নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা: উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া দপ্তর। এর জেরে বিভিন্ন নদীর জলস্তর বাড়তে পারে এবং পাহাড়ে ধস নামতে পারে বলে আগাম সতর্কও করেছিল তারা। কিন্তু এই দুর্যোগ যে গোটা উত্তরবঙ্গের জনজীবনকে এভাবে বিপর্যস্ত করে দেবে, আগাম আশঙ্কাও করা যায়নি। সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন অসংখ্য পর্যটক। সিকিমের সঙ্গে যোগাযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ। বজ্রপাত ও নদীতে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন চার জন। ধসের কবলে পড়ে নিখোঁজ আরও এক। পাহাড় থেকে ডুয়ার্স হয়ে সমতল—বহু এলাকা প্লাবিত। ডুয়ার্সের জলদাপাড়া, গোরুমারা, জয়ন্তী কার্যত ভাসছে। মানুষের পাশাপাশি এসব এলাকার বন্যপ্রাণীরা সঙ্কটে পড়েছে। বনদপ্তরের বাংলো বা পর্যটক আবাসে যাঁরা আটকে পড়েছেন, তাঁদের বাড়ি ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। উত্তরবঙ্গ থেকে অতিরিক্ত বাস চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন অভয়ারণ্যের পশুকে খাবার পাঠানোর উদ্যোগও নিয়েছে বনদপ্তর। বুধবার থেকেই ধস সরানোর কাজ শুরু হয়ে যায়। এদিন রাতে তিস্তাবাজার থেকে শিলিগুড়ি আসার রাস্তার ধস সরিয়ে দেওয়া হয়। টয় ট্রেনের লাইন বিপজ্জনক অবস্থায় থাকায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দার্জিলিং সদরের এসডিওর বাংলোর কাছে ধস নামে। এসডিও’র নিরাপত্তারক্ষী সুমন থাপা ডিউটি শেষ করে কোয়ার্টারের দিকে যাওয়ার সময় ধসের কবলে পড়েন। রাত পর্যন্ত তাঁর খোঁজ মেলেনি।মালদহের গাজোল ব্লকের আলালের রাজারামচকে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। সম্পর্কে কাকা-ভাইপো এই দু’জনের নাম মণিরুজ্জমান ও আমির হোসেন। আলিপুরদুয়ার জেলার জয়গাঁর ছোট মেচিয়াবস্তিতে দুই বোন তোর্সা নদীতে তলিয়ে যায়। পুলিস জানিয়েছে, দুই কিশোরীর নাম রুকসা খাতুন ও মণীষা খাতুন।দার্জিলিং মহকুমার বিভিন্ন এলাকা থেকে সদরে আসার রাস্তাগুলি ধসে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সদর থেকে মানেভঞ্জন ও বিজনবাড়ি যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দমকল বিভাগ, পূর্তবিভাগ, বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের টিম নেমেছে। সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত কালিম্পং জেলা। মঙ্গলবার রাত থেকে দফায় দফায় ধস নামে কালিম্পংয়ের বহু এলাকায়। কালিম্পং হয়েই সিকিম যেতে হয়। ধসের জেরে ওই রাস্তার উপর অবস্থিত রংপো সেতু ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই সেতু সিকিম এবং বাংলার মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান যোগসূত্র। রাতে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে বিরিক-দারার কাছেও ধস নামে। ওই রাস্তায় গাড়ি চলাচল আপাতত বন্ধ।
পুজোর আগে থেকেই কালিম্পংয়ের লাভা, লোলেগাঁও সহ সিকিমের বহু স্থানে ছুটি কাটাচ্ছেন এরাজ্যের বহু পর্যটক। তাঁদের অনেকেই আটকে পড়েছেন। যেমন কলকাতার নিউটাউনের এক চিকিৎসক দম্পতি এখন লোলেগাঁওতে রয়েছেন। তাঁরা বলেন, খুব আতঙ্কে আছি। এখানে বিদ্যুৎ নেই। রাস্তাগুলো সব বন্ধ। বন্ধুর হোম-স্টেতে রয়েছি। সমতল এলাকায় শিলিগুড়িতে গত ৪৮ ঘণ্টায় ব্যাপক বৃষ্টি হয়। মাটিগাড়ায় ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে থাকা বালাসন সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে জাতীয় সড়ক ধরে আসা চারচাকার গাড়ি সহ ভারী যানবাহন এশিয়ান হাইওয়ে দিয়ে ঘুরিয়ে মেডিক্যাল, ফুলবাড়ি দিয়ে জলপাইগুড়িগামী সড়কে পাঠানো হয়। কোচবিহারের তোর্সা নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় বুধবার দুপুর ৩টের সময় হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়। জলপাইগুড়িতে তিস্তা নদীর জলস্তর বৃদ্ধির জন্য চরের বাসিন্দাদের মঙ্গলবার রাত থেকেই সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করে প্রশাসন।