নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি, ২৫ মার্চ: পাঁচ বছর আগে সব হিসাব উড়িয়ে দিয়ে একা তিনিই দলকে অবিশ্বাস্য ফল উপহার দিয়েছিলেন। ৩০ বছর পর ভারত পেয়েছিল একক গরিষ্ঠ দলের সরকার। সেই বিপুল জয়ের পরই থেমে যায়নি তাঁর অশ্বমেধের ঘোড়া। কারণ ২০১৪ সালের পর একের পর এক রাজ্যে বিধানসভা ভোটেও বিজেপি সরকার গড়েছে। কিন্তু সেই জনপ্রিয়তা ও ক্যারিশমায় সামান্য হলেও ভাটা পড়েছে বিগত ২ বছরে। আর তাই দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন উপনির্বাচন ও বিধানসভা ভোটেও বিজেপি আশানুরূপ ফল করতে পারছে না। সম্প্রতি তিন রাজ্যে কংগ্রেসের বিরাট জয় রীতিমতো প্রশ্ন তুলে দিয়েছে মোদি-ম্যাজিক সম্পর্কে। ঠিক এরকম পরিস্থিতিতে লোকসভা ভোটে আদৌ বিজেপি কেমন ফল করবে তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। বস্তুত কোন দল কিংবা জোট জয়ী হবে এই প্রশ্নকে ছাপিয়ে এখন জাতীয় রাজনীতির প্রধান আলোচ্য ও চর্চার বিষয় হল মোদি আবার ক্ষমতায় ফিরছেন কিনা। সুতরাং স্বাভাবিকভাবইে বিজেপির এবারও সবথেকে বড় ভরসা সেই নরেন্দ্র মোদিই। তাই দলের নির্বাচনী প্রচার কমিটির বৈঠকে প্রাথমিকভাবে প্রচারের যে রণকৌশল স্থির করা হয়েছে সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একাই সবথেকে বেশি সভা সমাবেশ করতে চলেছেন। তিনি দেড়শোটির বেশি সভা করবেন। ছোট রাজ্যে একই দিনে একটি বা দুটি সভা করবেন। আর বড় রাজ্যে একদিনে অন্তত তিন থেকে চারটি সভা করারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মোট ৫৪৩টি আসনের মধ্যে মোদি এবার একাই ৫০০ লোকসভা আসনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। যদিও এর অর্থ এটা নয় যে তিনি ৫০০টি লোকসভা আসনেই যাবেন এবং সেই কেন্দ্রে সভা করবেন। পাশাপাশি দুটি বা তিনটি লোকসভা কেন্দ্রকে ধরে মধ্যবর্তী কোনও এলাকায় সভার আয়োজন করা হবে। আর সেখানে ওই তিন প্রার্থীই হাজির থাকবেন। এভাবেই তিনি কভার করবেন ৫০০ টি লোকসভা আসন।
তবে প্রায় মোদির সমান কিংবা তার থেকেও বেশি সমাবেশ করবেন সভাপতি অমিত শাহ। তিনি এতদিন পর্যন্ত কোনও লোকসভা ভোটে নিজে লড়াই করেননি। এই প্রথম গুজরাতের গান্ধীনগরে লালকৃষ্ণ আদবানির কেন্দ্র থেকে অমিত শাহ প্রার্থী হয়েছেন। সুতরাং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচার করার পাশাপাশি নিজের কেন্দ্রেও সময় দিতে হবে তাঁকে। গুজরাতের ভোট ২৩ এপ্রিল। এবার বিজেপির অন্যতম বড় সমস্যা হল হেভিওয়েট নেতা তথা স্টার ক্যাম্পেনারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। লালকৃষ্ণ আদবানি থেকে অরুণ জেটলি। সুষমা স্বরাজ থেকে শত্রুঘ্ন সিনহা। কেউই এবার প্রচারে নেই। এই কারণে বিজেপি বিপুলভাবে নির্ভর করছে নরেন্দ্র মোদির উপরই। এবারের ভোট মোদির কাছে এককভাবেও তাই বড়সড় অগ্নিপরীক্ষা। কারণ তিনি এখনও কতটা জনপ্রিয় এবং তাঁর পাঁচ বছরের সরকারকে মানুষ কতটা গ্রহণ করেছে তারও প্রমাণ দেবে এবারের ফলাফল। আগামী সপ্তাহেই নির্বাচনী প্রচার কমিটির প্রকাশ করছে প্রচারের সূচি। তার আগে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের স্লোগান, জিঙ্গল, গান এবং অডিও এবং ভিডিও প্রচারের প্রতিপাদ্য তৈরির কাজ। মুম্বইয়ের নামজাদা কিছু বিজ্ঞাপনী সংস্থা, গায়ক এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনার সংস্থাকে ইতিমধ্যেই কন্ট্রাক্ট দেওয়া হয়েছে স্লোগান ও থিম সং তৈরির।