান দিলীপবাবুর। এই আবেদনের কথা জানার পরেই তিনি ‘পাঁচ টাকা’ পাঠিয়েছিলেন।
এরপরেই ডাকযোগে তাঁর কাছে এসে পৌঁছয় ‘বরুণ সেনগুপ্ত গিফট অ্যাকাউন্ট’-এর রসিদ। নম্বর-০২৫৮। তাতে লেখা, ‘দানের পরিমাণ পাঁচ টাকা।’
কোথায় কলকাতা, কোথায় দিনহাটা? দিলীপবাবু তখন স্ত্রীর চাকরির সুবাদে দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালের কোয়ার্টারে থাকেন। সেই ঠিকানাতেই এল চিঠি, কুপন। একটি দৈনিক সংবাদপত্র পথচলা শুরু করছে। সম্পাদক বরুণ সেনগুপ্ত। তার আগে জরুরি অবস্থার সময় তাঁর জেলযাত্রা, তাঁর অনবদ্য লেখা কলকাতা ছাড়িয়ে ততদিনে বাংলার এই প্রত্যন্ত এলাকাতেও ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছে।
দিলীপবাবু আদ্যন্ত বামপন্থী মানুষ। বাম ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বরুণবাবুর তীক্ষ্ণ কলমের ভক্ত। সাংবাদিক হিসেবে সঠিক কথাটি সঠিক সময়ে বলিষ্ঠতার সঙ্গে তুলে ধরায় বরুণবাবুর যে সাহসিকতা, মুন্সিয়ানা, তারই ভক্ত ছিলেন সেই সময়ের যুবক দিলীপকুমার সরকার।
তিনি বলেন, ‘১৯৮৪ সালের ঘটনা। আমি তখন স্ত্রীর চাকরির সুবাদে দিনহাটা হাসপাতালের কোয়ার্টারে থাকি। নিজে সেচদপ্তরে চাকরি করি। আমাদের যিনি সংবাদপত্র দিতেন, তিনি একদিন বললেন, আপনি বরুণ সেনগুপ্তের নাম শুনেছেন? আমি তাঁকে জানাই, নিশ্চয়ই! বরুণ সেনগুপ্ত জরুরি অবস্থার সময় জেল খেটেছেন। তিনি একজন নির্ভীক সাংবাদিক। ওই সংবাদপত্র বিক্রেতাই আমাকে প্রথম জানান তিনি একটি খবরের কাগজ সম্পাদনা করবেন। তারজন্য যে মেশিন প্রয়োজন তা বিদেশ থেকে আনতে হবে। এরজন্য প্রচুর টাকার দরকার। তাই তিনি সকলের কাছে আবেদন করেছেন, যিনি যেমন পারবেন আর্থিক সাহায্য করতে পারেন। সেই সময় আমি পাঁচ টাকা পাঠিয়েছিলাম। এর কিছুদিন পর তিনিই আমাকে বলেন, আমার নামে একটি চিঠি আসবে। স্বচ্ছতা রক্ষার জন্য রসিদ ও শুভেচ্ছা জানানো হবে।’
স্মৃতির অতলে ডুব দিয়ে দিলীপবাবু বলেন, ‘এরপর একদিন ডাকযোগে সত্যিই সেই চিঠি এল! তাতেই ছিল ওই পাঁচ টাকার রসিদ ও ধন্যবাদজ্ঞাপন পত্র। তিনি বিশ্ববরেণ্য একজন সাংবাদিক। তাই আমার কাছে এটা একটা মূল্যবান সম্পদ, আমি সযত্নে রক্ষা করেছি। আমি মানিঅর্ডার ফর্মে তাঁকে নির্ভীক সাংবাদিকতার ধারাবাহিকতা রক্ষার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। পরবর্তী জীবনেও তিনি সেটা বজায় রেখেছিলেন। এরপর থেকে আমি ‘বর্তমান’-এর পাঠক।’
২০১৫ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন দিলীপবাবু। বরাবর বামপন্থী রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ। রোজ সকালে উঠে ‘বর্তমান’ পড়া চাই। কোচবিহারের বাসিন্দা এই বর্ষীয়ান নাগরিকের দাবি, সরকারের যে ভুল, তা বরুণ সেনগুপ্ত ধরিয়ে দিতেন। তাই ব্যক্তিগতভাবে বরুণ সেনগুপ্ত তাঁর কাছে একজন নির্ভীক, স্পষ্টবক্তা সাংবাদিক হিসেবেই শ্রদ্ধার আসনে বিরাজ করছেন।