গৃহে শুভকর্মের আয়োজনে ব্যস্ততা। বন্ধুসঙ্গ ও সাহিত্যচর্চায় মানসিক প্রফুল্লতা। উপার্জন বাড়বে। ... বিশদ
কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভার মধ্যে একটি পটাশপুর। রাজনীতিতে উত্তমের জমি এখানে বরাবর ‘উত্তম’ই। দক্ষ সংগঠক তিনি। বিধানসভার প্রতিটি বুথ তাঁর তালুবন্দি। এটাই তৃণমূলের সাফল্যের চাবিকাঠি। হাতে গরম প্রমাণ একুশের বিধানসভা ভোট, তেইশের পঞ্চায়েত নির্বাচন। তথ্য বলছে, বিধানসভা ভোটে পটাশপুরে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন অম্বুজাক্ষ মহান্তি। তাঁকে ৯ হাজার ৮৬৬টি ভোটে হারিয়ে শেষ হাসি হেসেছিলেন উত্তম। পটাশপুর বিধানসভার মোট গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা ১৬টি। তার মধ্যে ১৫টি দখল করে তৃণমূল। জেলা সভাধিপতির কুর্সিতে বসেন উত্তম।
লোকসভা ভোটে কাঁথি কেন্দ্রে সেই উত্তমকেই বাজি ধরেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বভাবতই পটাশপুর থেকে লিড পাওয়াটা উত্তমের কাছে ‘প্রেস্টিজ ফাইট’-এর সমতুল। তৃণমূল নেতারা অবশ্য বলছেন, পটাশপুরে বিধানসভা ও পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল এবার বজায় থাকবে। বরং আরও বেশি লিড দেবে ঘরের ছেলেকে। এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে, আত্মবিশ্বাস থাকলেও অতি আত্মবিশ্বাস না থাকাই ভালো বলে মনে করছে তৃণমূল। আপ্তবাক্যটি মানেন উত্তম নিজেও। তাই, প্রচারে কোনও ফাঁকফোঁকর রাখতে চাইছেন না তিনি। ১৬টি পঞ্চায়েত এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। সোমবার পটাশপুরের হাসপাতাল মোড় থেকে মতিরামপুর পেট্রল পাম্প পর্যন্ত পদযাত্রা করেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। মানুষের ঢল প্রমাণ করে দিয়েছে, উত্তমের দিল্লি যাত্রার পথে পটাশপুর সঙ্গে।
পটাশপুরের দু’টি ব্লক। পটাশপুর-১ ব্লকের ন’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে আটটিই তৃণমূলের দখলে। বিজেপির কব্জায় শুধুমাত্র চিস্তিপুর-২ পঞ্চায়েত। পটাশপুর-২ ব্লকের সাতটির মধ্যে সবক’টিতেই তৃণমূল ক্ষমতায়। এরপরও পটাশপুরের উপরি পাওনা উত্তম জেলা সভাধিপতি। ফলে, উন্নয়নের সুফল প্রতিটি গ্রাম পেয়েছে বলে দাবি স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের। সেই সঙ্গে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, জলস্বপ্ন, রূপশ্রী সহ একাধিক সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প ডিভিডেন্ট দেবে তৃণমূলকে। তবুও, কয়েকটি ইস্যু খানিক চাপে রেখেছে উত্তমকে। যেমন, নতুনপুকুর কিষান মান্ডি বেহাল অবস্থায় পড়ে। কেলেঘাই-কপালেশ্বরী-বাগুই নদীর সংস্কার হলেও নিকাশির সমস্যা থেকে গিয়েছে। পটাশপুরের পরিবহণ ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ। আগে চারটি সরকারি বাস পরিষেবা চালু ছিল। বর্তমানে বন্ধ। ট্রেন ধরতে হলে পশ্চিম মেদিনীপুরের বালিচক, বেলদা নয়তো বাজকুল যেতে হয়। পটাশপুরে খাড় ক্ষুদিরাম ক্রীড়াঙ্গণের বেহাল দশা। এলাকায় নেই কোনও অডিটোরিয়ামও।
পটাশপুরবাসীর এইসব না পাওয়ার ক্ষোভ প্রচারে তুলে আনছেন বিজেপি প্রার্থী সৌমেন্দু অধিকারী কিংবা বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী উর্বশী ভট্টাচার্য।
বিজেপির পটাশপুর বিধানসভা নির্বাচনী কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সুকান্ত প্রধান বলেন, ‘পটাশপুরের উল্লেখযোগ্য কোনও উন্নয়ন হয়নি। উন্নয়নের নামে শাসকদলের নেতাদের পকেট ভরেছে।’ উর্বশী বলছেন, ‘তৃণমূল হোক কিংবা বিজেপি। ওরা মানুষের জন্য কোনও উন্নয়ন করে না। নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি ও স্বজনপোষণ করে চেলেছেন দুই দলের নেতারা। আমরা মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নের কথা বলছি। মানুষ এখন দুই ফুলে আস্থা হারিয়ে কংগ্রেস ও বামেদের বিকল্প হিসেবে বেছে নিচ্ছেন।’
যদিও পটাশপুর-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিনয়কুমার পট্টনায়ক ও পটাশপুর-২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মানস রায় বলছিলেন, তৃণমূল সরকারের আমলে পটাশপুর এলাকায় প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। ধীরে ধীরে সবই হবে। ইতিমধ্যেই ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পে ৮০ শতাংশ বাড়িতে পানীয় জলের পরিষেবা পৌঁছে গিয়েছে। ‘পথশ্রী’ প্রকল্পে প্রচুর নতুন রাস্তা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় এলইডি পথবাতি বসেছে। বিজেপি সরকার ১০০ দিনের প্রকল্পে টাকা আটকে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সেই টাকা দিয়েছেন। পটাশপুরের তৃণমূল নেতা তথা দলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পীযূষ পণ্ডার দাবি, ‘উন্নয়নের জোরেই পটাশপুর থেকে তৃণমূল অন্তত ৪০ হাজার ভোট লিড পাবে।’
তৃণমূল নেতার দাবি সত্যি হলে উত্তমের লক্ষ্যপূরণের পথ সুগম হবে বলেই মত রাজনীতির কারবারিদের। প্রচারে উত্তম বারিক। নিজস্ব চিত্র