বিএনএ, বারাকপুর: বিজেপির দলীয় পতাকা, ফেস্টুন টাঙানোকে কেন্দ্র করে রবিবার রাতে জগদ্দল থানার গোলঘর রবীন্দ্রপল্লি এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিজেপি কর্মীদের মারধর করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এমনকী বিজেপির এক মহিলা কর্মীকে শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ উঠেছে। বিজেপি নেতৃত্বের পক্ষ থেকে পুলিসি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলা হয়েছে। এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরই বিজেপির বারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী অর্জুন সিং রাতেই ঘটনাস্থলে যান। দলীয় কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জগদ্দল থানার সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করেন। সোমবার সকালের দিকে কাঁকিনাড়া ও জগদ্দল স্টেশনের মাঝে ২৯ নম্বর রেল গেটে কিছুক্ষণ অবরোধও করা হয়। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বরং, অর্জুন সিংয়ের নেতৃত্বে বিজেপি কর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, দুপক্ষ অভিযোগ করেছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার গোলঘর রবীন্দ্রপল্লি এলাকায় বিজেপি কর্মী, সমর্থকরা দলীয় পতাকা, ফেস্টুন লাগাচ্ছিলেন। সেই সময় তৃণমূলের লোকজন গালিগালাজ করে। পরে, রাতের দিকে মনোজ গুহ নামে তৃণমূলের এক কাউন্সিলারের নেতৃত্বে মহিলা বিজেপি কর্মীর বাড়িতে চড়াও হয়। বাড়ি থেকে টেনে বের করে তাঁর শ্লীলতাহানি করা হয়। বিজেপি কর্মীদের মারধর করা হয়। বিষয়টি জানার পর পরই অর্জুন সিং দলীয় কর্মী সমর্থকদের নিয়ে সেখানে হাজির হন। রাতে থানার সামনে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো হয়। এই হামলার ঘটনায় পুলিস কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় এদিন জগদ্দল স্টেশনের কাছে রেল অবরোধ করা হয়। যদিও পরে, বিজেপি নেতৃত্ব অবরোধ তুলে দেয়।
বিজেপির লোকসভা প্রার্থী অর্জুন সিং বলেন, এক মহিলা বিজেপি কর্মীকে বাড়ি থেকে টেনে বের করে তার শাড়ি ছিঁড়ে দেওয়া হয়। তাঁকে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে আমরা সেখানে যাই। ওই মহিলাকে উদ্ধার করে থানায় গিয়ে অভিযোগ করি। কোনও কাউন্সিলারের বাড়িতে পতাকা লাগানো হয়নি। আমরা কোনও হামলাও চালাইনি। কারও বাড়িতে ঢুকিনি। কিন্তু, পুলিস শাসকদলের দাসে পরিণত হয়েছে। কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এদিন তারই প্রতিবাদে রেল অবরোধ হয়েছিল। পরে, তাদের বুঝিয়ে অবরোধ তুলে দিয়েছি। বিজেপির বারাকপুর জেলার সভানেত্রী ফাল্গুনী পাত্র বলেন, এই ঘটনার প্রতিবাদে আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।
১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার তথা পুরসভার সিআইসি সদস্য মনোজ গুহ বলেন, গোলঘরে বিজেপির মিটিংয়ের জন্য দলীয়, পতাকা লাগাচ্ছে তাতে কোনও আমরা আপত্তি করিনি। কিন্তু, জোর করে আমার বাড়ির মধ্যে একাধিক দলীয় পতাকা লাগিয়ে দেয়। আমার ভাই মৃত্যুঞ্জয় গুহ তার প্রতিবাদ করলেই তাকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটায়। বিষয়টি জানার পর আমি ছুটে আসি। এলাকার লোকজন জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করেন। আচমকা অর্জুন সিং দলবল নিয়ে এসে আমাদের বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ে। কয়েকজন আমার বাড়ি লক্ষ্য করে ইট, পাথর ছোঁড়ে। আমাকে লক্ষ্য করে আগ্নেয়াস্ত্র দেখানো হয়। সমস্ত বিষয়টি আমি থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ করেছি। শ্লীলতাহানি বা হামলার অভিযোগ ঠিক নয়। তৃণমূল নেতা তথা পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সোমনাথ তালুকদার বলেন, আসলে এবার নির্বাচনে তৃতীয় স্থান দখল করার হতাশায় এসব করছে। কাউন্সিলারের নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। মানুষ দেখছে। সঠিক সময়ে এসবের জবাব দেবে। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সম্রাট তপাদার এই ঘটনায় অর্জুন সিংয়ের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়েছেন মহকুমা শাসকের কাছে।