বিদ্যায় সাফল্যও হতাশা দুই বর্তমান। নতুন প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠবে। কর্মপ্রার্থীদের শুভ যোগ আছে। কর্মক্ষেত্রের ... বিশদ
প্রশাসন অবশ্য রাত থেকেই ছিল সক্রিয়। রাতেই নেতা-মন্ত্রীরা রাস্তায় নেমে গাছ সরানোর কাজকর্ম তদারকি করা থেকে শুরু করে অসহায় মানুষকে অস্থায়ী শিবিরে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে দেন। বৃহস্পতিবার দিনভর সেই উদ্যোগ ছিল অব্যাহত। সব মিলিয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয় প্রশাসন।
ঝড়ের তাণ্ডবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, বকখালি, বাসন্তী, ক্যানিং, গোসাবায় যোগাযোগ একেবারে বিচ্ছিন্ন। ধ্বংস হয়েছে কয়েক হাজার বাড়ি। বহু মানুষ সাইক্লোন সেন্টার থেকে ফিরে নিজের বাড়ির আর কোনও অস্তিত্বই খুঁজে পাননি। অন্যদিকে, উত্তর ২৪ পরগনায় ৩৯টি জায়গায় নদীবাঁধ ভেঙে বিপর্যস্ত বসিরহাটের একাধিক ব্লক। হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালিতে বহু গ্রাম প্লাবিত। বারাকপুর শিল্পাঞ্চলে শুধু দু’জনের মৃত্যুর খবর এলেও, আহত বহু। গাছ পড়ে আটকে গিয়েছে বারাসত-বারাকপুর রোড। বরানগর-বেলঘরিয়া-সোদপুরের বহু এলাকা জলমগ্ন। বি টি রোড স্তব্ধ কোমর সমান জলে। গ্রামীণ এলাকার পাশাপাশি হাওড়ায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সদর শহরও।
কলকাতাকেও প্রায় স্তব্ধ করে দিয়েছে পড়ে যাওয়া প্রায় সাড়ে তিন হাজার গাছ আর জমে থাকা জল। সকাল থেকে জলের তলায় ছিল উত্তর কলকাতা। দক্ষিণে আবার রাস্তা অচল করে দিয়েছে উপড়ে পড়া গাছের সারি। যাদবপুর, রানিকুঠি, লেক গার্ডেন্স, ঢাকুরিয়া বা গড়িয়া-পাটুলির মতো শহরতলিতে গাছ পড়ে বিপত্তির সীমা ছিল না। একাধিক বাড়ির চালও উড়ে গিয়েছে। দানবীয় ঘূর্ণিঝড় শুধু শহর কলকাতারই ১৯টি প্রাণ ছিনিয়ে নিয়েছে। কোথাও দেওয়াল চাপা পড়ে, কোথাও ছেঁড়া তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঝরে গিয়েছে একের পর এক প্রাণ। এর সঙ্গে ভয়াবহ অবস্থা হয় বিভিন্ন এলাকা জলের তলায় চলে যাওয়ায়। শুধু কলকাতাতেই বৃষ্টি হয়েছে ২২০ মিলিমিটার। তার ফলে বহু নিচু এলাকার বাড়ির মধ্যেও জল ঢুকে যায়। বাসিন্দারা অশেষ দুর্ভোগে পড়েন। এর সঙ্গে বাড়তি ভোগান্তি হয় বিদ্যুৎ না থাকায়। বুধবার ঝড়ের তাণ্ডবলীলা চলার সময়ই শহর কলকাতা যে অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল, ঝড় থামার পর রাতে তো বটেই, পরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবারও বহু জায়গায় বিদ্যুৎ আসেনি। ফলে নিত্য ব্যবহার্য জল পেতে মানুষ হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। জলের জন্য কয়েকটি জায়গায় বিক্ষোভও হয়েছে। শহরের অন্তত সাত থেকে ১০টি পাম্পিং স্টেশনেও জল ঢুকে যায়।
কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম বৃহস্পতিবার সকালে শহরের রাস্তা পরিদর্শন করে বুঝতে পারেন, কী ভয়ঙ্কর অবস্থা হয়েছে মহানগরীর। বৃহস্পতিবার তিনি জানান, হাসপাতাল, শ্মশান ইত্যাদি জায়গায় যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো সাফাই করাই হবে তাঁর মূল কাজ। এসবের পাশাপাশি গাছ সরানো, রাস্তা পরিষ্কার, বাতিস্তম্ভ ঠিক করার মতো প্রচুর কাজ রয়েছে।
দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার হিসেব অবশ্য এদিন সঠিকভাবে করে উঠতে পারেনি প্রশাসন। স্বাভাবিক জীবন ফেরানোর চেষ্টাই ছিল তাদের প্রথম নজরে। কিন্তু, করোনা-বিপদের মধ্যে এই চ্যালেঞ্জটা যে সুকঠিন, কয়েক ঘণ্টায় তা জানান দিয়ে গিয়েছে মারণ-ঝড়।